এই আইনে কি দল নিষিদ্ধ না করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা যায়? কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে রাজনৈতিক দল হিসাবে আওয়ামী লীগের নিবন্ধনের কী হবে? আইন সংশোধনের মাধ্যমে মানবতাবিরোধী অপরাধে দল হিসাবে আওয়ামী লীগের বিচারের পথ খুললে ৭১ এর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান কী হবে?
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদন করেছে উপদেষ্টা পরিষদ। সেটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে আইনে রূপান্তর করা হয়েছে শনিবার রাতেই।
আওয়ামী লীগের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে সন্ত্রাস দমন আইনে। এই সিদ্ধান্তের পর ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দল হিসাবে জামায়াতে ইসলামির বিচারের বিষয়টিও নতুন করে আলোচনায় এসেছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ আরো কিছু রাজনৈতিক দল ও ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনের মুখে শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, "সভায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদিত হয়েছে। সংশোধনী অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল কোনো রাজনৈতিক দল, তার অঙ্গসংগঠন বা সমর্থক গোষ্ঠীকে শাস্তি দিতে পারবে।”
ওই বৈঠকেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, "আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও তার নেতাদের বিচার কার্যসম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতাকর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেস-সহ আওয়ামী লীগ এর যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।”
এর পাশাপাশি, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে জুলাই ঘোষণাপত্র আগামী ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত করে প্রকাশ করার সিদ্ধান্তও নেয়া হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ডিডাব্লিউকে বলেন, "আইন উপদেষ্টা সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন আওয়ামী লীগের সব ধরনের কার্যক্রম সন্ত্রাস দমন আইনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু আইনে কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার কেনো সুযোগ নাই। তাদেরকে নিষিদ্ধ করতে হবে রাজনৈতিক দলকেই।”
তিনি জানান, "সন্ত্রাস দমন আইনের ১৮ ধারায় বলা হয়েছে, কেনো ব্যক্তি বা সত্ত্বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে যুক্ত আছে বলে সরকারের কাছে প্রতীয়মান হলে তাদের নিষিদ্ধ বা তালিকাভুক্ত করতে পারবে। আর ধারা ছয়-এ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, যদি কেনো ব্যক্তি, সত্ত্বা বা বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করার জন্য, জনসাধারণ বা জনসাধারণের কোনো অংশের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে সরকার, কোনো ব্যক্তি বা সত্ত্বাকে কোনো কাজ থেকে বিরত রাখতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যে কোনা ব্যক্তিকে হত্যা, গুরুতর আঘাত, আটক ও অপহরণ করা বা চেষ্টা করা, প্ররোচনা দেয়, প্রজাতন্ত্রের বা কোনো ব্যক্তির ক্ষতি বা ক্ষতির চেষ্টা করা হলে তা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড।
তিনি বলেন, "এই আইনে ব্যক্তিকে হত্যা করলেই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হবে না। বাংলদেশের বিদ্যমান ফৌজদারি আইনে হত্যার বিচারের ব্যবস্থা আছে। সেটা নরহত্যা হিসাবে গণ্য হবে। এই আইনে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হতে হলে তার উদ্দেশ্য হতে হবে চারটি- বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জননিরাপত্তা বা সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা।”
মানবতবিরোধী আন্তর্জাতি অপরাধ ট্রাইবুন্যালে আওয়ামী লীগের বিচার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "১৯৭৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল অ্যাক্টটির সংশোধনী করা হচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পেরেছি সংশোধিত আইনে ধারা-২ এ একটি উপধারা যুক্ত করে রাজনৈতিক দলকে বিচারের আওতায় আনা হয়েছে। এবং ২০(খ) ধারায় শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। সেখানে অপরাধ প্রমাণ হলে ওই দলের কর্মকাণ্ডের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া যাবে, ব্যান করা যাবে। রেজিষ্ট্রেশন এবং লাইসেন্স সাসপেন্ড ও ব্যান করা যাবে এবং তাদের সম্পতি বাজেয়াপ্ত করা যাবে। কিন্তু সেটা তো হচ্ছে বিচারে দোষী হওয়ার পর এবং সেটা করবে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস ট্রাইব্যুনাল, সেটা সরকার করবে না।
"কিন্তু উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলন থেকে যা বুঝেছি সরকার আওয়ামী লীগের কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করেছে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মাধ্যমে। এখানে তো কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করার কোনো আইনই নাই,” বলেন ব্যারিস্টির জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।