আওয়ামী লীগ নিয়ে ভারতকে চিঠি ঢাকার, পাল্টা জবাব দিল্লির
২১ আগস্ট ২০২৫সম্প্রতি দিল্লির প্রেস ক্লাবে একটি সাংবাদিক বৈঠকের ডাক দিয়েছিল নিউ ইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশ বিষয়ক একটি মানবাধিকার সংস্থা। ওই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার কথা ছিল বাংলাদেশের সাবেক মন্ত্রীদেরও। ২০২৪ এর ৫ অগাস্টের পর যারা দেশ ছেড়ে ভারতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। শেষপর্যন্ত অবশ্য তারা বৈঠকে যোগ দেননি। অনুষ্ঠানের আয়োজক বিশেষ কারণে সম্মেলনটি হবে না বলে ঘোষণা করেন। তবে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে কিছু পুস্তিকা দেওয়া হয়। যেখানে জুলাই আন্দোলন এবং ৫ অগাস্ট পরবর্তী সময়ে পুলিশসহ বিভিন্ন ব্যক্তির উপর কীভাবে অত্যাচার হয়েছে এবং তাদের হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে।
ওই ঘটনার কথা উল্লেখ করে এবং কলকাতায় আওয়ামী লীগ দপ্তর তৈরি করে কার্যকলাপ চালাচ্ছে, এমন দাবি করে বুধবার দিল্লিকে একটি চিঠি দিয়েছে ঢাকা। সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করেছে। নিষিদ্ধ দলের কর্মীরা ভারতে বসে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ভারত এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হতে পারে।
ঢাকার এই চিঠির উত্তর দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল। ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সরকারি ওয়েবসাইটে বিবৃতি দিয়ে তিনি জানিয়েছেন, 'বাংলাদেশ ভুল জায়গায় চিঠিটি পাঠিয়েছে। ভারতীয় আইন ভেঙে আওয়ামী লীগের কোনো সদস্য বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, এমন তথ্য আমাদের কাছে নেই।' শুধু তা-ই নয়, বাংলাদেশে দ্রুত মুক্ত এবং স্বচ্ছ নির্বাচন হোক, মানুষের রায়ে নতুন সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক এমন প্রত্যাশাও প্রকাশ করা হয়েছে ওই বিবৃতিতে।
বাংলাদেশের চিঠির বয়ান
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা ওই বিবৃতির প্রথম অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে, বিভিন্ন রিপোর্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ জানতে পেরেছে যে, ভারতের রাজধানী দিল্লি এবং কলকাতায় নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের দপ্তর তৈরি হয়েছে।
এর পরের অনুচ্ছেদেই বলা হয়েছে, ভারতের মাটি ব্যবহার করে নিষিদ্ধ দল আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব বাংলাদেশ বিরোধী কার্যকলাপ ক্রমশ বাড়াচ্ছে। সেই সূত্র ধরেই ভারতে তারা পার্টি অফিস খুলেছে।
তৃতীয় অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দলটির বহু নেতা পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ফৌজদারি মামলা চলছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো ঘৃণ্য অপরাধের অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে আছে। সেই সব সিনিয়র নেতাদের অনেকেই ভারতে বসে আছেন। এবং সেখানে বসে বাংলাদেশবিরোধী কার্যকলাপ করছেন। বস্তুত, এই অনুচ্ছেদেই ওই সাংবাদিক সম্মেলনের উল্লেখ করা হয়েছে।
এরপরেই ভারতকে বার্তা দেওয়ার চেষ্ঠা করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, ভারতের মাটি ব্যবহার করে এমন কার্যকলাপ চলতে থাকলে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে তাদের সম্পর্কে প্রভাব ফেলতে পারে। বাংলাদেশের জনগণের ভাবাবেগের কথা উল্লেখ করেও ভারতকে সতর্ক করা হয়েছে ওই চিঠিতে।
শেষ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, দুই দেশের সম্পর্কের কথা মনে রেখে ভারত যেন দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ভারতের সংক্ষিপ্ত উত্তর
বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশের এই চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেছে ভারত। বলা হয়েছে, বাংলাদেশ 'ভুল' জায়গায় চিঠিটি পাঠিয়েছে। ভারতের মাটি ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের সদস্যরা বাংলাদেশ-বিরোধী কার্যকলাপ চালাচ্ছে, এমন তথ্য ভারতের কাছে নেই। এরপরই বাংলাদেশের উপর পাল্টা চাপ তৈরি করে ভারত জানিয়েছে, তারা চায় বাংলাদেশে দ্রুত স্বচ্ছ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক এবং জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হোক।
ঘটনার প্রেক্ষাপট
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশ থেকে ভারতে এসে আশ্রয় নেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর কিছুদিনের মধ্যেই বাংলাদেশের বেশ কিছু সাবেক মন্ত্রী, নেতা, কর্মী এবং সাবেক সরকারের আমলা ভারতে এসে আশ্রয় নেন। তারা যে কেবল ভারতেই আশ্রয় নিয়েছেন এমন নয়, অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু দেশেও তারা বসবাস করছেন। এছাড়াও নেপাল ও ভুটানেও অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার তৈরি হওয়ার পর সে দেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর শেখ হাসিনাসহ ভারতে আশ্রয় নেওয়া বাংলাদেশের নেতা-কর্মীদের হস্তান্তর চেয়ে ভারতকে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দেয় ঢাকা। চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করলেও এখনো পর্যন্ত তার কোনো জবাব দেয়নি ভারত।
বাংলাদেশের এই চিঠি নিয়ে ভারতে বসবাসকারী আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল ডয়চে ভেলে। আনুষ্ঠানিকভাবে এবিষয়ে তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। তবে একটি কথা অনেকেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ঢাকার এই চিঠিকে তারা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছেন না।
এসজি/জিএইচ