এরাসমুস মুন্ডুস প্রোগ্রাম
১২ মার্চ ২০১২প্রতি বছর এরাসমুস মুন্ডুস শুধু মাস্টার্স করার জন্য নয়, ইউরোপের বিভিন্ন শিক্ষকতার জন্যও বৃত্তি দিয়ে থাকে৷ ২০১০ সাল থেকে পিএইচডি'র জন্যও ছাত্র-ছাত্রীরা আসছে ইউরোপে৷ ২০১২/১৩ সালের শিক্ষা বছরে ১৩১টি বিষয়ে মাস্টার্স এবং ৩৪টি বিষয়ে পিএইচডির বৃত্তি দিয়েছে এরাসমুস মুন্ডুস৷ সংস্থাটিকে আর্থিকভাবে সাহায্য করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷
মোহাম্মদ মনিরুল হাসান বাংলাদেশের ছাত্র৷ বৃত্তি নিয়ে মাস্টার্স করছেন বন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ তাঁর বিষয় এগ্রিকালচারাল ফুড অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল পলিসি অ্যানালাইসিস৷ গত বছরের অক্টোবর মাসে তিনি জার্মানিতে এসেছেন৷ তাঁর কোর্স দুই বছরের৷ প্রথম বছর তিনি থাকবেন জার্মানিতে, দ্বিতীয় বছর হাঙ্গেরিতে৷ বাংলাদেশে বসে কীভাবে তিনি এই বৃত্তির খবর জানলেন৷ তিনি বললেন, ‘‘খবরটি আমি আগে থেকই জানতাম৷ কারণ আমার পরিচিত অনেকেই এই বৃত্তি নিয়ে পড়তে এসেছিল ইউরোপে৷ তাদের কাছ থেকেই খবর পাই৷ এই প্রোগ্রাম কিন্তু একটি বা কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়৷ এখানে পড়াশোনার জন্য যে কেউই আবেদন করতে পারে৷ আমি যেহেতু অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছি, তাই আমি এই বিষয়েই পড়াশোনার জন্য খোঁজ খবর নিয়েছি৷ সবমিলে ১৩১টি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মাস্টার্স এবং পিএইটডি করার সুযোগ দিচ্ছে এরাসমুস মুন্ডুস প্রোগ্রাম৷ এই প্রোগ্রাম খুঁজে পাওয়া সহজ৷ গুগল'এ এরাসমুস মুন্ডুস টাইপ করলেই সব তথ্য চলে আসবে৷ সেখানে সব নিয়ম কানুন দেয়া আছে৷ কবে আবেদন করতে হবে, কীভাবে আবেদন করতে হবে৷''
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
সব ধরণের খবর পাওয়ার পর থেকেই তিনি ইউরোপে আসার জন্য নিজেকে তৈরি করতে শুরু করেন৷ ঠিক কীভাবে নিজেকে তৈরি করেছেন? কতদিন সময় লেগেছে? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, ‘‘বিদেশে পড়াশোনার ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক ছিলাম এবং সে অনুযায়ী নিজেকে তৈরি করেছি৷ তবে এরাসমুস মুন্ডুস প্রোগ্রামে কেউ যদি আসতে চায়, কেউ যদি সেপ্টেম্বরের সেশন ধরতে চায় তাহলে তাকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে বৃত্তি চেয়ে সব কাগজপত্র জমা দিতে হবে৷ ফলাফাল জানিয়ে দেয়া হবে এপ্রিল মাসের মধ্যে৷ বাংলাদেশে যেখানে পড়াশোনা করা হয়েছে সেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কশিট এবং সার্টিফিকেট ইংরেজিতে অনুবাদ করে পাঠাতে হবে৷ অধ্যাপকদের রিকমেন্ডেশন লেটার প্রয়োজন৷ নিজের একটি লেটার অব মটিভেশনও প্রয়োজন৷ জানাতে হবে কেন আমি এই বিষয়টি নিয়ে পড়তে চাই৷ এছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোও দেখা হয় যেমন আবেদনকারী কয়টি ভাষা জানে, খেলাধুলায় কেমন পারদর্শী – এসব দিকও দেখা হয়৷ শুধুমাত্র পড়ুয়াদের জন্য এরাসমুস মুন্ডুস প্রোগ্রাম তা কিন্তু নয়৷ আর কর্ম অভিজ্ঞতা খুবই প্রয়োজনীয়৷ তাহলে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেক৷ আরো প্রয়োজন টোফেল এবং আইইএলটিএস স্কোর৷''
বাংলাদেশের ছাত্র-ছাত্রীদের উজ্জ্বল স্বাক্ষর
বাংলাদেশ থেকে বেশ কয়েকজন ছাত্র-ছাত্রী এসেছেন এই বৃত্তি নিয়ে৷ তাদের প্রসঙ্গে মনিরুল হাসান জানালেন, ‘‘বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রী পড়তে আসে ইউরোপে৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, চিটাগং বিশ্ববিদ্যালয় – এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তারা এসেছে এবং তারা বেশ ভাল করছে৷ মূলত এরাই ছিল আমার প্রেরণা৷''
এরাসমুস মুন্ডুস প্রোগ্রামের অধীনে বৃত্তি পেতে চাইলে কোন বিষয়গুলোর দিকে নজর রাখতে হবে? কেউ যদি এই বৃত্তি নিয়ে আসতে চায় তাহলে কীভাবে নিজেকে তৈরি করবেন? মনিরুল হাসান বেশ জোর দিয়ে বলেন, ‘‘সবার আগে ছাত্র বা ছাত্রীকে জানতে হবে৷ আমি কোন বিষয়ে পড়তে চাই, আমি এরাসমুস মুন্ডুস প্রোগ্রামে ফিট করি কিনা! যদি আমি ফিট না করি তাহলে আমাকে কী করতে হবে, কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে৷ তবে আবেদন করার আগে সব কাগজপত্র তৈরি রাখতে হবে, অধ্যাপকদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করতে হবে৷ একমাত্র তবেই সফলভাবে আবেদনপত্র পাঠানো সম্ভব৷''
প্রতিমাসে বৃত্তির জন্য যে টাকা ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে তুলে দেয়া হয় তা কি যথেষ্ট? মনিরুল হাসান জানলেন, হ্যাঁ তা দিয়ে বেশ ভাল ভাবেই যে কোন ছাত্র বা ছাত্রী জার্মানিতে থাকতে পারবে৷ এরাসমুস মুন্ডুস প্রোগ্রামের অধীনে যারা বৃত্তি পেয়েছে তারা প্রতি মাসে এক হাজার ইউরো হাতে পান৷ এরমধ্যেই থাকা খাওয়ার খরচ চালাতে হয়৷ এছাড়া জার্মানিতে আসার পরপরই বিভিন্ন জিনিস-পত্রের প্রয়োজন হয়, তা কেনার জন্য এককালীন বেশ কিছু টাকা দেয়া হয় ছাত্র-ছাত্রীদের৷
প্রতিবেদন: মারিনা জোয়ারদার
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ