কাশ্মীরে নিহত কলকাতার বিতান ও সমীর, এক লহমায় সব শেষ
ভূস্বর্গ কাশ্মীরের সৌন্দর্য দেখতে গিয়েছিলেন। সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ গেলো। এক লহমায় শেষ হয়ে গেলেন সমীর গুহ, বিতান অধিকারী।
বিতান অধিকারী আর ফিরবেন না
টিসিএসের কর্মী বিতান কর্মসূত্রে থাকতেন ফ্লোরিডায়। কলকাতায় এসে গত ১৬ এপ্রিল স্ত্রী সোহিনী ও ছেলেকে নিয়ে কাশ্মীর বেড়াতে যান। মঙ্গলবার সন্ত্রাসবাদীদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন বিতান। বুধবার কাশ্মীর থেকে তার প্রাণহীন দেহ ফিরছে কলকাতায়।
বৈষ্ণবঘাটার ফ্ল্যাটে
কলকাতায় এলে বৈষ্ণবঘাটা-পাটুলির এই ফ্ল্যাটে থাকতেন। এবারেও ছিলেন। এখান থেকেই ১৬ এপ্রিল কাশ্মীর যান। ফেরার কথা ছিল বৃহস্পতিবার। তিনি আর নেই। সন্ত্রাসবাদীদের বুলেটবিদ্ধ তার প্রাণহীন দেহ ফিরছে কলকাতায়।
ফ্ল্যাটের সামনে পুলিশ
বুধবার বিতানের ফ্ল্য়াটের সামনে পুলিশ ও মিডিয়ার ভিড়। এসেছিলেন স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরাও। তার বাবা ও ভাই থাকেন হরিদেবপুরে। ভাই জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সকালেও বিতানের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। বিতান বলেছিলেন, কাশ্মীর থেকে ফিরে কাছাকাছি কোনো জায়গায় সকলে মিলে ঘুরতে যাবেন। সেটাও আর হলো না।
পরিবারের সবাইকে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন
বিতানের বাবা জানিয়েছেন, তার ছেলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাশ্মীর যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কাশ্মীর যেতে চাননি। বিতানকে বলেন, স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে কাশ্মীর ঘুরে আসতে। ছেলেকে হারিয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন বাবা।
পুলিশ যা জানিয়েছে
পুলিশ জানিয়েছে, বুধবার রাতে বিতানের দেহ কলকাতায় আসবে। তারপর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তার পরিবারের মানুষ এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে। বিতানের স্ত্রী ও ছেলে নিরাপদে আছেন।
কী বলছেন এলাকার মানুষ
এলাকার মানুষ দেবদীপ মুখোপাধ্যায় বলেছেন. বিতানের সঙ্গে পাড়ার মানুষের খুব একটা মেলামেশা ছিল না। আসলে কাজের সূত্রে তিনি ফ্লোরিডায় থাকতেন। বহুদিন পর পর আসতেন। তখন হয়ত মাস দুয়েক থাকতেন।
আগের রাতেও দোকানে এসেছিলেন
স্থানীয় দোকানদার আকুল জানা বলেছেন, কাশ্মীর যাওয়ার আগের দিনও স্বামী-স্ত্রী তার দোকানে এসেছিলেন। টুকটাক জিনিস কিনেছেন। এমনিতে ভালো মানুষ ছিলেন তারা। স্ত্রী সোহিনী বিয়ের আগে থেকে এই ফ্ল্যাটে থাকতেন। পাঁচ বছর হলো বিয়ে হয়েছে। বিয়ের পর দুজনে ফ্লোরিডায় থাকতেন। বাচ্চা হওয়ার পর স্ত্রী ফিরে আসেন।
অকালে চলে গেলেন
মাত্র ৪০ বছর বয়স হয়েছিল বিতানের। সামনে ছিল উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। ঘুরতে ভালোবাসা মেধাবী এই মানুষটি সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়ে অকালে চলে গেলেন।
বেহালার সখেরবাজারের সমীরও আর নেই
রাত তিনটের সময় ভাই সুব্রত ঘোষকে ফোন করেন সমীর গুহর স্ত্রী শবরী। সুব্রত জানিয়েছেন, ''দিদি কেবল একটা কথাই বলতে পেরেছিল, এক লহমায় সব শেষ হয়ে গেলো।'' প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, ''শবরী শুধু কেঁদেই চলেছেন। মেয়ে শুভাঙ্গী জানিয়েছেন, তারা ঘুরছিলেন। এমন সময় কয়েকজন ঘিরে ধরে। মাটিতে শুয়ে পড়তে বলে। সমীর-সহ কয়েকজনকে আলাদা নিয়ে গুলি করে মারে।''
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী
কেন্দ্রীয় সরকারের জুনিয়র স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসারের পদে কাজ করতেন সমীর। তার ছিল পর্যটনের নেশা। কাশ্মীরে এই প্রথমবার গিয়েছিলেন। মেয়ে শুভাঙ্গী দ্বাদশ শ্রেণির পরীক্ষা দিয়েছেন।
আগলে রেখেছিলেন ইকবাল
কাশ্মীরে গিয়ে গাড়ি ভাড়া করেছিলেন সমীর। চালক ইকবাল। তার ফোন থেকেই শবরী কথা বলেছিলেন ভাইয়ের সঙ্গে। মর্মান্তিক ঘটনার পর ইকবালই তাদের আগলে রেখে নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন।