জার্মানির নতুন ভাবনা
২১ সেপ্টেম্বর ২০১২সোমালিয়া, কঙ্গো, সুদান, সাদ, জিম্বাবোয়ে, আফগানিস্তান, হাইতি, ইয়েমেন, ইরাক - তালিকাটা দিন দিন দীর্ঘই হচ্ছে৷ তাতে স্বস্তি নয়, দুশ্চিন্তাই বাড়ছে৷ অর্থনৈতিক দুরবস্থা, রাজনৈতিক সংকট, জনজীবনে নিরাপত্তার অভাবসহ নানা কারণে এ দেশগুলোতে সংঘাত লেগেই আছে৷ খুব শিগগির যে অবস্থার উন্নতি হবে সে আশা ক্ষীণ৷ ওই ক্ষীণ আশা বা সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই তাদের এগিয়ে নেয়ার কাজে আরো ভূমিকা রাখতে চায় জার্মানি৷ তা আগেও চেয়েছে৷ এবার কৌশলটা বদলাচ্ছে৷ দেশগুলোয় চরমপন্থীদের সক্রিয়তা ক্রমাগত বেড়ে চলছে বলে নতুন কর্মপন্থা স্থির করা জরুরি বলে মনে করছে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সরকার৷ ঠিক করেছে এখন থেকে তিনটি মন্ত্রণালয় একযোগে, সমন্বিতভাবে কাজ করবে দেশগুলোতে৷ বুধবার জার্মান মন্ত্রীসভা অনুমোদনও দিয়েছে এমন এক কর্মপদ্ধতিকে৷
জার্মান পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে জানান, আফগানিস্তান ও সোমালিয়ায় এ কৌশলে কাজ করা হচ্ছ আগে থেকেই৷ সিরিয়া, সুদান আর সাহেল অঞ্চলেও এ কৌশল কার্যকর হবে অচিরেই৷ না করে উপায়ও নেই৷ এসব অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদ আরো ছড়িয়ে পড়ার আশাঙ্কা বাড়ছে৷ বিষয়টিকে এখনই গুরুত্ব না দিলে ভবিষ্যতে এটা যে জার্মানির জন্যও সমস্যা হয়ে উঠতে পারে সে বিষয়েও সতর্ক করে দিয়েছেন ভেস্টারভেলে৷ তাঁর যুক্তি, জার্মানি তো ভিনগ্রহের কোনো ভূখণ্ড নয়, যে এমনি এমনি সন্ত্রাসবাদের থাবার বাইরে থাকবে৷
সেই ঝুঁকি যতটা সম্ভব দূরে সরাতেই সুষ্ঠু একটা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যেতে চায় জার্মানি৷ সমস্যাসংকুল এ দেশগুলোরত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে সেনাবাহিনী, কূটনীতি বা উন্নয়ন কর্মকাণ্ডই যথেষ্ট নয়৷ কার্যকারীতা বাড়াতে তাই পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র এবং অর্থনৈতিক সহযোগীতা বিষয়ক মন্ত্রনালয়কে আরো নিবিড়ভাবে, একসঙ্গে কাজে লাগানোর ভাবনা নিয়েছে দেশটি৷ জার্মানি মনে করে, একমাত্র এ উপায়েই বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবেলা করে দেশগুলোতে শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনায় আরো ভূমিকা রাখা সম্ভব৷
তবে দৃষ্টিভঙ্গিতেও পরিবর্তন দরকার৷ গিডো ভেস্টারভেলে অন্তত তাই মনে করেন৷ তাঁর মতে, পররাষ্ট্রনীতি এবং নিরাপত্তার প্রশ্নে জার্মানিকে প্রথাগত কৌশলের সঙ্গে বাস্তবানুগ ভাবনাও জুড়ে দিতে হবে৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়েরের কাছে সংশ্লিষ্ট দেশের সার্বিক অবস্থা বুঝতে পারাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ তাই তিনি বললেন, ‘‘আমরা একটি অঞ্চলের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং ঐতিহাসিক বিষয়গুলোর গুরুত্ব বুঝলেই কেবল ভালো ফল পাই৷ যদিও গণতন্ত্র রপ্তানি করতে যাবো না, তবে বৈশ্বিকভাবে মানবাধিকারের গুরুত্বের ওপর অবশ্যই জোর দিতে হবে আমাদের৷''
কিন্তু এত ভেবে সমস্যাসংকুল দেশগুলোর জন্য যে কৌশলটাকে কার্যকর মনে করছেন, তা আসলে কতটা কার্যকর হবে? উত্তরটা সময়ই দিতে পারবে৷ অবশ্য আফগানিস্তানের দৃষ্টান্ত বড় কিছু আশা করার পথে অন্তরায়৷ এটা কিন্তু বাইরের কেউ বলছেন না, বলছেন জার্মানির প্রতিরক্ষামন্ত্রী টোমাস দেমেজিয়ের স্বয়ং৷ আফগানিস্তানে জার্মানির গত এক দশকের অভিজ্ঞতাকে ব্যর্থতার জ্বলন্ত উদাহরণ হিসেবেই দেখছেন তিনি, তবে কথাটা স্বীকার করছেন একটু ঘুরিয়ে, ‘‘আমার মতে আফগানিস্তান মিশনটা যে আমাদের ভুল ছিল তা নয়, বরং আমি বলবো প্রত্যাশাটাই বেশি ছিল আমাদের৷''
প্রতিবেদন: সাবিনে কিনকার্জ/এসিবি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ