ইউএসএআইডি বন্ধে ভারত বিপাকে পড়বে না
৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫গত ৭০ বছর ধরে ইউএসএআইডি ভারতে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যক্ষেত্র-সহ নানান প্রকল্পে সাহায্য করেছে৷ বর্তমান আর্থিক বছরে ইউএসএআইডির কাছ থেকে ভারতের পাওয়ার কথা ১৪ কোটি ডলার৷ আর ভারতের বাজেটের পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি ডলার৷
আর এখানে ভারত মানে ভারত সরকার নয়, ভারতের এনজিও৷ কারণ, ইউএসএআইডির সাহায্যটা যায় বা যেত ভারতের এনজিওগুলির কাছে৷
যুক্তরাষ্ট্রে সরকারের বিদেশি সাহায্য সংক্রান্ত ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে ২০২৩-২৪ সালে ভারতে ৬৮ লাখ ডলার দেয়া হয়েছিল সরকার ও সিভিল সোসাইটির জন্য, পাঁচ কোটি ৫০ লাখ ডলার দেয়া হয়েছিল স্বাস্থ্য, এক কোটি ৮০ লাখ ডলার পরিবেশ এবং ৭৮ লাখ ডলার সামাজিক পরিকাঠামো তৈরির জন্য দেয়া হয়েছিল৷
ফলে ইউএসএআইডির কাছ থেকে ভারত বিপুল পরিমাণ অর্থ পায় না৷ তবে ইউএসএআইডি থেকে টাকা আসা বন্ধ হয়ে গেলে তার বেশি প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে৷ এছাড়া শিক্ষা ও পরিবেশের মতো ক্ষেত্রেও তা পড়বে৷
গর্ভবতী মা ও সদ্য জন্মানো শিশুপদের জন্য কয়েকটি প্রকল্প ইউএসএআইডির সাহায্যে চলে৷ তাছাড়া টিবি, এইচআইভি প্রতিরোধেও প্রকল্প চালু আছে৷
কোনো সন্দেহ নেই, ১৯৯০ সাল থেকে ইউএসএআইডির সাহায্যে চলা প্রকল্পগুলি বহু শিশু ও মায়ের জীবন বাঁচিয়েছে৷ নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ার থেকে মৃত্যু কম করার ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে৷ টিবি ও এইচআইভি রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও তারা সাহায্য করেছে৷ ১৯৯৫ থেকে এইচআইভি নিয়ে সচেতনতা তৈরির কাজ করেছে ইউএসএআইডির সঙ্গে যুক্ত প্রকল্প৷ এর সুফলও পেয়েছে ভারত৷
কোভিডের সময় ১ কোটি ৩১ লাখ ডলার সাহায্য করেছে ইউএসএআইডি৷ এই অর্থ মূলত খরচ করা হয়েছে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানোর জন্য, কোভিড পরীক্ষা, প্রশিক্ষণের কাজে৷ তারা তখন দুইশটি উন্নত প্রযুক্তির এয়ার ভেন্টিলেটরও দিয়েছিল৷
এছাড়া পরিবেশ ও কৃষির ক্ষেত্রেও ইউএসএআইডির প্রকল্পগুলি ভারতীয়দের সাহায্য করেছে৷ এক লাখ ৩০ হাজার কৃষক এর সুবিধা পেয়েছেন৷ তিন লাখ মানুষকে শৌচাগারের সুবিধা দিয়েছে৷
বন্ধের প্রভাব
ইউএসএআইডি যদি পাকাপাকিভাবে বন্ধ হয়ে য়ায়, তাহলে ভারতের কিছু প্রকল্পের উপর তার প্রভাব পড়বে৷ হয়ত কিছু প্রকল্প বন্ধ বা স্থগিত হয়ে যাবে৷
কতটা অসুবিধা হবে?
টেলিগ্রাফ পত্রিকার দিল্লির সাবেক বিজনেস এডিটর এবং পিটিআইয়ের পূর্ব ভারতের সাবেক প্রধান জয়ন্ত রায়চৌধুরী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘‘ভারতের কোনো অসুবিধাই হবে না৷ প্রণব মুখোপাধ্যায় যখন অর্থমন্ত্রী তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, সরকারি কোনো প্রকল্পে বাইরের দেশের কোনো সরকারের সাহায্য নেয়া হবে না৷ আর সরকার এখন নিজের ক্ষমতায় অনেক বেশি পরিমাণ অর্থ সামাজিক, স্বাস্থ্য, পরিবেশ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বরাদ্দ করে৷''
জয়ন্ত মনে করেন, ‘‘ভারতের কোনো ক্ষেত্রই এনজিওদের উপর নির্ভর করে এমন নয়৷''
প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ‘‘ভারত এখন বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি৷ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জল সরবরাহ, পরিবেশ-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ যথেষ্ট৷ ফলে ইউএসএইডের অর্থসাহায্যে চলা প্রকল্পগুলি বন্ধ হয়ে গেলে ভারত যে ভয়ংকর অসুবিধায় পড়বে এমন নয়৷ এই সব প্রকল্পগুলি যদি খুব প্রয়োজনীয় মনে হয়, তাহলে তার জন্য অর্থ দেয়ার ক্ষমতা ভারত সরকারের আছে৷ তখন সরকার চাইলে সেই প্রকল্প নিজেই হাতে নিতে পারবে৷ তবে কিছু এনজিও বিপাকে পড়তে পারে৷ তাদের কাজ ব্যাহত হতে পারে৷''