এবার দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ, মৃত সাত
রোববার সকালে উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে।
ভয়াবহ বিস্ফোরণ
দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রামে কারখানায় বিস্ফোরণে পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। এমনকী বারাসত থেকেও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পুরো বাড়িটি ভেঙে পড়ে গেছে।
মৃত সাত
বিস্ফোরণের পর ছয়জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়েছে। দশজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় মানুষদের দাবি, শুধু বাজির কারখানায় যারা ছিলেন, তারাই নন, বাইরে পথচারীদেরও মৃত্যু হয়েছে।
কী হয়েছিল?
রোববার সকাল আটটা নাগাদ দোতলা একটি বাড়িতে বিস্ফোরণ হয়। পুরো বাড়িটি ভেঙে পড়ে। অভিযোগ, এখানে বেআইনিভাবে বাজি তৈরি হতো। মজুত করে রাখা বাজিতে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়। আশপাশের কয়েকটি বাড়িও ভেঙে পড়ে। ওই বাড়ির ছাদের একটা অংশ পাশের বাড়িতে গিয়ে পড়ে।
বাজি না বোমা?
পশ্চিমবঙ্গ আতসবাজি ব্যবয়াসী সমিতির পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল ঘুরে এসে দাবি করা হয়েছে, বাজি নয়, বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। সমিতির নেতা বাবলা রায় অভিযোগ করেছেন, ''এখানে বাজি তৈরি হতো না। বোমা তৈরি হতো। আতসবাজির মশলা তারা পাননি। বোমার মশলা পেয়েছেন ''
তদন্তকারীরা কী পেলেন?
তদন্তকারী অফিসাররা ঘটনাস্থলে স্টোন চিপস পেয়েছেন, চকচকে জিনিস পেয়েছেন, যেটা অ্যালুমিনিয়াম বা ম্য়াগনেশিয়াম জাতীয় কিছু। এই সব জিনিস বাজি ও বোমা দুটোতেই লাগে। পরিমাণগত তফাৎ থাকে। এগুলি পরীক্ষার জন্য পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
গ্রামবাসীর বক্তব্য
গ্রামবাসী শেখ মেকেয়ার আলি বলেছেন, ওই কারখানায় যারা কাজ করতো সবাই মুর্শিদাবাদের মানুষ। স্থানীয় মানুষকে কারখানায় ঢুকতে দেয়া হতো না। তাই কারখানার ভিতরে কী হতো, তা তারা জানেন না।
গাড়ি ভাঙা হলো
একটা বাড়ি ভাড়া নিয়ে বাজি কারখানা চলত। এর মালিক ছিল কেরামত আলি। বিস্ফোরণে তার ছেলে রবিউল আলি মারা গেছেন। কেরামতের গাড়ি ভেঙে দিয়েছে গ্রামবাসীরা।
গ্রেপ্তার এক
পুলিশ এখনো পর্যন্ত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তার নাম সফিকুল। বাজি কারখানায় তার অংশীদারি ছিল বলে মনে করা হচ্ছে। বিস্ফোরণ এতটাই তীব্র ছিল যে, পাশের অনেক বাড়িই ভেঙে গেছে।
তৃণমূলের অভিযোগ
তৃণমূলের নেতা ও রাজ্য়ের মন্ত্রী রথীন ঘোষ বলেছেন, ''ওই বুথে আইএসএফ জিতেছে। সেই দলের নেতা রামজান আলি মুর্শিদাবাদ থেকে মানুষ এনে বোমা বানাচ্ছিল। আমরা এই বাজির কারখানার কথা জানতাম না। পুলিশও জানত না।''
আইএসএফের পাল্টা অভিযোগ
আইএসএফ নেতা নওসাদ সিদ্দিকি ঘটনাস্থলে গেছিলেন। তিনি বলেছেন, আইএসএফ বেআইনি বাজি কারখানা চালালে কি পুলিশ চুপ করে বসে থাকত? এই বাজি কারখানা ছিল তৃণমূলের দুই নেতা কেয়ামত আলি, আজিবর আলির। তারা এখন পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে। যারা আইএসএফের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছে, তারাই বাজি কারখানা থেকে টাকা পেত।
বিজেপি-র দাবি
বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখে বলেছেন. এই ঘটনার তদন্ত এনআইএ-কে দিয়ে করানো হোক। তার সন্দেহ, এর পিছনে জঙ্গিরা আছে।
একের পর এক বাজি কারখানায়
এর আগে বজবজ, এগরা, মহেশতলা, পিংলায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে। সেখানেও বোমা তৈরির অভিযোগ উঠেছে। ওই বিস্ফোরণ নিয়ে সোরগোল থামার পরই আবার যে কে সেই অবস্থা। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে যখন সমানে বোমাবৃষ্টি দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ, তখন প্রশ্ন উঠেছিল, এত বোমা আসছে কোথা থেকে?
গ্রামবাসীর কথায়
শাহানারা বিবি জানিয়েছেন, ''আমাদের ছেলেরা বারণ করত। কিন্তু পুলিশ তাদের কেস দিয়ে থানায় ঢুকিয়ে দিত।''