ইমরান খানের দল নিষিদ্ধ করতে চায় পাকিস্তান সরকার
দেশটির সরকার বলছে, পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নিষিদ্ধ করার পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পদক্ষেপ দেশটিকে অনিশ্চয়তা ও বিশৃঙ্খলার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
পিটিআই নিষিদ্ধের তোড়জোড়
পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতা তারার জানিয়েছেন, জেলে থাকা ইমরান খানের দল পিটিআইকে নিষিদ্ধ করতে পদক্ষেপ নিবে তার সরকার। এরই মধ্যে এ নিয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, "এ ব্যাপারে প্রয়োজনে মন্ত্রিসভা এবং সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শও নেয়া হবে।"
কেন এ সিদ্ধান্ত?
ইসলামাবাদে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, পিটিআইকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পক্ষে তার সরকারের কাছে যথেষ্ট তথ্য ও প্রমাণ রয়েছে। ইমরান খান এবং তার দলের বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ, দাঙ্গা উসকে দেয়া এবং রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য পাচার করা। অবশ্য এসব অভিযোগ শুরু থেকেই 'রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত' আখ্যা দিয়ে অস্বীকার করে এসেছেন কারারুদ্ধ ইমরান খান।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে যত অভিযোগ
২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকার পর অনাস্থা ভোটে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান খান। এরপর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এখনও তিনি কারাগারেই রয়েছেন। ইমরানের বিরুদ্ধে শতাধিক মামলার বেশ কয়েকটিতে অভিযোগ গঠনও করা হয়েছে। তবে অনেক মামলাই উচ্চ আদালত খারিজ করেছে, অথবা সাজা দিয়ে ঘোষণা করা রায় বাতিল করেছে। কয়েকদিন আগে তৃতীয় বিয়ে নিয়ে করা এক মামলায় তার সাজা খারিজ করে খালাস দিয়েছে একটি আদালত।
পিটিআই-এর পক্ষে রায়
এ বছরের শুরুতে জাতীয় নির্বাচনে পিটিআইকে অংশ নেয়া থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ফলে দলটির প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য হন। তারপরও দলটির ৯৩ জন সদস্য নির্বাচনে জিতে সবচেয়ে বড় বিরোধী গ্রুপ হিসাবে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে গিয়েছে। গত সপ্তাহে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে, অন্তত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অন্তত ২০টি আসন থেকে অন্যায়ভাবে পিটিআইকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিরোধীদের মন্তব্য
ইমরান খানের উপদেষ্টা জুলফিকার বুখারি ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, পিটিআইকে নিষিদ্ধ করা হলে "নিজের পায়েই কুড়াল মারবে সরকার"। এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের উল্লেখ করেন তিনি। তিনি বলেন, "সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টও পিটিআইকে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বৃহত্তম দল হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে।"
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা
রাজনীতি বিশ্লেষক জাহিদ হুসাইন ডিডাব্লিউকে বলেছেন, এই পরিকল্পনা "দুর্যোগ ডেকে আনতে পারে" এবং "সরকারের নিজের পতনের কারণ হতে পারে"। তিনি বলেন, "পাকিস্তানে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার ঘটনা খুবই বিরল।" সংবিধান বিশেষজ্ঞ ওসামা মালিক অবশ্য মনে করেন পিটিআই ক্ষমতায় থাকার সময় ইসলামিক চরমপন্থি দল টিএলপিকে নিষিদ্ধ করে নিজেরাই নজির তৈরি করেছে। তবে এর সমাধান সুপ্রিম কোর্টেই হবে বলে মনে করেন তিনি।
হারুণ জানজুয়া, ফারাহ বাগাত/এডিকে/জেডএ