কেমন করে দিন কাটান কলকাতার ফুটপাথবাসীরা?
ফুটপাথই তাদের ঘরবাড়ি। শীত, গরম, বৃষ্টিতে ফুটপাথই তাদের সব। এই মানুষেরা কেমনভাবে আছেন তা দেখল ডিডাব্লিউ।
কতজন ফুটপাথবাসী
কলকাতা পুরসভার হিসেব অনুযায়ী এই শহরে হাজার সাতেক গৃহহীন মানুষ রয়েছেন। ২০১১ সালের জনগণনা বলছে, কলকাতা শহরে গৃহহীন লোকের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। বারো বছরে তাদের সংখ্য়াটা আরো অনেকটা বেড়ে গেলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। পরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে পুরসভা একটি সমীক্ষা চালায়। ২০১৮ সালে করা ওই সমীক্ষায় দেখা যায় প্রায় সাত হাজার দুইশ গৃহহীন মানুষ আছেন।
কী করেন পথবাসীরা?
গৃহহীন, পথবাসী এই মানুষগুলোর জীবন সাধারণের পক্ষে কল্পনা করা একটু কঠিন। এদের কেউ কেউ কাগজ কুড়োন, কেউ অন্যের বাড়িতে সহায়কের কাজ করেন, কেউ ভ্যানরিকশা চালান। সারাদিনের পরিশ্রমের পর কারো কারো উপার্জনের মাধ্যম সেই ভ্যানরিকশাই হয়ে ওঠে তাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই।
শিশুদের লড়াই
শৈশব থেকেই শুরু হয় বেঁচে থাকার লড়াই। রোদ, ঝড়, জল-এর সঙ্গে সঙ্গে এই শিশুদের লড়াই করতে হয় পুষ্টির সঙ্গেও।
প্লাস্টিক কুড়িয়ে
নূরজাহান বিবি, চার সন্তান নিয়ে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাথে বাস। রাস্তার আবর্জনা থেকে কাগজ, প্লাস্টিক কুড়িয়ে পেট চলে। স্বামী গাড়ি চালান।
মাটিতেই শোয়া
ফুটপাথের রেলিংয়েই নূরজাহানদের শোওয়ার বন্দোবস্ত। রাতে বাচ্চাদের এখানে শুইয়ে স্বামী-স্ত্রী মাটিতেই শুয়ে পড়েন।
ফুটপাথই সংসার
ইনি টিঙ্কু বিবি। দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার ডায়মণ্ড হারবার থেকে পেটের টানে ছোটোবেলায় চলে এসেছিলেন এই শহরে। সিটি কলেজের পাশেই, ফুটপাথে স্বামী সন্তানদের নিয়ে বাস। লোকের বাড়িতে গৃহসহায়িকার কাজ করেন।
আত্মীয়রাও আসে
টিঙ্কুর স্বামী ইউনুস শেখ নিজে ভ্যান চালালেও ছেলেকে গাড়ি চালানো শিখিয়েছেন। ছেলে এখন গাড়ি চালিয়ে উপার্জন করছে। ডায়মন্ড হারবার থেকে আত্মীয়েরা এসেছেন টিঙ্কুর শহরের আস্তানায়। তাদের আজ নিজে হাতে রেঁধে খাওয়াবেন টিঙ্কু বিবি।
পথে জন্ম, পথেই বেড়ে ওঠা
পথেই জন্ম, পথেই বেড়ে ওঠা আর এই পথেই এসেছে ভালোবাসা। আসমার মেয়ে পূজা ধর্মের তোয়াক্কা না করে ভালোবেসে বিয়ে করেছে তাপসকে। দুই সন্তান নিয়ে ফুটপাথেই চালিয়ে যাচ্ছেন বেঁচে থাকার যুদ্ধ।
কাজের পর রান্না
এই শহর যখন ক্লান্ত হয়ে টিভির রিমোট হাতে সোফায় গা এলিয়ে দেয়, সুখিরামদের মত মানুষেরা তখন একটু ফাঁকা ফুটপাথ খুঁজে নিয়ে চুলো জ্বালান। সারাদিন কাজ করেও ক্লান্ত হওয়া বারণ এদের।
অপেক্ষা কখন স্টেশনের ঝাঁপ নামবে
ফতেমারা অপেক্ষা করে থাকেন কখন শেষ মেট্রোটা প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাবে আর স্টেশানের ঝাঁপ নামবে। সেন্ট্রাল মেট্রো স্টেশানের সামনে ফতেমা আর রসিকা।
পুরসভার সিদ্ধান্ত
সম্প্রতি কলকাতা পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আর ফুটপাথে কাউকে থাকতে দেয়া হবে না। তারপর থেকেই শহরের গৃহহীনদের নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ব্যবস্থা কই?
কলকাতা শহরে গৃহহীনদের জন্য পুরসভার যে কটি আশ্রয়স্থল রয়েছে তাতে সাকুল্যে রয়েছে ৬৫০টি জায়গা, যা এই শহরের গৃহহীনদের সংখ্যার কাছে নগন্য।
ছেলে-মেয়েদের আলাদা থাকা
এই আশ্রয়স্থল সম্পর্কে পথবাসীদের একটা বড় অভিযোগ, এখানে পুরুষ ও নারীদের পৃথক থাকার ব্যবস্থা। তাই পুরসভার আশ্রয়স্থলে থাকা শুরু করলে তারা নিজেদের সংসার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বেন।