উত্তম এখনও উত্তম

আসল নাম ছিল অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়। জন্ম ১৯২৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর। মৃত্যু ২৪ জুলাই, ১৯৮০। প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি ১৯৪৮ সালে, দৃষ্টিদান। তাঁর অভিনীত পরপর গোটা পাঁচেক সিনেমা ফ্লপ হয়। তাঁকে তখন বলা হতো 'ফ্লপ মাস্টার জেনারেল'। 'বসু পরিবার' থেকে সাফল্যের শুরু। তারপর 'সাড়ে ৭৪' হিট। 'অগ্নিপরীক্ষা'-র সাফল্যের পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।

উত্তম-সুচিত্রা জুটিকে টলিউডের সেরা রোম্যান্টিক জুটি বলা হয়। সপ্তপদীতে মোটর সাইকেলে সওয়ার উত্তম, পিছনে সুচিত্রা। সঙ্গে হেমন্ত-সন্ধ্যার গান, 'এই পথ যদি না শেষ হয়'। সে সময় মাতিয়ে দিয়েছিল এই গান ও ছবি। সুচিত্রার সঙ্গে একের পর এক হিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন উত্তম। 'অগ্নিপরীক্ষা', 'শাপমোচন', 'সবার ওপরে', 'শিল্পী', 'হারানো সুর', 'সুর্যতোরণ', 'একটি রাত'। উত্তমের সিনেমাচিত অভিনয় ও সুচিত্রার হাসি কি ভোলা যায়!

উত্তম যখন খ্যাতির মধ্যগগনে তখন সত্যজিৎ রায়ের হাত ধরে উঠে এলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। দুই জনেই টলিউডের মহাতারকা। দুই জনের অভিনয়ের ধারা আলাদা। উত্তম ও সৌমিত্র মিলে কয়েকটা অসাধারণ সিনেমা উপহার দিয়েছেন। যেমন তপন সিংহের 'ঝিন্দের বন্দি'। এ ছাড়া 'স্ত্রী'-তেও দুই জনে ছিলেন। 'দেবদাস'-এ মূল চরিত্রে ছিলেন সৌমিত্র। উত্তম সেখানে ছোট্ট অভিনয় করেছিলেন। অসাধারণ।

সুচিত্রা, সুপ্রিয়া তো ছিলেনই, সেই সঙ্গে প্রচুর নায়িকার সঙ্গে অসংখ্য হিট ছবি উপহার দিয়েছেন উত্তম। তার মধ্যে অন্যতম সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়, অঞ্জনা ভৌমিক, মাধবী মুখোপাধ্যায়, তনুজা, অপর্ণা সেন, সুমিত্রা মুখোপাধ্যায়। সে সময় বাংলা সিনেমার রসায়ণ ছিল, পরিচ্ছন্ন ছবি, নিটোল গল্প, অসাধারণ অভিনয়। সঙ্গে হেমন্ত, মান্না, শ্যামল, সতীনাথ, সন্ধ্যা, আরতির গান। উত্তম অসম্ভব ভালো লিপ দিতে পারতেন। নিজে গাইতেনও।

সুপ্রিয়া চৌধুরী বড় অভিনেত্রী ছিলেন। ঋত্বিক ঘটকের 'মেঘে ঢাকা তারা'য় তাঁর অভিনয় ছিল এক কথায় অসাধারণ। উত্তমের সঙ্গেও সুপ্রিয়া প্রচুর সিনেমা করেছেন। ১৯৬৩ সাল থেকে উত্তম ও সুপ্রিয়া একসঙ্গে থাকতে শুরু করেন। তার আগে অবশ্য গৌরী চট্টোপাধ্যায়কে বিয়ে করেছেন উত্তম। 'সোনার হরিণ', 'সন্যাসী রাজা'-র মতো অনেক সিনেমাতেই উত্তম-সুপ্রিয়ার জুটি ছিল সুপারহিট।

সমালোচকরা বলেন, উত্তম কুমারের জীবনের সেরা অভিনয় হলো সত্যজিৎ রায়ের সিনেমা 'নায়ক'-এ। হবে নাই বা কেন। মহা-পরিচালকের সঙ্গে মহানায়কের যুগলবন্দি। সেখানে উত্তম দেখিয়ে দিয়েছিলেন, তাঁর অভিনয়ের ক্ষমতা কতখানি। তবে সত্যজিতের সঙ্গে মাত্র দুইটি সিনেমা করেছিলেন উত্তম। নায়ক এবং চিড়িয়াখানা। তারপর তো অকালে চলে গেলেন। মাত্র ৫৩ বছর বয়সে। না হলে আমরা হয়তো আরও কিছু মাস্টারপিস উপহার পেতাম।