আরোয়োর বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ফিলিপাইনের সরকার
২০ নভেম্বর ২০১১ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট গ্লোরিয়া ম্যাকাপাগাল আরোয়ো যে বর্তমান সরকারের রোষের শিকার হবেন সেটা বোঝা যাচ্ছিল অনেক আগে থেকেই৷ গত বছরের জুন মাসে বর্তমান প্রেসিডেন্ট বেনিনো আকিনো নির্বাচিত হওয়ার পর ঘোষণা দিয়েছিলেন দুর্নীতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷ তখন থেকেই আরোয়োর সমর্থকরা আশঙ্কা করছিলো সরকার তাঁকে জেলে পোরার রাস্তা খুঁজছে৷
উল্লেখ্য, ২০০১ থেকে ২০১০ এই দীর্ঘ প্রায় দশ বছর ধরে ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন আরোয়ো৷ তবে প্রেসিডেন্ট পদ থেকে বিদায় নিলেও রাজনীতি ছেড়ে যাননি৷ গত বছর আরোয়ো কংগ্রেসের নিম্নকক্ষে নির্বাচিত হন৷ তবে তাঁর এবং তাঁর স্বামীর বিদেশে যাওয়ার ওপর আগে থেকেই নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয় সরকারের পক্ষ থেকে৷ ফিলিপাইনের উচ্চ আদালতে সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আবেদন করেন আরোয়ো এবং সেখানে তিনি জয়ীও হন৷ কিন্তু তারপরও দেশ ত্যাগ করতে পারেননি তিনি৷
গত সোমবার ফিলিপাইনের পাসা শহরের নিম্ন আদালত আরোয়োর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে৷ মঙ্গলবার আরোয়ো দেশ ত্যাগের আগমুহূর্তে বাধার মুখোমুখি হন৷ তাঁকে বিমান বন্দরে আটকে দেওয়া হয়৷ এই সময় হুইল চেয়ারে বসা ছিলেন ফিলিপাইনের সাবেক এই নারী প্রেসিডেন্ট৷ পুলিশ তাঁকে আটক করে এবং হাসপাতালে নিয়ে যায়৷ শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে গ্রেফতার করার ঘোষণা দিয়েছে ফিলিপাইনের পুলিশ৷ বার্তা সংস্থাগুলো জানিয়েছে শনিবার পুলিশ আরোয়োর আঙ্গুলের ছাপও নিয়েছে৷ এই সময় তিনি হাসপাতালের বিছানাতে শোয়া ছিলেন বলে জানা গেছে৷ পুলিশের সিনিয়র সুপারিন্টেন্ডন্ট জোয়েল করোনেল বলেন, ছবি তোলার সময় সাবেক প্রেসিডেন্ট বিছানাতেই শোয়া ছিলেন৷ তবে আরোয়োর ছবি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ করতে রাজি হয়নি পুলিশ৷ এই অবস্থাতে সাবেক এই প্রেসিডেন্টের শারীরিক অবস্থা কেমন, সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন তাঁর পরিবার এবং সমর্থকরা৷
উল্লেখ্য, আরোয়োর বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে৷ বিগত ২০০৭ সালে ফিলিপাইনের মুসলিম অধ্যুষিত দক্ষিণাঞ্চলের মাগুইন্দানাও প্রদেশে সিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়৷ সেই মধ্যবর্তী নির্বাচনে ১২ জন প্রার্থী বিপুল ব্যবধানে জয়ী হন যাদের সকলেই ছিলেন প্রেসিডেন্ট গ্লোরিয়া আরোয়োর সমর্থক৷ এই নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠলেও তাতে কান দেন নি তিনি৷ এই অভিযোগ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন আরোয়ো৷ এছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে৷ বর্তমান সরকার সেই অভিযোগের তদন্ত করছে৷
এদিকে, আরোয়োর এই অবস্থা সম্পর্কে তাঁর পূর্বসূরি জোসেফ এস্ত্রাদা সিঙ্গাপুর থেকে দেওয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, আরোয়োর এই গ্রেফতার তাঁর কর্মফল৷ নির্বাচনী কারচুপি এবং দুর্নীতির জবাব তাঁকে দিতে হবে, বলেছেন এস্ত্রাদা৷ অথচ এই এস্ত্রাদাকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন গ্লোরিয়া আরোয়ো৷ উল্লেখ্য, ২০০১ সালে এস্ত্রাদা ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন৷ এরপর তাঁকে দুর্নীতির অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়৷ তবে পরবর্তীতে আরোয়ো তাঁকে ক্ষমা করে দেওয়ায় আর জেলের ঘানি টানতে হয়নি ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট এস্ত্রাদাকে৷
প্রতিবেদন: রিয়াজুল ইসলাম
সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই