ক্রমশ নিঃসঙ্গ শহরের অধিকাংশ প্রবীণ
৮ ডিসেম্বর ২০২২সন্তানরা পেশার সূত্রে বাইরে। কেউ আবার নিঃসন্তান। বিভিন্ন কারণের ছেলেমেয়ে বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে থাকা হয় না। এর ফলে প্রবীণেরা ক্রমশ একা হয়ে পড়ছেন। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় তার করুণ ছবি উঠে এসেছে।
একটি বেসরকারি সংস্থার সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, কলকাতায় ৭২ শতাংশ প্রবীণ দম্পতি একাকী বসবাস করেন। তাদের সন্তানেরা চাকরি সূত্রে ভারতের অন্যত্র বা বিদেশে বসবাস করেন। কলকাতায় থাকলেও সন্তানেরা বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন না, এই উদাহরণও আছে। এমন প্রবীণ দম্পতি নয় শতাংশ।
এই সমীক্ষা চালিয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'বাঁচবো হিলিং টাচ'। তাদের সমীক্ষা অনুযায়ী, দম্পতিদের থেকে একলা প্রবীণের নিঃসঙ্গতা বেশি। ২৩ শতাংশ প্রবীণ একেবারে একাকী। তাদের সঙ্গে কেউ থাকেন না।
এর ফলে মূলত দুটি ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। একাকী প্রবীণেরা সহজেই সমাজবিরোধীদের নিশানা হচ্ছেন। সাম্প্রতিক অতীতে দেখা গিয়েছে, কলকাতা ও শহরতলির বিভিন্ন স্থানে এমন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের বাড়ি হানা দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। হত্যা, লুটপাট চালানো হয়েছে।
এ ছাড়া রয়েছে দৈনন্দিন স্বাস্থ্যরক্ষার প্রশ্নটি। বৃদ্ধ বয়সে নানা রোগের শিকার হওয়ার দরুণ ওষুধের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে যায়। একাকী প্রবীণের পক্ষে নিজের স্বাস্থ্যের সঠিক দেখভাল করা সম্ভব হয় না।
'বাঁচবো'-র সম্পাদক তপন সেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''পাশে কেউ না থাকায় তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অনেকে ডিমেনশিয়ায় ভোগেন। তার সঙ্গে অন্যান্য বয়সজনিত অসুখ তো আছেই।''
জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ শাখার উদ্যোগে গত সপ্তাহে এ নিয়ে তিনদিনের আন্তর্জাতিক সম্মেলন হয়ে গেল। সেখানে শুধু প্রবীণদের স্বাস্থ্য নয়, অন্যান্য আর্থ-সামাজিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়।
এই সম্মেলনের মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর, বয়স্ক রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ধীরেশকুমার চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ''অনেকের লোকবল নেই, বাইরে নিয়ে যাওয়ার কেউ নেই। তাই গৃহভিত্তিক পরিষেবা যদি না দেওয়া যায়, তা হলে অনেক মানুষের ঠিকঠাক পরিচর্যা করা যাবে না।''
এই সমস্যা সমাধান পরিকল্পনা রয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের। রাজ্য সরকারের কাছে এই মর্মে প্রস্তাব গিয়েছে। একাকী প্রবীণদের এলাকার তরুণ-তরুণীদের দেখভালের কাজে নিয়োগ করতে হবে। এতে গৃহভিত্তিক পরিষেবা দেওয়া যাবে, কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে অনেকের।
প্রবীণদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কলকাতা পুলিশের কর্মসূচি প্রণাম-এর লক্ষ্য বয়স্কদের সহযোগিতা। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়া থানার উদ্যোগ শ্রদ্ধা। নিরাপত্তার পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে পুলিশ।