আফ্রিকার চিতা এলো ভারতের জঙ্গলে, বাঁচবে তো?
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২ভারত থেকে চিতা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ৭০ বছর আগে। বাঘ, সিংহ, লেপার্ড থাকলেও চিতা ছিল না। তার পিছনে শিকার যেমন দায়ী, তেমনই দায়ী জঙ্গল কমে যাওয়া, মানুষ-জানোয়ার সংঘাতের মতো বিষয়গুলিও।
দীর্ঘদিন ধরে ভারতে চিতা আনার কথা নিয়ে আলোচনা হলেও অবশেষে ২০০৮-০৯ সালে প্রজেক্ট চিতা তৈরি হয়। মনমোহন সিং সরকার তা অনুমোদন করে। তারপর ২০১০ সালে জয়রাম রমেশ আফ্রিকা যান চিতা আনার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে।
কিন্তু ২০১২-তে সুপ্রিম কোর্টে একটা মামলা হয়। তারপর ২০১৩-তে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, চিতা আনা যাবে না। ২০১৭ সালে আবার সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানানো হয়। ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন পায় সরকার।
চিতা এলো
এরপর নামিবিয়া থেকে আটটি চিতা আনা হয়। গত শনিবার প্রধানমন্ত্রী সেই চিতা কুনো রিজার্ভ ফরেস্টে ছেড়ে দেন।
এরপর চিতার প্রজনন ঘটিয়ে তার সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টা হবে। পাঁচটি মেয়ে ও তিনটি ছেলে চিতা এসেছে। ১১ ঘণ্টা বিমানে কাটিয়ে তারা ভারতে এসে পৌঁছায়।
প্রতিটি চিতার বয়স কম বেশি আড়াই বছর। এখানে নিয়ে আসার আগে তাদের একমাস নিভৃতবাসে রাখা হয়েছিল। তাদের গলায় স্যাটালাইট কলার পরানো হয়েছে, যাতে তাদের গতিবিধি সবসময় নজরে রাখা যায়।
কেন কুনো?
একসময় কুনো তৈরি করা হয়েছিল সিংহ রাখার জন্য। মনমোহন সিং সরকারের পরিকল্পনা ছিল, গির থেকে কিছু সিংহ এনে কুনোয় রাখা। কারণ, দুইটি জায়গার ভূপ্রকৃতির মিল আছে।
কিন্তু যেহেতু ভারতে একমাত্র গিরেই সিংহ পাওয়া যায়, তাই গুজরাট সরকার সিংহ দিতে চায়নি। তাহলে তাদের অনন্যতা নষ্ট হবে বলে। গিরে সিংহের সংখ্যা জায়গার তুলনায় বেশি হলেও তারা সিংহ ছাড়েনি।
সেই সিংহের জায়গায় এখন চিতা রাখা হয়েছে। এর জন্য বেশ কিছু মানুষকে আগেই অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।
চিতা নিয়ে আশা এবং উদ্বেগ
নামিবিয়ার চিতা এখন মধ্যপ্রদেশে কুনোর জঙ্গলে ছুটছে। এত বছর পর ভারতের জঙ্গলে আবার চিতা আসার ফলে আশাও জেগেছে। সেই আশা হলো, এতদিন পর চিতা ভারতে এসেছে। ভারতের পরিবেশের সঙ্গে আফ্রিকার চিতা মানিয়ে নেবে। এখানে তাদের বংশবৃদ্ধি হবে। সত্তর বছর আগের পরিস্থিতি আর তৈরি হবে না। আরেকটা আশা, ওই জঙ্গলে প্রচুর মানুষ আসবেন চিতা দেখতে। সেই সূত্র ধরে কুনোর আশপাশের এলাকায় মানুষ কিছু টাকার মুখ দেখবেন।
আর আশঙ্কাটা হলো, চিতা এখানে বাঁচবে তো, আবার মানুষ ও বন্য জন্তুর সংঘাত হবে না তো? সেন্টার ফর ওয়াইল্ড লাইফ স্টাডিজের ডিরেক্টর উল্লাস করন্থ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিককে বলেছেন, ''আমি এই প্রকল্পের বিরোধী নই। কিন্তু যে পদ্ধতিতে চিতা আনা হয়েছে, আমি তার বিরোধী। কিছু চিতা এনে ভারতের জঙ্গলে ছেড়ে দিলাম? এখানে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৩৬০ জন মানুষ বসবাস করে। এটা তো অনেকটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেয়ার মতো হলো।''
বিজ্ঞানী ও গবেষক অর্জুন গোপালস্বামী ন্যাশনাল জিওগ্রিফিককে বলেছেন, ''গত ৭০ বছরে মানুষের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। বন্য জন্তুর উপর তাদের চাপ বেড়েছে। তাই এই প্রকল্পের কথা কেন ভাবা হলো?''
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, ''চিতাগুলিকে ভারতের জঙ্গলে অভ্যস্ত হতে কয়েক মাস সময় লাগবে। তাই ততদিন পর্যন্ত মানুষ যেন অপেক্ষা করেন। যেন আবার ৭০ বছর আগের পরিস্থিতি দেখা না দেয়। ''
সংরক্ষণবিদ রবি চেল্লাম আল জাজিরাকে বলেছেন, ''ভারতে চিতার বেঁচে বংশবৃদ্ধির সম্ভাবনা ক্ষীণ। এই বনে প্রচুর লেপার্ড আছে। বুনো কুকুর আছে। চিতাগুলি বন্য জন্তুদের শিকারও হতে পারে। তাদের নামিবিয়া থেকে এখানে আনার আগে যেখানে তারা থাকবে তা ভালো করে চিহ্নিত করার দরকার ছিল।''
কিন্তু কিছু পরিবেশ ও বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই সমস্যা হবে না। চিতারা খুব সহজে নিজেদের মানিয়ে নিতে পারে। ফলে তারা ভারতের পরিবেশে মানিয়ে নেবে।
উল্লাস করন্থ জানিয়েছেন, ''একটা চিতার বনে ঘোরাফেরা করার জন্য একশ বর্গ কিলোমিটার জায়গা লাগে। কুনোতে আটটি চিতা ছাড়া হলো। জায়গা কম। বন্য কুকুর বড় বিপদের কারণ। এবার যদি চিতা লোকালয়ে এসে ছাগল মারে, তখন গ্রামবাসী বিষ দেবে, পিটিয়ে মারার চেষ্টা করবে চিতাকে।''
রাজনৈতিক বিতর্ক
কংগ্রেসের দাবি, চিতাকে ভারতে ফেরোনোর কৃতিত্ব তাদের। তারাই প্রথম প্রকল্প তৈরি করে। কংগ্রসের তরফ থেকে টুইট করে এই দাবি করা হয়েছে। একই দাবি করেছেন সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী জয়রাম রমেশও।
আর বিজেপি-র আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয়র দাবি, কংগ্রেস যে প্রকল্প করেছিল, তা ভুলে ভরা ছিল। সে সব খারিজ হয়ে গেছে।
এর মধ্যেই রাহুল গান্ধী টুইট করে বলেছেন, ''আটটা চিতা তো এলো, কিন্তু আট বছরে যে ১৬ কোটি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মোদী, তার কী হলো?''
জিএইচ/এসজি(পিটিআই, নিউজ১৮)