ক্ষোভের মুখে ‘দিদির দূত'
১৯ জানুয়ারি ২০২৩এ বছরই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে গৃহ নির্মাণের প্রকল্প আবাস যোজনায় দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে ভূরিভূরি। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। এই সময় নয়া কর্মসূচি হাতে নিয়েছে তৃণমূল।‘দিদির দূত' কর্মসূচিতে জেলায় জেলায় ঘুরছেন শাসক শিবিরের প্রথম সারির নেতারা।
তৃণমূল নেতৃত্ব ‘দিদির সুরক্ষা কবচ' নিয়ে গ্রাম সফরে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ছেন। বছরের পর বছর ধরে নানা অপ্রাপ্তির কথা জনতা তুলে ধরছে শাসকের কাছে। কোথাও রাস্তা খারাপ, কোথাও পানীয় জলের সংকট। কোনো এলাকায় ন্যূনতম স্বাস্থ্য পরিকাঠামো নেই।
বীরভূমের দুই সাংসদ অসিত মাল ও শতাব্দী রায়কে ঘিরে বিক্ষোভ হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুরে রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ বাধা পেয়েছেন কর্মসূচিতে। উত্তর ২৪ পরগনায় মন্ত্রী রথীন ঘোষের সামনে তৃণমূল কর্মী চড় কষিয়েছেন এক বিজেপি কর্মীকে। সবমিলিয়ে শাসক-বিরোধী তরজার নতুন উপাদান জুগিয়েছেন দিদির দূতেরা।
বিরোধীরা ব্যঙ্গ করে বলছেন, ‘দিদির ভূত' ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রামে গ্রামে! বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্যের বক্তব্য, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, উন্নয়নের সিংহভাগ কাজই তার করা হয়ে গিয়েছে। তা হলে এতো অভাব-অভিযোগ কেন?” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর মতে, "সাধারণ মানুষের ভয় কেটে গিয়েছে। তারা প্রতিরোধ গড়ে তুলছেন।”
একদিকে অপ্রাপ্তি ও বঞ্চনা, অন্যদিকে দুর্নীতির অভিযোগ শাসক দলকে পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে অস্বস্তিতে রেখেছে। তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায়ের কথায়, "সবার কথা শুনে নোট নেওয়া হচ্ছে। দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে। আর বিরোধীরা দিদির দূত কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা করছে।”
এই জনসংযোগ কতটা কাজে লাগবে শাসকের? রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ভোটের আগে জনসংযোগের এই চেষ্টা তৃণমূলের কাছে ব্যুমেরাং হতে পারে। যে মানুষ বঞ্চিত হয়েছে, তারা কেন সরকারি দলকে ভোট দিতে যাবে?”
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি এ রাজ্যে অভাবনীয় ফল করার পর মনে হয়েছিল, ২০২১-এর বিধানসভা ভোটে তারা জোর টক্কর দেবে। কাটমানি নিয়ে জেলায় জেলায় বিক্ষোভও শুরু হয়েছিল। কিন্তু ‘দিদিকে বলো' কর্মসূচি-সহ একগুচ্ছ প্রকল্প ছবিটা বদলে দেয়।
পর্যবেক্ষকদের একাংশ তাই ‘দিদির দূত'-এ শাসকের কৌশল খুঁজে পাচ্ছেন যাতে ক্ষোভে রাশ টানা যায়। পঞ্চায়েত ভোটে চলতি ঘটনাপ্রবাহের কোনো প্রভাব পড়বে? প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিষ মৈত্র ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বিরোধীদের সাংগঠনিক শক্তি এমনিতেই কম। তার উপর শান্তিপূর্ণ, অবাধ নির্বাচন হতে হবে। তা হলে এই ক্ষোভের প্রতিফলন দেখা যেতে পারে।”