কলকাতার ফুটবল, তিন প্রধান এবং আবেগ
ফিফার নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই ভারতে ঘরোয়া ফুটবলের আসর জমজমাট। চলছে ডুরান্ড কাপ। তিন প্রধান খেলছে সেখানে।
বহুদিন পর
করোনার জন্য কলকাতার মাঠে দুই বছর প্রায় বলই পড়েনি। কলকাতার ফুটবল লিগ হয়নি। মাঠভর্তি দর্শক, প্রিয় ক্লাব ঘিরে তাদের উন্মাদনা কিছুই দেখা যায়নি। কিন্তু এবার ছবিটা আলাদা। ভারতের সবচেয়ে পুরনো টুর্নামেন্ট ডুরান্ড কাপ দিয়ে শুরু হয়েছে ফুটবল মরসুম। তিন প্রধানের খেলা কলকাতায় হচ্ছে। ফলে দেখা যাচ্ছে সেই পুরনো ছবি। তিন প্রধানই এবার ভালো দল গড়েছে। উপরের ছবিটি মোহনবাগানের প্র্যাকটিসের।
মহামেডানের জয়
মহামেডান এখনো ভারতের প্রধান প্রতিযোগিতা আইএসএলে নেই। তারা আই লিগ খেলে। তবে এবার তারা শক্তিশালী টিম গড়েছে। অনেকদিন পরে টিম যথেষ্ট ভালো খেলছে। পরপর দুইটি ম্যাচে আইএসএলের টিম এফসি গোয়া এবং জামশেদপুর এফসি-কে হারিয়েছে মহামেডান।
নামী মুখ ছাড়াই
মহামেডানে সেই অর্থে নামি বা দামি ফুটবলার নেই। দলের কর্মকর্তারা নামের পিছনে না ছুটে ভালো প্লেয়ার আনার চেষ্টা করেছেন। তার সুফলও পাচ্ছেন। টিম দ্রুতগতির ফুটবল খেলছে। আর মহামেডানের রাশিয়ান কোচ আন্দ্রে চার্নিশভ টিমের মানসিকতায় আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছেন।
হার মোহনবাগানের
মোহনবাগানের নাম এখন এটিকে মোহনবাগান। এবার তারা রীতিমত শক্তিশালী দল গড়েছে। নামি বিদেশিদের নিয়ে এসেছে। সঙ্গে ভারতীয় ব্রিগেড তো আছেই। আছেন স্প্যানিশ কোচ জুয়ান ফেরান্দো। কিন্তু প্রথম ম্যাচে গতবারই প্রথম আই লিগ খেলা রাজস্থান এফসি-র কাছে হেরে গেছে মোহনবাগান।
পোগবার দাদা
এটিকে মোহনবাগান এবার টিমে নিয়েছে ফ্রান্সের তারকা ফুটবলার পল পোগবার দাদা ফ্লোরেন্টিন পোগবাকে। রক্ষণের এই তারকাকে নিয়ে এটিকে মোহনবাগানের সমর্থকদের প্রচুর ভরসা ছিল। কিন্তু পোগবা প্রথম খেলায় হতাশ করেছেন। প্রথম খেলায় তিনটি গোল খেয়েছে মোহনবাগান। ফলে তারা রক্ষণ নিয়ে চিন্তায়।
ইস্টবেঙ্গলের পরে শুরু
বিনিয়োগ সমস্যায় এবারও অনেক পরে টিম গড়েছে ইস্টবেঙ্গল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপে তারা ইমামিকে বিনিয়োগকারী হিসাবে পেয়েছে। অনেক সময় নিয়ে ইমামির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে ইস্টবেঙ্গলের। তারপর তারা দলগঠন করেছে। আইএসএলে খেলে যাওয়া বিদেশিদের উপরই ভরসা রেখেছে ইস্টবেঙ্গল। আর নতুন কোচ হয়েছেন ভারতীয় দলের সাবেক কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইন।
কেমন টিম ইস্টবেঙ্গলের
ইমামি ইস্টবেঙ্গলের টিমে পাঁচ বিদেশির মধ্যে তিনজন ব্রাজিলের। অ্যালেক্স লিমা, এলিয়ান্দ্রো স্যান্টোস ও ক্লেটন সিলভা। সোমবার প্রথম খেলতে নামার আগে কোচ কনস্ট্যানটাইন বলেছেন, ডুরান্ড কাপকে তিনি দেখছেন প্রস্তুতির ম্যাচ খেলার সুযোগ হিসাবে। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার ইস্টবেঙ্গলের ভারতীয় খেলোয়াড়দের মান ভালো বলে মনে করা হচ্ছে।
ডার্বি আসছে
আর কয়েকদিন পরেই ২৮ অগাস্ট ডার্বি ম্যাচ। মুখোমুখি হবে ইমামি ইস্টবেঙ্গল ও এটিকে মোহনবাগান। গত দুই বছর ডার্বিতে বারবার জিতেছে মোহনবাগান। এবার মরশুমের শুরুর ডার্বি ঘিরে দুই দলের সমর্থকরা উত্তেজনায় ফুটছেন। শুরুর পাঁচ মিনিটের মধ্যে অনলাইনে টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। বহুদিন পরে কলকাতায় ডার্বির উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
শুধু তিন প্রধানই নয়
কলকাতার ফুটবল মানে শুধু এই তিন প্রধানই নয়, আছে অসংখ্য ক্লাব। কয়েকটি ক্লাব খুবই পুরনো। যেমন এরিয়ান ক্লাব। ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ঐতিহ্যবাহী ক্লাব। ইস্টবেঙ্গলের সঙ্গে মাঠ শেয়ার করে এরিয়ান। কলকাতা লিগে এরিয়ান রীতিমতো শক্তিশালী দল।
বিএনআর ক্লাব
এই ক্লাবের জন্ম ১৯২৯ সালে। আইএফএ শিল্ড, রোবার্স জেতা এই ক্লাবেরও দীর্ঘ ইতিহাস আছে। এখনো কলকাতা লিগে বিএনআর বড় শক্তি।
ময়দানের ফুটবল
কলকাতা ময়দানে বিভিন্ন ডিভিশনে খেলা ক্লাবের সংখ্যা কয়েকশ। তাদের অনেকেরই প্র্যাকটিস হয় এরকম খোলা মাঠে। গোটা পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাজার হাজার যুবক ময়দানে আসেন বড় ফুটবলার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। কেউ পারেন। কেউ হারিয়ে যান। কিন্তু ফুটবল ও ময়দানের আকর্ষণ কমে না।
ময়দানের ক্যান্টিন
ছোট-বড় যে দলই হোক না কেন, কঠোর অনুশীলন করে। কিন্তু তারপর সব প্লেয়ারই যে পুষ্টিকর খাবার পায়, এমন নয়। অনেকের ভরসা ময়দানের ক্যান্টিনে স্টু ও পাউরুটি। কেউ কেউ শুধু কাটা ফল খান। কেউ বা শুকনো রুটির সঙ্গে তরকারি। দিনের পর দিন তাই খেয়ে দাঁতে দাঁত চেপে তারা লড়াই করে যায় বড় ফুটবলার হওয়ার জন্য।
চাইনিজ ওয়াল
ময়দানে গোষ্ঠ পালের স্ট্যাচু। গোষ্ঠ পালের নাম ছিল চাইনিজ ওয়াল। তার মূর্তি ময়দানের বিশেষ স্মারক। এর পাশেই ময়দানের বিখ্যাত বটতলা। সত্তর-আশির দশকে এখানে ফুটবালর সই করা নিয়ে উন্মাদনা ছিল দেখার মতো। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান একে অপরের ফুটবলার ছিনিয়ে নিত। তাদের খেলা দেখতে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন মাঠ ভরিয়ে দিতেন। সে সময় আর নেই। তবুও কলকাতা ময়দানের আবেগ শেষ হয়ে যায়নি।