কাবুলে শুরু হলো দুর্নীতি বিরোধী সম্মেলন
১৬ ডিসেম্বর ২০০৯দুর্নীতির কারণে চাপের মুখে কাবুল
২০ আগস্টের ভোটে জালিয়াতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে কারজাই দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে তিনি কি ব্যবস্থা নিচ্ছেন তা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে পশ্চিমা বিশ্ব৷ এমনকি বিশ্ব নেতাদের অনেকেই সেখানে আন্তর্জাতিক সহযোগিতার জন্য বেঁধে দিয়েছেন দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার শর্ত৷ ফলে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেও কারজাই-এর কণ্ঠে ছিল দুর্নীতি বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণের মন্ত্র৷ তাই হামিদ কারজাই দুর্নীতি দমনে কি ধরণের কার্যক্রম হাতে নিচ্ছেন তার কিছু নমুনার দেখা মিলতে পারে এই সম্মেলনে, প্রত্যাশা কূটনীতিকদের৷
দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের সমালোচনায় কারজাই
মঙ্গলবার দুর্নীতিবিরোধী বক্তব্যে কারজাই সরকারে দু-এক বছর কাজ করেই ধনী হয়ে যাওয়া এবং দুবাইয়ে বাড়ি কেনা কর্মকর্তাদের সমালোচনা করেন৷ কিন্তু একইসঙ্গে তিনি দুর্নীতি প্রতিরোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতার অপপ্রয়োগের বিরুদ্ধেও কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ''দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আমাদেরকে খুবই সতর্ক হতে হবে৷ অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে৷ যাতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইটাই দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে না পড়ে৷''
সায়েবির পক্ষে সাফাই
তবে একই সম্মেলনে কারজাই সাফাই গাইলেন দুর্নীতির অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত তাঁর এক কর্মকর্তার পক্ষে৷ কারজাইয়ের নিয়োগ দেওয়া কাবুলের মেয়র আব্দুল আহাদ সায়েবিকে গত সপ্তাহে দুর্নীতির অভিযোগে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ আফগানিস্তানে কয়েক বছরের মধ্যে কোনও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এটিই প্রথম মামলা৷ মঙ্গলবার সম্মেলনে সামনের সারিতে বসে থাকা সায়েবিকে দেখিয়ে কারজাই বলেন, ''আমি খুবই সতর্কতার সঙ্গে বলতে চাই, কাবুলের মেয়রকে ৪ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু আমি মেয়রকে জানি৷ তিনি পরিচ্ছন্ন মানুষ৷ আমি তাঁকে চিনি৷'' কারজাই বলেন, ''শত্রুরা তাঁকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে৷ কারণ, তিনি তাদেরকে সরকারি জমি দিতে চাননি৷'' দেশটির প্রধান বিচারপতি এবং এটর্নি জেনারেলের কাছে এই মামলা খতিয়ে দেখারও দাবি জানান কারজাই৷ তাঁর এই পদক্ষেপ আফগানিস্তানে দুর্নীতি নিয়ে ইতিমধ্যেই বিরক্ত পশ্চিমাদের ক্ষুব্ধ করবে বলে মনে করা হচ্ছে৷
দুর্নীতির জন্য বিদেশি সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধেও অভিযোগ
এদিকে, সম্মেলনে উপস্থিত আফগানিস্তানের দুর্নীতি দমন বিষয়ক শীর্ষ উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইয়াসিন উসমানি দেশটির দুর্নীতির জন্য বিদেশি সংস্থাগুলোর দিকেও আঙ্গুল তাক করলেন৷ তিনি বলেন, ''সারাদেশে দুর্নীতি বিরাজ করছে তা ঠিক, কিন্তু দুর্নীতি সবচেয়ে বেশি হচ্ছে সেসব খাতে যেগুলো বিদেশি সরকারগুলোর সাথে সম্পর্কিত৷'' সম্প্রতি হামিদ কারজাই নিজেও তাঁর দেশের দুর্নীতির জন্য বিদেশি সংস্থাগুলোকে দায়ী করেছিলেন৷ গত সপ্তাহে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রবার্ট গেইটসও অংশত স্বীকার করেছেন যে, ''আফগানিস্তানের কর্মকাণ্ডের জন্য সম্পাদিত চুক্তিসমূহের প্রতি পশ্চিমা দেশগুলোর নজরদারির অভাবও সেখানকার সমস্যার অংশ৷''
প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই, সম্পাদনা: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী