আলাস্কা বৈঠক শেষে যে বার্তা দিলেন ট্রাম্প-পুটিন
১৬ আগস্ট ২০২৫রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিনের সঙ্গে শুক্রবার তিন ঘণ্টার আলোচনা শেষে ট্রাম্প জানিয়েছেন, তাদের ‘বৈঠক অত্যন্ত ফলপ্রসূ' হয়েছে৷ একটি বড় বিষয় ছাড়া অনেক কিছুতেই তারা একমত হয়েছেন৷ ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের যে চুক্তি নিয়ে প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল সে বিষয়ে ট্রাম্প কোনো সুখবর দিতে পারেননি৷ বলেছেন, ‘‘আমরা সেটি এখনও করতে পারিনি৷ কিন্তু আমাদের সেটিও করার খুব ভালো সম্ভাবনা আছে৷'' তবে এ বিষয়ে আর বিস্তারিত তিনি বলেননি৷
প্রকৃতপক্ষে আলোচনা শেষে দেয়া বক্তব্যে ইউক্রেন শব্দটিও ট্রাম্প একবারের জন্য উচ্চারণ করেননি৷ শুধু একবার রাশিয়ার যুদ্ধের প্রসঙ্গটি এনেছেন৷ বলেছেন, ‘‘আমরা প্রতি সপ্তাহে হাজার পাঁচেক মানুষের মৃত্যুর অবসান ঘটাবো৷ প্রেসিডেন্ট পুটিনও সেটি চান৷''
রুশ প্রেসিডেন্ট পুটিন বেশ শান্তভাবে তার বক্তব্য রেখেছেন৷ ইউক্রেনের ‘পরিস্থিতির' জন্য তিনি রাশিয়ার নিরাপত্তাকে অজুহাত হিসেবে দেখিয়েছেন৷ পুটিন বলেন, ‘ইউক্রেনের ভ্রাতৃ্প্রতিম মানুষদের' ক্ষেত্রে যা হয়েছে তা ‘একটি ট্র্যাজেডি ও গভীর ক্ষত'৷ ‘‘যে কারণে আমাদের দেশ এর অবসান ঘটাতে খুবই আন্তরিক,'' বলেন তিনি৷
যুদ্ধ প্রসঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়া হুমকির মুখে ছিল, যে কারণেই ‘উস্কানির' জবাব তাদের দিতে হয়েছে৷
বৈঠকে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে
এদিকে ফক্স নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বৈঠকের আরো কিছু বিস্তারিত তুলে ধরেছেন৷ পুটিনের সঙ্গে আলোচনায় ‘ভূমি হস্তান্তর' এবং ইউক্রেনের জন্য নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিষয়টি উঠে এসেছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি৷
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমার মনে হয় এই বিষয়গুলোতে আমাদের আলোচনা হয়েছে এবং এই পয়েন্টগুলোতেই আমরা মূলত একমত হয়েছি৷''
চুক্তিতে পৌঁছানোর প্রত্যাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেন. ‘‘আমার মনে হয় আমরা চুক্তির যথেষ্ট কাছাকাছি আছি৷ ইউক্রেনকে এসব বিষয়ে একমত হতে হবে৷ সম্ভবত তারা না বলবে৷''
জেলেনস্কিকে ট্রাম্প কী পরামর্শ দেবেন এমন প্রশ্নের জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘‘চুক্তি করতে হবে৷'' তিনি ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘‘দেখুন রাশিয়া অনেক বড় শক্তি, কিন্তু তারা (ইউক্রেন) নয়৷''
তবে ‘ভূমি হস্তান্তর' ইস্যুটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ কেননা রাশিয়ার কোনো আইনগত ভূমি ইউক্রেনের দখলে নেই৷ অন্যদিকে ইউক্রেনের কোন অংশ মস্কোকে ছেড়ে দেয়ার কথা জেলেনস্কিও আগে থেকে নাকচ করে আসছেন৷
মস্কোর সঙ্গে চুক্তি নির্ভর করছে ‘জেলেনস্কির উপরে'
এদিকে ইউক্রেনের অংশগ্রহণ ছাড়াই যুদ্ধ বন্ধে পুটিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমা মিত্রদের উদ্বেগ ছিল৷ বুধবার জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎস একটি ভার্চুয়াল বৈঠকে অংশ নিয়েছেন৷ সেখানে ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলোর পক্ষ থেকে পাঁচটি শর্ত তুলে ধরা হয়েছে৷ যার মধ্যে ছিল, যুদ্ধবিরতির শর্ত এবং ইউক্রেনের ভূখন্ড নিয়ে যেকোন সিদ্ধান্ত ইউক্রেনই নেবে৷
ট্রাম্পও তার বিবৃতিতে এই বিষয়টি উল্লেখ করেছেন৷ ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং ন্যাটো দেশগুলোর নেতাদের ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, শেষ পর্যন্ত এই বিষয়ে ‘তাদেরই' সিদ্ধান্ত নিতে হবে৷
ট্রাম্প জানিয়েছেন পুটিনের সঙ্গে তার বৈঠকের পরপরই আলোচনার বিষয়ে তিনি তাদের অবহিত করবেন৷ আলাস্কা থেকে ওয়াশিংটনে ফিরে যাওয়ার আগে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছেন, মস্কোর সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর দায়িত্ব এখন জেলেনস্কির উপরে৷
এদিকে ট্রাম্প-পুটিনের পরবর্তী বৈঠকটি হতে পারে মস্কোয় এমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন পুটিন৷
বেয়ার্ন্ড রিগার্ট/এফএস