গাজা নিয়ে বিক্ষোভ ক্রমশ তীব্র ইসরায়েলে
৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫কূটনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, ইসরায়েল জুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বিক্ষোভের আগুন৷ বুধবারই দেখা গিয়েছে তার ইঙ্গিত৷ বিশেষ করে অসন্তোষ ক্রমশ বেড়েই চলেছে ইসরায়েলি পণবন্দিদের পরিজনের৷ তাদের দাবি, যদি পণবন্দিদের উদ্ধারই না করা যায়, তবে এই যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অহেতুক৷ ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কাছে তাদের স্পষ্ট দাবি, দ্রুত হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করতে হবে ইসরায়েলকে৷ থামাতে হবে যুদ্ধ এবং অতি অবশ্যই উদ্ধার করতে হবে পণবন্দিদের৷ এদিকে মঙ্গলবার লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীর উপর হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে৷
যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ ইসরায়েলে
বুধবারই বিক্ষোভ শুরু হয়ে গিয়েছে ইসরায়েলে, বলা হচ্ছে দিনটি হল ‘ডে অব ডিসরাপশন'৷ জেরুসালেমের জাতীয় গ্রন্থাগারের ছাদে উঠে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন এক ডজনেরও বেশি মানুষ৷ গ্রন্থাগারের সামনে ঝোলানো হয়েছে বিরাট সব ব্যানার, তাতে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ছবি৷ পাশে বার্তা, ‘‘আপনি পণবন্দিদের উদ্ধারের চেষ্টা করেননি, তাদের খুন করেছেন৷'' জেরুসালেমেই নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনে আবর্জনার পাত্রে লাগানো হয়েছে আগুন৷ ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের দাবি, বিক্ষোভের আগুন ছড়িয়ে পড়েছে শহরের অন্য এলাকাতেও৷ কয়েকটি গাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ অবরোধ করা হয়েছে ইসরায়েলের পার্লামেন্টের সামনের রাস্তা৷ বহু মানুষ জড়ো হয়েছেন সেখানে৷
ইসরায়েলের দাবি, হামাসের কাছে অন্তত ৪৮ জন ইসরায়েলের নাগরিক বন্দি৷ ধারণা করা হচ্ছে, তাদের মধ্যে মাত্র ২০ জনই জীবিত রয়েছেন৷ নেতানিয়াহুর বিরোধী রাজনৈতিক দল এবং যুদ্ধবিরোধীদের দাবি, নেতানিয়াহুর এই গাজা দখলের সিদ্ধান্ত ইসরায়েলি সেনা ও পণবন্দিদের ক্রমশ আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে৷
বিক্ষোভকারীদের ক্ষোভের মূল কারণ সেটিই, তাদের দাবি নেতানিয়াহু দ্রুত হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে সই করুন৷ গত মাসেই কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় যে চুক্তি পেশ করা হয়েছিল৷
এদিকে, মঙ্গলবার রাতেই বিবৃতি দিয়ে ইসরায়েলের সেনা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমানহামলায় মৃত্যু হয়েছে হামাসের এক কমান্ডারের৷ নিহত কমান্ডারের নাম হাসেম আওনি নঈম৷
বিক্ষোভ নয়, সন্ত্রাস: দাবি ইসরায়েলের মন্ত্রীদের
জেরুসালেমে নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে আবর্জনার পাত্র ও টায়ারে আগুন লাগিয়ে বিক্ষোভের বিষয়টির কড়া সমালোচনা করেছে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা ও পুলিশ৷ সমাজমাধ্যমে এক বিবৃতি দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, আবর্জনায় লাগানো আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে রাখা গাড়িতে৷ দ্রুত কাছের বাড়িগুলি থেকে বহু বাসিন্দাকে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যেতে হয়৷ সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, আইন ভেঙে দুষ্কৃতীদের মতো আচরণ করছেন প্রতিবাদীরা, এমনটাই দাবি পুলিশের৷
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এক্সে একটি পোস্ট করে বিতর্ক আরো উস্কে দিয়েছেন ইসরায়েলের অতিদক্ষিণপন্থী প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইটামার বেন গাভির৷ পোস্টে তিনি লিখেছেন, বিক্ষোভকারীদের আগুন আসলে সন্ত্রাসের আগুন৷ অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ইসরায়েলি আইনজীবী গালি বাহারভ-মিয়ারার দিকেও৷ তার দাবি, ওই আইনজীবী এই সমস্ত বিক্ষোভে ইন্ধন দিচ্ছেন৷
নেতানিয়াহুর লিকুদ দলের সদস্য ইয়ারিভ লেভিন সরাসরি বিক্ষোভকে সন্ত্রাস বসেই উল্লেখ করেছেন৷ প্রসঙ্গত, লেভিন গত মাসে বাহারভ-মিয়ারাকে বরখাস্ত করেছেন, যদিও এই সপ্তাহের শুরুতে হাইকোর্ট এই পদক্ষেপকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে এই বাহারভ-মিয়ারা নেতানিয়াহুর আসন্ন দুর্নীতির বিচারে প্রধান প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করবেন, যা নভেম্বরে শুরু হতে চলেছে।
ইসরায়েলের সংস্কৃতি মন্ত্রী মিকি জোহারও বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনকে কড়া পদক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছেন৷ এক্স হ্যান্ডলে তার পোস্ট, ‘‘ইসরায়েল আইনের দেশ৷ এখানে নৈরাজ্যের কোনো জায়গা নেই৷''
শান্তিবাহিনীর উপরে হামলা?
ইউনাইটেড নেশনস ইন্টেরিম ফোর্স ইন লেবানন (ইউনিফিল)-এর দাবি, মঙ্গলবার লেবাননে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীর কাছে চারটি গ্রেনেড নিক্ষেপ করেছে ইসরায়েলের একটি সামরিক ড্রোন৷ বুধবার এক বিবৃতিতে ইউনিফিল জানিয়েছে, ইসরায়েল ও লেবাননের সীমান্তবর্তী ব্লু লাইনের কাছে রাস্তার অবরোধ সরাচ্ছিলো রক্ষীবাহিনী, যখন ঘটে এই হামলা৷ ইসরায়েলের প্রশাসন জানিয়েছে, বিষয়টি খতিয়ে দেখছে তারা৷
কার্ল সেক্সটন/এসটি/এসিবি