আলোর উৎসবে মেতেছে ফ্রান্সের শহর
১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ফ্রান্সের লিয়ঁ শহর যেন আলোর সাগরে ডুবে গেছে৷ ২০২১ সালে ‘আলোর উৎসব' উপলক্ষ্যে আবার কয়েক লাখ দর্শক সেখানে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ গোটা বিশ্বের ৩০ জন আলোকশিল্পী আন্তর্জাতিক দর্শকদের সামনে নিজেদের সৃষ্টি তুলে ধরেছেন৷
শহরের সবচেয়ে বড় বেলকুর চত্বরে ‘তরঙ্গ' নামের সবচেয়ে বড় শিল্পকর্ম তুলে ধরা হয়েছিল৷ ফ্রান্সের সেবাস্তিয়াঁ ল্যফেভ্র এটির স্রষ্টা৷ এমন ইনস্টলেশনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘‘শো চলাকালীন একটা গোটা টিম ঢেউটিকে স্থিতিশীল রাখার কাজ করে, ঠিক জাহাজের মতো৷ আমরা নিয়মিত সেখানে ঢুকে সরঞ্জামের রদবদল ঘটিয়ে সেরা অভিজ্ঞতা নিশ্চিত করার চেষ্টা করি৷''
শিল্পী হিসেবে তিনি এই নিয়ে নয় বার উৎসবে অংশ নিলেও এবারের অভিজ্ঞতা ছিল একেবারে ভিন্ন৷ বেশ কয়েক বছরের পরিশ্রমের ফসল এটি৷ বিশাল শিল্পকর্মটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ৮০ মিটার৷ সবচেয়ে উঁচু অংশ ২০ মিটার৷
৩৫০টি কাপড় নৌকার পালের মতো টাঙানো আছে৷ প্রস্তুতির জন্য কয়েক দিন সময় লাগে এবং সে সময়ে সার্বিক চিত্র ভোলার কোনো অবকাশ নেই৷ সেবাস্তিয়াঁর মতে, এমন মাত্রা সত্যি একটা চ্যালেঞ্জ৷ নরম উপকরণ দিয়ে কাজ করাও কঠিন৷ তিনটি বড় টাওয়ার ছাড়া বাকি সবকিছু শুধু গিঁট, দড়ি ও কাপড়৷
অবশেষে অন্ধকার নেমে এলো এবং আলোর উৎসব শুরু হলো৷ মেক্সিকোর এক শিল্পী লিয়ঁ শহরের টাউন হলের উপর আজটেক আমলের দেবদেবীদের নিয়ে রূপকথার এক রংচঙে কাহিনি ফুটিয়ে তুলেছেন৷ শহরের নিজস্ব দ্রষ্টব্যগুলিও আলোর উৎসবের অংশ হয়ে উঠেছে৷
শহরের পার্কগুলিকেও আলোর উৎসবের রহস্যের জালে শামিল করা হয়েছে৷ সেই ১৮৫২ সাল থেকে আলোর উৎসবের ঐতিহ্য চলে আসছে৷ শহরের ইতিহাসের অনবদ্য অংশ এই উৎসব৷ উৎসবের প্রোগ্রাম ডায়রেক্টর হিসেবে জুলিয়াঁ পাভিয়ার বলেন, ‘‘শুরুতে আলোর উৎসব ছিল সত্যি এক ধর্মীয় অনুষ্ঠান৷ ফুর্ভিয়ে বাসিলিকার উপর ভার্জিন মেরির সম্মানে মূর্তি সৃষ্টি করাই ছিল উদ্দেশ্য৷ আজও গির্জার সেই ধর্মীয় ঐতিহ্য চালু আছে৷ লিয়ঁ শহরের টাউন হলে অবশ্য আমরা জাগতিক উৎসব পালন করি, যার মূলে আছে শুধু আলো৷''
আবার ‘ঢেউ'-এর জগতে ফেরা যাক৷ আলোর উৎসব উদ্বোধনের ঠিক আগে সেবাস্তিয়াঁ নিজের পরিকল্পনা আবার পরীক্ষা করে দেখলেন৷ কারণ তাঁর কাব্যিক সৃষ্টির পেছনে অনেক প্রযুক্তির ব্যবহার রয়েছে৷ সেবাস্তিয়াঁ বলেন, ‘‘আমরা পরিচালনা কক্ষে রয়েছি৷ এখান থেকে আমরা ঢেউ নিয়ন্ত্রণ করি এবং লাইট এফেক্ট সৃষ্টি করি৷ সবকিছু ভালো করে প্রস্তুত করা হয়েছে৷ এটা করতে একের বদলে দুই বছর সময় পেয়েছি৷''
তা সত্ত্বেও কিছু বিঘ্ন ঘটে বৈকি৷ কখনো একটি পাল ভেঙে পড়ে৷ তখন দ্রুত মেরামতির ব্যবস্থা করতে হয়৷ সেবাস্তিয়াঁ জানালেন, ‘‘ঢেউয়ের কোনো পাল খুলে যাওয়া বিরল ঘটনা নয়৷ নীচে পড়ে যায়৷ তখন জট খুলে আমরা আবার সেটিকে টেনে ইনস্টলেশনের উপরে, ঢেউয়ের প্রাণকেন্দ্রে তুলি৷''
রংয়ের খেলা ও শহরের প্রেক্ষাপট ঢেউটিকে যেন আরও জীবন্ত করে তোলে৷ চার দিন ধরে লিয়ঁ শহরের আলোর উৎসব চলে৷ বছরের অন্ধকার ঋতুও তখন যেন সবকিছু আলোকিত হয়ে ওঠে৷
কাই হর্স্টমায়ার/এসবি