ঈদ: গ্রামীণ নারীর একটু আয়ে অনেক আনন্দের সুযোগ
কোরবানির ঈদ শুধু উৎসব নয়, অনেক গ্রামীণ নারীর জন্য এটি বাড়তি আয় আর ঘাম ঝরানো কর্মময় সময়। গরু পালন-বিক্রি, মসলা ভাঙা ও পাটি বুননে কিছুটা বাড়তি আয়ের সুযোগ হয় নারীদের। ছবিঘরে থাকছে তাদের কথা...
‘মালিক খুশি হয়ে যা দেন তাই ঈদ বোনাস’
মসলা ভাঙার কারখানায় সহকারির কাজ করেন পাখি। মাসিক বেতন ১৪ হাজার টাকা। পাখি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বড় চাকরি তো করি না, মালিক খুশি হয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য ২০০০ টাকা দিলে তাই ঈদ বোনাস।’’ কোরবানি ঈদ উপলক্ষে ৬ দিন বাড়ি থাকবেন তিনি। কিন্তু নিয়ম করে ওই ছয় দিনের বেতন কাটা হবে। পাখির কাছে ঈদের ছুটি তাই আনন্দ-বেদনার মিশ্র অনুভূতির৷
‘কোরবানির ঈদের সময় বাড়তি আয়ের পথ মসলা ভাঙা’
ফাতেমা ১০ বছর ধরে মসলাসহ নানান পণ্য ভাঙার কারখানায় কাজ করছেন। সারা বছর কারখানায় ডাবরি ও ভুট্টা ভাঙার কাজ করলেও কোরবানির ঈদের সময় বাড়তি টাকা আয়ের জন্য হলুদ, মরিচ, ধনিয়া ভাঙার কাজ করেন সাভারে নামাবাজারের একটি কারখানায়। ঈদের সময়ে মসলার চাহিদা বেশি থাকায় সকাল ৮টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চলে কারখানার মেশিন। ‘‘মসলা ভাঙা কঠিন কাজ। সারা শরীর জ্বলে। তবুও ঈদের সময় কিছু আয় হয় বলে কাজ করে যাই,’’ বলেন ফাতেমা৷
সাভারে মশলার হাট
কোরবানির ঈদের মাংস রান্না করতে দরকার নানা ধরনের মসলা। তবে সব থেকে বেশি চাহিদা থাকে ভাঙানো মরিচ ও হলুদের। বাজারে প্যাকেট মসলা পাওয়া গেলে আস্ত মসলার গুড়া মাংস রান্নায় স্বাদ বাড়ায় বহুগুণ। সাভারের নামাবাজারে তাই মিলবে আস্ত মসলা গুড়ার সাজানো পসরা।
রাঁধুনীর পছন্দের মশলা
অনেক মসলা যাদের প্রয়োজন নেই তারা অল্প অল্প করে কয়েক ধরনের মসলা নিতে পারেন। এতে দামও কম পড়ে আবার রান্নায় মসলারও অভাব হয় না।
এক লক্ষ ৭০ হাজারে গরু বিক্রি করতে চান কাজল সিদ্ধা
প্রথমে ঋণ করে ৭০ হাজার টাকায় গরু কিনেছিলেন কাজল সিদ্ধা। স্বামীর মৃত্যুর পর প্রায় ৭ বছর আগে কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করে এই নারীর লাভ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। এবছর এক লক্ষ ৭০ হাজারে গরু বিক্রি করতে চান কাজল সিদ্ধা। তিনি বলেন,‘‘ অনেক দিন ধরে গরুটিকে লালন-পালন করছি। ৫০ হাজারের বেশি টাকার শুধু খর-কুটাই খাওয়াতে হয়েছে।’’
বেলা শেষে ঘাস, পাতা কেটে বাড়ি ফেরা
গরুর জন্য নিজ হাতে ঘাস, পাতা কেটে বাড়ি ফেরেন রহিমা। বাজার থেকে কিনে খাওয়ালে ব্যয় বেড়ে যায়, তাই টাকা সাশ্রয়ে নিজেই কাটেন ঘাস-পাতা।
খড়ের ব্যবসায় নারীরা
গরুর অন্যতম প্রয়োজনীয় খাবার খড়। নারীরাই বেশির ভাগ সময়ে রোদে শুকিয়ে প্রস্তুত করেন খড়। বাড়তি আয়ের জন্য কোরবানির ঈদে খড়ও বাজারে বিক্রি করেন গ্রামীণ নারীরা।
পাটি বুনে ১৬ হাজার টাকা আয় সাগরিকার
কোরবানির মাংস কাটাকুটির পর হোগলাপাতার পাটিতে রাখার রেওয়াজ পুরনো। তবে এখন প্লাস্টিকের পাটিরও চাহিদা বেড়েছে। বিয়ের পর বাঁশের চাটাই তৈরি থেকে শুরু করে পরে স্বামীর কাছে পাটি বুননের কাজ শিখেছেন সাগরিকা। মাঝারি আকারের পাটি বুনতে তার সময় লাগে ২ ঘণ্টা। ঈদের মাসে ১৬ হাজার টাকা আয় করেছেন তিনি।
ওজন করে পাটি বিক্রি
ক্রেতাদের চাহিদা বুঝে নানা আকারের পাটি বোনা হয়। তবে আকার অনুসারে নয়, বরং ওজন মেপে কেজি অনুসারে টাকা পান সাগরিকা। দাম ধরা হয়েছে প্রতি কেজি ২৫ টাকা। বুননের কাজ সহজ নয়, তীক্ষ্ণ ধারে প্রায়ই হাত কাটে তার।
প্লাস্টিকের পাটি
এক সময়ে কোরবানির পর মাংস রাখা হতো শুধু হোগলাপাতার পাটিতে। তবে হোগলাপাতা এখন আর বেশি পাওয়া যায় না বলে সাভার ও ধামরাই এলাকায় প্লাস্টিকের পাটি তৈরি হচ্ছে। মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও বিভিন্ন চর এলাকায় হোগলাপাতার পাটি বেশি বোনা হয়।