কলকাতার সরকারি হাসপাতাল: অনিয়মের রাজত্বে বেহাল চিকিৎসা
সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সরকারি হাসপাতালে তার ভুল চিকিৎসা হয়েছে। তারপর সরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখল ডিডাব্লিউ।
কলকাতায় ৪৮টি সরকারি হাসপাতাল
মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলা, মহকুমা, ব্লক, গ্রামীণ হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র- সব মিলিয়ে পশ্চিমবঙ্গের জনসাধারণের জন্য সরকারি চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে প্রায় চোদ্দ হাজারটি জায়গায়। কলকাতা শহরে ৪৮টি সরকারি হাসপাতাল সহ বেশকিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্রও রয়েছে।
অভিযোগ প্রচুর
সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ প্রথম থেকেই চলে আসছে। পশ্চিমবঙ্গও এর ব্যতিক্রম নয়। রোগীর তুলনায় পরিষেবার অপ্রতুলতা এবং মান নিয়ে বেজায় অসন্তুষ্ট জনগণ।
এসএসকেএমের ছবি
পরের ছবিটি কলকাতার বিখ্যাত এসএসকেএম হাসপাতালের। সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল হিসেবে কলকাতা শহরের সবথেকে চর্চিত হাসপাতাল এই এসএসকেএম। অবস্থানগত কারণেও এখানে ভিড় সবথেকে বেশি হয়। অভিযোগ উঠছে শহরের এক নম্বর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালেও আউটডোর বিভাগে চিকিৎসকেরা প্রতিদিন দেরি করে আসছেন। ফলত রোগীর লাইন ভয়াবহ আকার নিচ্ছে।
ভিআইপি ব্লক ঝকঝকে
এই এসএসকেএম হাসপাতালেই রয়েছে উডবার্ণ ব্লক। রাজ্যের নেতা মন্ত্রী আমলাদের কারনে যা এক দশক ধরে মাঝেমধ্যেই সংবাদ শিরোনামে থাকে। এই ব্লকের চিকিৎসা পরিষেবা নামি দামি বেসরকারি হাসপাতালের সমকক্ষ। প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষ যদি এর সিকিভাগ পরিষেবাও পেত তাহলে বাংলার স্বাস্থ্যসেবার ছবিটা অন্যরকম হতো।
সাধারণ মানুষের চিকিৎসার জায়গা
সাধারণ মানুষের জন্য যে ব্যবস্থা রয়েছে তা অনেক ক্ষেত্রেই এরকম। ছবিটি চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের। এখানে চিকিৎসা করাতে আসা রোগীর অপেক্ষা করার জায়গা হয়েছে এই নোংরা অস্বাস্থ্যকর জায়গায়। যদিও হাসপাতাল চত্বর নোংরা করার দায় সাধারণ মানুষ ও কর্তৃপক্ষ দুই তরফেরই।
মেডিকেল কলেজের হাল
হাসপাতালের এই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের দায় শুধুমাত্র প্রশাসনের নয়, সাধারণ মানুষেরও তা ওপরের ছবিতে স্পষ্ট। ছবিটি প্রায় দু-শতাব্দী পুরনো ঐতিহ্যবাহী কলকাতা মেডিকেল কলেজের।
দালাল-চক্রের অভিযোগ
রয়েছে দালাল চক্রের অভিযোগ। কয়েকমাস আগেই দালাল চক্রের হাতে পড়ে সাগর দত্ত হাসপাতালে প্রাণ গিয়েছিল এক রোগীর। তবু দালাল চক্র বন্ধ করা যায়নি। হাসপাতালের বেড পেতে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে এই দালালেরা। এর পর ভালো পরিষেবা পাওয়ার জন্য আলাদা ভাবে টাকা।
নয় ঘণ্টাতেও চিকিৎসা শুরু হয়নি
এই ছবিটি দুটোর সময়ের। ভোলা সাহানি নামের এই ব্যক্তি কুলিমজুরের কাজ করতে গিয়ে লরি থেকে পরে যান। ভোর পাঁচটায় তাকে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। ৯ঘণ্টা পার হয়ে গেলে তার চিকিৎসা শুরু করানো যায়নি বলে অভিযোগ করছেন তার বাড়ির লোকেরা। বলছেন, সকাল থেকে তারা এই বিল্ডিং থেকে ওই বিল্ডিং-এ ঘুরে মরছেন।
অভাবের কারণে
শুধুমাত্র ভালো চিকিৎসা পরিষেবার আশায় রাজ্যের বিভিন্ন অংশ থেকে রোগীরা ভিড় জমান কলকাতার নানান সরকারি হাসপাতালগুলোয়। সুমন রায় পঞ্চাশ কিলোমিটার দূর থেকে প্রতি সপ্তাহে আসেন মায়ের ওষুধ নিতে। তিনি জানালেন, বিনামূলে প্রায় সব ওষধই পান এখান থেকে। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মায়া বারুই জানালেন, ওষুধ বিনামূল্যে কিন্তু তার গুণাগুণ কম। বাইরের ওষুধ বেশি ভালো কাজ করে, কিন্তু অভাবের কারণেই এই ওষুধ নিতে এসেছেন তিনি।
কেন এত দূরে আসা?
চল্লিশ কিলোমিটার দূরের দেগঙ্গা থেকে ফুলবাগানের শিশু হাসপাতালে সকাল বেলায় এসেছে এই পরিবার। দুপুরের খাওয়া সেরে নিচ্ছেন। চিকিৎসা করিয়ে বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধে হয়ে যাবে। জানালেন, তাদের অঞ্চলের হাসপাতালে আলাদা শিশু বিভাগ নেই তাই এত দূরে আসা।
বাইরে ভালো, ভিতরে খারাপ
অনেকেরই অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের বহিরাঙ্গের সৌন্দর্যের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে প্রশাসন। তার থেকে চিকিৎসার পরিকাঠামোর উন্নয়ন বেশি প্রয়োজন।
পুরসভার স্বাস্থ্যকেন্দ্র
কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের সবকটিতেই ইউপিএইচসি বা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের অধীন এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির মধ্যে কয়েকটি বেশ ভালো হলেও অধিকাংশেরই পরিষেবার মান খারাপ বলে অভিযোগ। শররবাসীদের অনেকেরই মত, যদি সঠিক স্বাস্থ্য পরিষেবা এখান থেকেই পাওয়া যেত তাহলে আর ছোটোখাটো জ্বরজ্বালার জন্য মানুষকে অনেক টাকা খরচ করে বেসরকারি ডাক্তার দেখাতে হতো না।
যেভাবে অপেক্ষা করেন আত্মীয়রা
রোগীর অত্মীয়রা এভাবেই হাসপাতালে রাত কাটান। কোনোরকমে একটা জায়গা জোগাড় করে সেখানেই শুয়ে থাকতে হয় তাদের।
ওপিডি-তেও প্রচুর চাপ
সরকারি হাসপাতালগুলির ওপিডি-তও প্রচুর চাপ রয়েছে। প্রচুর মানুষ সেখানে যান। তাদের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়।