ঘুম-চ্যাম্পিয়ন হয়ে পাঁচ লাখ টাকা জিতলেন ত্রিপর্ণা
ঘুমিয়েও যে চ্যাম্পিয়ন হওয়া যায়,পাঁচ লাখ টাকা পাওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিলেন শ্রীরামপুরের ক্রিপর্ণা। তিনিই ভারতের ঘুম-চ্যাম্পিয়ন।
ঘুমিয়েই খেতাব
ট্রেনে বাসে ঘুম তো সাধারণ ব্যাপার, শ্রীরামপুরের এই তরুণী পরীক্ষা দিতে গিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রেও ঘুমিয়ে পড়েছেন। কখনও আবার ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে সেখানেই ঘুমিয়েছেন। আসলে ঘুম পেলেই ঘুমিয়ে পড়েন ত্রিপর্ণা। যে ঘুমের জন্য ছোটোবেলায় বকুনিও জুটেছে বিস্তর, সেই ঘুমই তাকে দিল এক অনন্য খ্যাতি। হুগলির শ্রীরামপুরের ত্রিপর্ণা চক্রবর্তী জিতলেন স্লিপিং চ্যাম্পিয়নের খেতাব।
সঙ্গে টাকাও
শুধু খেতাবই নয়, ঘুমিয়ে জিতলেন পাঁচ লক্ষ টাকার পুরস্কারও। প্রতিযোগিতায় প্রথম হয়ে তিনি পেয়েছেন পাঁচ লাখ টাকা। রামায়ণে কুম্ভকর্ণের কথা আছে। তিনি ছয় মাস ঘুমাতেন এবং ছয় মাস জাগতেন। ত্রিপর্ণা সে জায়গায় পৌঁছাতে না পারলেও ঘুমই তার জীবনের আনন্দ।
একশ দিন নয় ঘণ্টা
সম্প্রতি একটি ম্যাট্রেস কোম্পানি ঘুমোনোর প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। কে কত ক্ষণ টানা ঘুমোতে পারেন, সেটাই ছিল প্রতিযোগিতা। এক টানা একশ দিন নয় ঘণ্টা করে ঘুমিয়ে ‘সেরা ঘুমকাতুর'-র পুরস্কার জিতে নিয়েছেন ত্রিপর্ণা।
পাঁচ লাখ প্রতিযোগী
ঘুমের এই প্রতিযোগিতার কথা ত্রিপর্ণা জানতে পারেন নেটমাধ্যমে। সারা দেশের প্রায় সাড়ে পাঁচ লাখ প্রতিযোগী এখানে অংশ নিয়েছিলেন। তবে বাকিদের পিছনে ফেলে ‘সেরা ঘুমকাতুরে’ নির্বাচিত হয়েছেন তিনিই।
ঘুমের বিচার
ঘুমের এই প্রতিযোগিতায় প্রথমদিকে অনলাইনে ঘুম পর্যবেক্ষণ করা হতো, কিন্তু ফাইনাল রাউন্ডে যখন চার জন প্রতিযোগী পড়ে থাকে, তখন সংস্থা থেকে প্রতিনিধি পাঠানো হয় ঘুম পর্যবেক্ষণ করার জন্য। এমনকী সিসিটিভিও বসানো হয় ত্রিপর্ণার শোবার ঘরে।
ঘুমের স্কোর
ঘুমের স্কোরে দেখা যায় সব থেকে বেশি স্কোর করেছেন ত্রিপর্ণা। তাঁর ঘুমের স্কোর ছিল ১০০-র মধ্যে ৯৫।
আহা ঘুম
ত্রিপর্ণা জানান, ছোট থেকে ঘুমোতে বড় ভালোবাসেন। এখন বহুজাতিক সংস্থার কর্মী। সংস্থার মূল অফিস আমেরিকায় হলেও ত্রিপর্ণা শ্রীরামপুরের বাড়ি থেকেই কাজ করেন, ফলে আমেরিকার সঙ্গে সময়ের তাল মেলাতে প্রতিদিনই রাত জাগতে হয় তাকে আর ঘুমোতে হয় দিনের বেলা।
শুধু ঘুম নয়
শুধু ঘুমের জন্যই পুরস্কার নয়, ছোটোবেলা থেকেই ত্রিপর্ণা পড়াশোনা এবং নানান সাংস্কৃতিক বিভাগে স্কুলে কলেজে পুরস্কৃত হয়ে এসেছেন।
ঘুমের ব্যাঘাত
আমেরিকার সঙ্গে সময় মিলিয়ে চাকরি করতে গিয়ে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে একটু সমস্যা হয় বইকি। পরিবারের বাকিদের জেগে থাকার সময় ত্রিপর্ণাকে শারীরবৃত্তিয় কারণেই ঘুমোতে হয়, তবু যেটুকু অবসর সময় পান, বই পড়ে, কবিতা গল্প লিখে কাটাতে ভালোবাসেন তিনি
বিশ্বাস-বদল
প্রচলিত কথা আছে, “যে ঘুমায় তার ভাগ্যও ঘুমিয়ে থাকে”। ত্রিপর্ণার বাবা ভাস্কর চক্রবর্তী বললেন, “আগে এমনটা বিশ্বাস করলেও এখন একটু অন্যভাবে ভাবছি ব্যাপারটা। খেয়াল করে দেখেছি ঘুমিয়ে উঠলেই আমার কন্যার মাথা বেশি কাজ করে। ঘুমটা ও মামারবাড়ির উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে”।
ঘুমের বার্তা
ঘুমিয়েই সেলিব্রিটি ত্রিপর্ণা। ঘুম যে এমন দরকারি তা বুঝতে ও বোঝাতে এখন তার উদাহরণ দেয়া হচ্ছে। এরপর ঘুমের প্রয়োজনীয়তার আসরে ত্রিপর্ণা ডাক পেতেই পারেন। চিকিৎসকরাও বলেন, প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম শরীরের জন্য দরকার। পর্যাপ্ত ঘুমিয়ে, ঘুমকে ভালোবেসে, ঘুমের প্রতিযোগিতায় জেতার পর এখন খ্যাতির শিখরে ত্রিপর্ণা। তিনি এখন ঘুমের প্রয়োজনীয়তার বার্তা দিতে চান। আর ঘুমিয়ে পাওয়া টাকা খরচ করবেন সমাজসেবায়।