কলকাতায় মাটির নিচ থেকে তোলা হলো ২৫০ বছরের কামান
১৭৭০ সালে তৈরি হয়েছিল এই কামান। এতদিন তা ছিল মাটির তলায়। দমদমে মাটির নিচ থেকে তোলা হলো এই ঐতিহাসিক কামান।
নকশা হয় ১৭৬৩ সালে
এই কামানের নকশা তৈরি হয়েছিল ১৭৬৩ সালে। ছয় বছর আগেই পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌল্লাকে হারিয়ে দিয়েছেন ক্লাইভ। ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তার কয়েক বছর পরেই এই কামান তৈরির পরিকল্পনা হয়।
তৈরি হয় ১৭৭০ সালে
নকশা তৈরির পর কামান বানাতে লেগে যায় আরো সাত বছর। ১৭৭০ সালে এই কামান তৈরি হয়ে যায়। ওজন ছয় টন। বেশ কয়েকবার কামানটি ব্যবহার করে হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। তারপর বহু বছর ধরে এই কামানটি মাটির নিচে পড়ে থাকে। একটু অংশ মাটির উপরে ছিল। দমদম সেন্ট্রাল জেলের কাছে যশোর রোডের উপর এমনভাবে অযন্তে পড়েছিল কামানটি।
তোলা হলো
দমদম পুরসভা, বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট এবং সিইএসসি-র চেষ্টায় কামানটি মাটির নিচ থেকে বের করা হলো।
১০ ফুট আট ইঞ্চির কামান
মাটিতে তোলার পর মেপে দেখা গেল, কামানটি ১০ ফুট আট ইঞ্চি নম্বা। ১৮ কিলোগ্রাম ওজনের গোলা এক হাজার দুইশ থেকে দেড় হাজার গজ পর্যন্ত ছুঁড়তে পারত এই কামানটি।
ছয় ফুট নিচে
মাটির ছয়ফুট নিচে ছিল এই কামানটি। শুধু মুখের দিকে একফুট মাটির উপরে ছিল। এর আগে দুই বার চেষ্টা করে কামানটি তোলা যায়নি। তৃতীয়বারের চেষ্টায় তা মাটির উপরে উঠলো।
সাবধানে তোলা হলো
কামানটি ঘিরে মাটির নিচে অনেক তার ছিল। তাই খুব সাবধানে কামানটি তুলতে হয়েছে। উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং বিশেষজ্ঞরা। প্রচুর মানুষও ভিড় জমিয়েছিলেন।
১৫ দিন ধরে চেষ্টা
কামানটি তোলার জন্য গত ১৫ দিন ধরে কাজ করে যাচ্ছিল সিইএসসি। কারণ, মাচির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার গেছে। ফলে খুব সাবধানে কাজ করতে হয়েছে।
কামান বিশেষজ্ঞর বক্তব্য
পুরনো অস্ত্র ও কামান বিশেষজ্ঞ অমিতাভ কারকুন জানিয়েছেন, দমদম অঞ্চলে ১৩টি কামান আছে। এই কামানটি তার মধ্যে একটি। কিছুদিন হলো, এই কামানটি তোলার চেষ্টা শুরু হয়। এই কামানটি ঐতিহাসিক। ব্রিটিশ বাহিনী আঠারো শতকের শেষভাগ থেকে উনিশ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত এই কামান ব্যবহার করত। ব্রোমফিল্ড নকশার, ঢালাই লোহায় তৈরি হয় এই কামান।
অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল
অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও ট্রাস্টি বিপ্লব রায়ের মতে, কলকাতায় আগে এত বড় কামান পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় কামান বলে এর বাড়তি গুরুত্ব আছে।
কোথায় রাখা হবে
এই কামান এখন বিচারবিভাগের সম্পত্তি। তাই বিচারবিভাগীয় মিউজিয়ামে তা আপাতত রাখা হবে। তারপর আদালত যেমন নির্দেশ দেবে, সেই মতো কাজ করা হবে।
কেন দমদমে
এই কামানটি যেখান থেকে তোলা হয়েছে, সেখান থেকে দমদম সেন্ট্রাল জেল খুব কাছে। ক্লাইভ হাউসও কাছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সম্ভবত জেলের কাছে দুইটি কামান রাখা হয়েছিল। তার মধ্যে এই কামানটি ছিল।