খিদিরপুরে আগুন, জল ছাড়া দেরিতে এলো দমকল, শত শত দোকান পুড়ে হলো ছাই
কলকাতার খিদিরপুরে বিধ্বংসী আগুনে পুড়ে প্রায় ভস্ম হয়ে গেল কয়েকশ দোকান। ক্ষতিগ্রস্তরা এবং অনেক এলাকাবাসী মনে করেন, দমকল দ্রুত এলে এবং জল থাকলে এমন ক্ষতি এড়ানো যেতো৷ ছবিঘরে বিস্তারিত..
গভীর রাতে আগুন
খিদিরপুরে আরফানগঞ্জ বাজারে রাত সোয়া একটা নাগাদ আগুন লাগে। মাখনপট্টিতে প্রথম আগুন লাগে। তারপর সেই আগুন ছড়ায় মশলা ও ফলপট্টি, তেলের গুদাম ও সবজির দোকানে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়া আগুনের তাণ্ডবে সবকিছু পুড়ে কার্যত ছাই হয়ে যায়।
চারশ, নাকি তেরোশ?
দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুর দাবি, চারশটি দোকান পুড়েছে। তবে স্থানীয়দের অনেকেরই দাবি, তেরোশ দোকান সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। এমনিতেই খিদিরপুর খুব জনবহুল ও ঘিঞ্জি জায়গা। তার উপর এই বাজার এলাকা আরো বেশি ঘিঞ্জি। ফলে খুব দ্রুত বহু দোকানে আগুন ছডিয়ে পড়ে।
দমকল সম্পর্কে অভিযোগ
খিদিরপুর বাজারে আগুন লাগে সোয়া একটা নাগাদ। একবার বিদ্যুৎ চলে গেছিল। তা ফিরে আসার কয়েক মিনিটের মধ্যেই আগুন লাগে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। আগুন লাগার পরই দমকলকে খবর দেওয়া হয়। কিন্তু তারা দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা দেরি করে আসে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রথমে দুইটি ইঞ্জিন আসে। তাদের জল ও তেল ছিল না বলে অভিযোগ।
ব্যবসায়ীর বক্তব্য
দমকলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করেছেন খিদিরপুরের ব্যবসায়ী শিবকুমার সিং৷ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''দমকল এমনিতেই দেরি করে এসেছে তার উপর গাড়িতে জল ছিল না। আমরা যে পথ দিয়ে গঙ্গা থেকে জল ভরে আনতে বললাম, প্রথমে তারা সেই কথা শোনেননি। পরে সেই পথেই যেতে হলো। প্রথমে শুনলে হয়ত এত ক্ষতি হতো না। দমকলের পাম্পে তেল পর্যন্ত ছিল না। আমরা এনে দিয়েছি তারপর পাম্প চলেছে।''
দমকলমন্ত্রী যা বললেন
দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর স্থানীয় ব্যবসায়ী ও বাসিন্দাদের তোপের মুখে পড়েন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ আগুন লাগার অনেক পরেদমকল কর্মীরা এসেছেন। তাদের তেরোশ দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। সুজিত বসু বলেন, “ফিরহাদ হাকিমও সকালে ফোন করেছিলেন। অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকা, আগুন নেভাতে তাই সমস্যা হচ্ছে। দমকলের ২০টি ইঞ্জিন কাজ করছে। জলের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। অনেক দোকান নিয়ম মেনে ঠিকভাবে তৈরি করা হয়নি।”
ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই
স্থানীয়দের অভিয়োগ, যতক্ষণে দমকল কাজ শুরু করেছে, ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তারা সব কিছু হারিয়েছেন। সকালেও কিছু জায়গায় আগুন জ্বলছিল। সেই পকেট ফায়ার পরে নেভায় দমকল।
কত ক্ষতি?
এই আগুনে কয়েকজন সামান্য আহত হয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রচুর ক্ষতি হয়েছে। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ কত, তা এখনো জানা যায়নি। তবে আগুন তাদের দোকান ছাই করে দিয়েছে। ফলে এই ব্যবসায়ীরা পুরো ভেঙে পড়েছেন।
কেন এই আগুন?
স্থানীয় ব্যবসায়ী কালোঞ্জি শামাল ডিডাব্লিউকে বলেন, ''এই আগুন শর্ট সার্কিট থেকেই লেগেছে। বাজারে কোনো অগুন নেভানোর ব্যবস্থা নেই। ইলেকট্রিকের যে ওয়্যারিং রয়েছে, সেগুলোও পুরনো হয়ে গিয়েছে। তা ঠিকভাবে দেখভাল করা হয় না। তার ফলে আগুন লেগেছে।''
'আগুনের আঁচে ঘুম ভাঙে'
সঞ্জয় দিন্দা পুড়ে যাওয়া একটি দোকানের কর্মচারি। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''দোকানেই ছিলাম। ঘুমের ঘোরে হঠাৎই উত্তাপ অনুভব করি। বুঝতে পারি, আগুন লেগেছে। তড়িঘড়ি নিজেকে বাঁচাতে বেরিয়ে আসি। আগুনে পিঠ সামান্য পুড়ে গেছে।''
'চোখের সামনে সব পুড়ে গেল'
শেখ মেহেরবানের ডিমের দোকান ছিল। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ''রাতে খবর পেলাম আগুন লেগেছে। এসে দেখি, দাউ দাউ করে জ্বলছে আমার দোকান। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেলো।''
ঘটনাস্থলে পুলিশ কমিশনার
কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেছেন, কেন আগুন লেগেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে। ফরেনসিক দল সেই কাজ করবে। অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এখানে বারোশর মতো দোকান ছিল। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশের মতো দোকান পুড়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, আগুন লাগানো হচ্ছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হবে।
কলকাতায় আগুন যেন নিত্যদিনের ঘটনা
গত এপ্রিলের শেষের দিকে পাথুরিয়াঘাট স্ট্রিটে অগ্নিকাণ্ডে মৃত্যু হয়েছে দুই জনের। গত ২৬ এপ্রিল ধাপার বাসন্তী হাইওয়ে লাগোয়া এলাকায় আগুন লাগে। ২৯ এপ্রিল বজবজের ইএসআই হাসপাতালে আগুন লাগে। গত ৩০ এপ্রিল বড়বাজার মেছুয়ার এক হোটেলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ১৪ জনের মৃত্যু হয়। গত ২ মে শুক্রবার দুপুরে সল্টলেক সেক্টর ফাইভের ফিলিপস মোড়ের একটি রাসায়নিক কারখানায় আগুন লাগে।