কাজের খোঁজে চেন্নাই যেতে গিয়ে আসামে গ্রেপ্তার বাংলাদেশি
২৪ জুলাই ২০২৫আসামের নিউ বঙ্গাইগাঁও রেল স্টেশনে মঙ্গলবার সকালে আটজন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করে রেল পুলিশ। পুলিশের দাবি, তারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিল। পুলিশ ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের ক্যামেরার সামনেও ওই ব্যক্তিরা বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে ভারতে ঢোকার কথা স্বীকার করেন। তারা জানিয়েছেন, মেঘালয়ের সীমান্ত দিয়ে পাহাড়ি পথ ধরে তারা পায়ে হেঁটে দেশে প্রবেশ করেন। কাজের খোঁজে তারা চেন্নাই যাচ্ছিলেন।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে আটক হওয়া এক যুবক জানান, "আমরা কাজের খোঁজে গোপনে ভারতে প্রবেশ করেছি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল চেন্নাই যাওয়া। কারণ ওখানে কাজের সুযোগ আছে। আমরা সবাই একসঙ্গে হেঁটে পাহাড় পেরিয়ে একটা ভাঙা বর্ডার দিয়ে এদেশে ঢুকেছি। এজন্য আমরা মাথাপিছু ৯০০০ টাকা করে দিয়েছি কিছু এজেন্টকে।”
পুলিশ জানিয়েছে , ধৃতদের নাম— বাবু শেখ, আশরাফুল হক, আলামিন আলি, মামুন শেখ, মোহাম্মদ আলী, রাহুল আমিন, মুশারফ আলী এবং আশরুল হক। প্রত্যেকেই বাংলাদেশের জামালপুর জেলার বাসিন্দা এবং তাদের বয়স ১৯ থেকে ২২ এর মধ্যে।
বঙ্গাইগাঁও থেকে চেন্নাইগামী একটি ট্রেনে উঠতে গিয়ে তারা ধরা পড়েন। বঙ্গাইগাঁও জেলার পুলিশ সুপার মোহনলাল মীনা জানিয়েছেন, "তাদের কাছে আধার, ভোটার কার্ডসহ একাধিক ভারতীয় পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে, যা ভুয়া। আটজনের মধ্যে একজন আগেও ভারতে ঢুকেছেন এবং প্রায় এক বছর চেন্নাইতে থেকে কাজ করেছেন। তিনি হিন্দি, তামিল এবং অসমিয়া ভাষা বলতে পারেন। সম্প্রতি তিনি বাংলাদেশে ফিরে যাযন এবং বাকি সাত জনকে নিয়ে আবার অবৈধ পথে ভারতে ঢোকেন।"
মীনা জানান, সম্প্রতি ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং আশপাশের অঞ্চলে জোরদার তল্লাশি অভিযান শুরু হওয়ায় বাংলায় কথা বলা আসামের বহু শ্রমিক নিজেদের গ্রামে ফিরে এসেছেন। মঙ্গলবার সকালে দিল্লি থেকে ব্রহ্মপুত্র-মেল নিউ বঙ্গাইগাঁও রেল স্টেশনে থামে। শতাধিক শ্রমিক সেখানে এসে নামেন। সমাজ মাধ্যমে তাদের বাংলাদেশি বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তারা বাংলাদেশি নন। আসামে বসবাসকারী বাংলাভাষী পরিযায়ী শ্রমিক। যে যুবকদের আটক করা হয়েছে, তারাও ওই স্টেশনেই সে সময় ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বাংলাদেশের নাগরিকেরা জানিয়েছেন, সীমান্ত পারাপারের একটি চক্রের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছিলেন। টাকার বিনিময়ে ওই চক্র সীমান্ত পার করিয়ে দেয়। সীমান্ত পার হওয়ার পর নকল নথিপত্র বানিয়ে দেওয়া হয়। এই আটজন মাথাপিছু নয় হাজার টাকা দিয়েছিল শুধুমাত্র সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়ার জন্য।
আটক হওয়া বাংলাদেশিরা জানিয়েছেন, রাতের অন্ধকারে এমন একটি জায়গা দিয়ে তারা ভারতে ঢুকেছেন যেখানে কাঁটাতারের বেড়া কিছুটা দুর্বল। একটি পাহাড়ি এলাকায় বৃষ্টির ফলে ধস নেমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কাঁটাতারের বেড়া। সেখান দিয়েই তাদের ঢোকানো হয়েছে। ওই জায়গায় সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর কেউ ছিল না।
পুলিশ জানিয়েছে, ভারতে ঢোকার আগেই নিজেদের নামে ভুয়া আধার এবং ভোটার কার্ড বানিয়ে নিয়েছিলেন ওই ব্যক্তিরা। তাদের কাছ থেকে পাওয়া ভুয়া নথি পাঠানো হয়েছে সীমান্ত বাহিনী এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে।
সীমান্ত পারাপারের চক্র
বঙ্গাইগাঁওয়ে ঘটনার পর দিনই বুধবার আসামের করিমগঞ্জ জেলায় দুই ভারতীয় নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এক বাংলাদেশি নাগরিকের নামে জাল নথি তৈরি করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন তারা। এক মৃত ভারতীয় নাগরিকের পাসপোর্ট ব্যবহার করে তাকে ভুয়া নথি তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল বলে জানা গেছে। ধৃতদের নাম বুরহান উদ্দিন ও ফাইজুর রহমান। দু'জনেই করিমগঞ্জ জেলার পাথারকান্দি এলাকার বাসিন্দা। পুলিশ জানিয়েছে, কয়েক মাস আগে জমা দেওয়া একটি পাসপোর্টের আবেদন যাচাই করার সময়ই প্রতারণার বিষয়টি সামনে আসে।
শ্রীভূমির পুলিশ সুপার পার্থ প্রতীম দাস ডিডাব্লিউকে জানান, পাসপোর্টের আবেদনটি ফারুক আহমেদের নামে জমা দেওয়া হয়েছিল।
"আবেদনকারীকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে প্রমাণ করতে যে নথিগুলি জমা দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি জাল। ওইসব নথি এক মৃত ভারতীয় নাগরিকের নামে তৈরি করা হয়েছিল, যার পরিচয় ব্যবহার করে একজন বাংলাদেশিকে নাগরিক প্রমাণের চেষ্টা চলছিল,” বলেন দাস।
পুলিশ সুপারের বক্তব্য, ''যাচাই প্রক্রিয়ার সময় দেখা যায় যে ফারুক আহমেদের নামে থাকা ভোটার কার্ড, জন্মসনদ, আধার কার্ড ও প্যান কার্ড— সব নথিই জাল। ওই ব্যক্তি বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। একজন মৃত ব্যক্তির পরিচয় ব্যবহার করে ভোটার কার্ডসহ একাধিক পরিচয়পত্র তৈরি করে তা একজন বাংলাদেশির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পাসপোর্ট যাচাইয়ের সময়েই আমরা তা ধরে ফেলি।”