অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বৈঠকের পর একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, বৈঠকে তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার কাছে আগামী বছরের রমজানের আগে নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেন। দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াও মনে করেন ওই সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে ভালো হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তিনি আগামী বছরের এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা গেলে ২০২৬ সালের রমজান শুরু হওয়ার আগের সপ্তাহেও নির্বাচন আয়োজন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে সে সময়ের মধ্যে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি অর্জন করা প্রয়োজন হবে। তারেক রহমান প্রধান উপদেষ্টার এই অবস্থানকে স্বাগত জানান এবং দলের পক্ষ থেকে তাকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। প্রধান উপদেষ্টাও তারেক রহমানকে ফলপ্রসূ আলোচনার জন্য ধন্যবাদ জানান।
কিন্তু নির্বাচনের তারিখই বিএনপির একমাত্র দাবি ছিল না। অন্য দাবিগুলোর ক্ষেত্রে তাহলে বিএনপির অবস্থান কী? বিএনপি কি রাজপথ থেকে আপাতত নিজেকে গুটিয়ে নিবে?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "রাজনৈতিক দলের অনেক ধরনের দাবি থাকে, আলোচনার মাধ্যমে এর সমাধানও হয়। আমরা ডিসেম্বরে ভোট চাইলেও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সনের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে যে ফেব্রুয়ারি নির্ধারিত হয়েছে, সেটা আমরা মেনে নিয়েছি। আর যে দুইজন ছাত্র উপদেষ্টা ও খলিলুর রহমানের পদত্যাগের কথা বলা হচ্ছে, সেটা কিন্তু আমাদের দলীয় কোন দাবি না। আমাদের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য ব্যক্তিগতভাবে এই দাবি তুলেছেন। ফলে সেগুলো নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো। এখন আমরা নির্বাচনের প্রস্তুতি নেবো।”
'প্রস্তুতি শেষ হলে নির্বাচনের' যে কথা বলা হচ্ছে, সেটা আসলে কি? সেই প্রস্তুতি কি ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করা যেতে পারে না? জানতে চাইলে জনাব হোসেন বলেন, "সেটা সংস্কার ও বিচার। এটা তো বিএনপিও দাবি। আমরাও চাই দ্রুত এগুলো করা হোক।”
কয়েক সপ্তাহ আগে রাখাইনের জন্য মানবিক করিডর ইস্যুতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরির দায়ে খলিলুর রহমানকে অভিযুক্ত করে তার পদত্যাগ চেয়েছিলো বিএনপি। সেসময় প্রধান উপদেষ্টার সাথে ঢাকায় বিএনপির নেতাদের সর্বশেষ বৈঠকে দলটি খলিলুর রহমান ছাড়াও সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া এবং মাহফুজ আলমের পদত্যাগের জোর দাবি করেছিলো। একইসঙ্গে, আদালতের রায়ের পর ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে শপথের জন্য দিনের পর দিন রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করেছেন ইশরাক হোসেন ও তার সমর্থকরা।
মূলত, এসব ঘটনাপ্রবাহকে কেন্দ্র করেই সরকারের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতি হয়েছিলো এবং তার জের ধরে প্রধান উপদেষ্টার ‘কথিত পদত্যাগে'র গুঞ্জনও ছড়িয়ে পড়েছিলো। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ অবশ্য ঢাকায় সাংবাদিকদের বলেছেন, "লন্ডনের বৈঠকে আলোচনায় না আসলেও এসব দাবি এখনো আমাদের আছে। সরকারের নিরপেক্ষতার স্বার্থে আমরা দাবিগুলো করেছিলাম। সরকারের উচিত নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা।”