ইরান কি আসলেই পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে?
১৭ জুন ২০২৫তাহলে দশকের পর দশক ধরে কেন এ নিয়ে বিরোধ চলছে? একটু বিশ্লেষণ করা যাক!
ইরান বরাবরই বলে আসছে, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই পরমাণু প্রকল্প পরিচালনা করছে তারা৷ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাও জানিয়েছে, ইরান এখন পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে না।
কিন্তু তারপরও অনেকের সন্দেহ থাকার পেছনে মূল কারণ হচ্ছে ইরানের ইউরেনিয়ামের ব্যাপক পরিমাণ মজুদ। এ বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাবও ইরানের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে অনেক দেশকেই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।
ইরান এখন ৬০ শতাংশ বিশুদ্ধতায় সমৃদ্ধ ৪০০ কেজিরও বেশি ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে।
বেসামরিক খাতে প্রয়োজনের তুলনায় এই পরিমাণ অনেক বেশি এবং এর বিপজ্জনক মাত্রাও অস্ত্র তৈরির কাছাকাছি। সহজে বলতে গেলে, এই ৪০০ কেজি ইউরেনিয়াম দিয়ে প্রায় ১০টি পারমাণবিক বোমা তৈরি করা সম্ভব।
কয়েকদিন আগেই ইরান জানিয়েছিল, দেশটি আরেকটি ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা সক্রিয় করবে। জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা পরমাণু বিস্তার রোধের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে ব্যর্থ হওয়ায় ইরানের নিন্দা জানিয়েছে।
পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে প্রয়োজন ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম৷ এখনো ইরান সে পর্যায়ে পৌঁছায়নি৷ ইরানের কাছে ৯০ শতাংশ বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম থাকার কোনো প্রমাণও পাওয়া যায়নি৷
তাহলে প্রশ্ন উঠতেই পারে, কিন্তু শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম থাকলে সমস্যাটা কী!
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনও অস্ত্র তৈরিতে প্রয়োজনীয় সমৃদ্ধতা অর্জন না করলেও যে পরিমাণ ইউরেনিয়ামের মজুদ এবং সক্ষমতা ইরানের রয়েছে, তাতে প্রযুক্তি কাজে লাগালে ইরান খুব দ্রুত সে পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে৷
তবে, কেবল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করলেই পরমাণু বোমা বানানো যায় না৷ এজন্য একটি কর্মক্ষম যুদ্ধাস্ত্র এবং সেটা নিক্ষেপে সক্ষম মিসাইলও প্রয়োজন৷
ইসরায়েলসহ অনেকে মনে করে ইরান গোপনে পরমাণু বোমা তৈরি করছে৷
এর সত্যতা জানা সম্ভব হয়নি৷ ইসরায়েলও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেনি।
তবে পরমাণু বোমা তৈরির কাছাকাছি যাওয়ার ফলেই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অনেক সুবিধা পেয়েছে ইরান।
যেমন, পরমাণু চুক্তি থেকে বের হয়ে আসা যুক্তরাষ্ট্র আবার ইরানের সঙ্গে আলোচনায় ফিরে এসেছে৷ ইরানের সঙ্গে এখন নতুন পরমাণু চুক্তি করতে চান ডনাল্ড ট্রাম্প৷
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি, ইরানের সঙ্গেও চুক্তি হতে পারে৷ খুব সহজ ব্যাপার, তারা পরমাণু বোমা তৈরি করতে পারবে না৷"
অনেক বিশ্লেষক ইরানকে পরমাণু শক্তিধর না বললেও, পরমাণু বোমার দ্বারপ্রান্তের দেশ বলে বিবেচনা করেন৷
ইসরায়েলের দাবি, তারা ইরানের বেশ কয়েকটি পরমাণু স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে৷ তবে এসব হামলায় আসলে কতটা ক্ষতি হয়েছে, এর ফলে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে কী প্রভাব পড়তে পারে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা পেতে আরো অপেক্ষা করতে হবে৷
এডিকে/এফএস