এক পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু, দুর্ঘটনার কবলে বাকি তিন
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫এক পরিবারের তিন সদস্যের মৃত্যু এবং বাকি তিন সদস্যের গাড়ি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে রহস্য ঘনীভূত হয়েছে কলকাতায়। বুধবার সকালে বাইপাসে এক গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত এক কিশোরসহ তিন ব্যক্তিকে উদ্ধার করা হলে তাদের কথার সূত্র ধরে ট্যাংরার এক বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তিন নারীর মৃতদেহ।
ঘটনা সম্পর্কে যা জানা গেছে
এদিন ভোর রাতে কলকাতার ইস্টার্ন মেট্রোপলিটান বাইপাসের অভিষিক্তা মোড়ের কাছে একটি পিলারে ধাক্কা মারে গাড়িটি। গাড়ি থেকে গুরুতর জখম অবস্থায় উদ্ধার করা হয় প্রণয় দে, প্রসূন দে এবং তার ছেলেকে। তাদের নিকটবর্তী রুবি জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাদের বয়ানের সূত্র ধরে ট্যাংরা অঞ্চলে এক চারতলা বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় তিনটি মৃতদেহ। এদের মধ্যে দুজন প্রণয় এবং প্রসূনের স্ত্রী এবং একজন সেই পরিবারেরই নাবালিকা কন্যা।
'সজ্জন পরিবার, প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী'
এই ঘটনায় হতচকিত অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা। এই পরিবারের প্রতিবেশী তারক দাস ডিডব্লুর চিত্রসাংবাদিক সত্যজিৎ সাউকে জানান, "আমার সঙ্গে দুদিন আগে দেখা হয়েছিল। কিছুই বুঝিনি। ওরা সজ্জন মানুষ। কোনোদিন অশান্তি দেখিনি।"
একই কথা বলেছেন প্রতিবেশী কৌশিক দাস। তিনি বলেন, "আমরা ওদের ভাল পরিবার বলেই জানি। ওরা প্রতিষ্ঠিত ব্যাবসায়ী। ভালো মানুষ।"
দুই ভাইয়ের বয়ান অনুযায়ী ব্যাবসায়ে আর্থিক ক্ষতির কারণে স্ত্রী-পুত্রকন্যা সহ সকলেই আত্মহত্যাতে উদ্যোগী হন। পুলিশকে দেয়া দুই ভাইয়ের বয়ানে জানা গেছে বাড়ির ছ'জনই বিষ মেশানো পায়েস খান। মহিলারা হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করার পর, পুত্রসন্তানসহ প্রসূন এবং প্রণয় গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়েন।
আত্মহত্যা? নাকি খুন?
তবে ট্যাংরার বাড়ি থেকে মৃতদেহ উদ্ধারের পর রহস্য আরো ঘনীভূত হয়। বেশ কিছু প্রশ্ন নিয়ে পুলিশ তদন্তে এগোচ্ছে। তার মধ্যে প্রথম হল, সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে যে রাত ১২টার আশে পাশে গাড়ি নিয়ে বেরোন পরিবারের পুরুষ সদস্যরা। বাড়ি থেকে দুর্ঘটনা স্থলে পৌঁছতে তাদের সময় লাগে প্রায় তিন ঘণ্টা যা লাগা প্রায় অসম্ভব। আনুমানিক সাড়ে ছয় কিমির দূরত্ব যেতে কেন তিন ঘণ্টা লাগল তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
অন্যদিকে, কিশোরীর দেহে আঘাতের চিহ্ন না থাকলেও বাড়ির দুই মহিলাকে হাতের শিরা কাটা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। একজনের গলাতে ছুরির আঘাতও দেখা গেছে। ফলে খুনের সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিচ্ছে না তদন্তকারী দল।
কলকাতা পুলিশের কমিশনার মনোজ ভার্মা বলেন, "ময়নাতদন্তের পরে নির্দিষ্ট করে জানা যাবে এটা খুন নাকি আত্মহত্যা।" ঘটনায় আহত দুই ভাইয়ের বয়ানও খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থলে লালবাজারের তদন্তকারী দল এবং ফরেনসিক দল তদন্ত করছে।
এসসি/জিএইচ