অ্যাম্বুলেন্স নেই, ঝুড়িতে করে গর্ভবতী হাসপাতালে
৯ জুলাই ২০২০২০২০ সালের ভারত দাবি করছে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে অত্যাধুনিক পরিকাঠামো তৈরি হয়েছে। অথচ সেই আলোর নীচের অন্ধকার যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থেকে গিয়েছে। সম্প্রতি ছত্তিশগড়ের একটি ঘটনা সে কথাই ফের একবার মনে করিয়ে দিল।
জনজাতি অধ্যুষিত ছত্তিশগড় ভারতের অন্য অনেক রাজ্যের থেকে অপেক্ষাকৃত ভাবে পিছিয়ে পড়া। দীর্ঘ দিন ধরে সেখানে নানা দাবিতে আন্দোলন করছেন জনজাতির মানুষরা। কিন্তু লাভ যে বিশেষ হচ্ছে না, তা প্রমাণিত হলো কোনডাগাঁও অঞ্চলে। এক গর্ভবতী নারীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স চেয়েছিল পরিবার। দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও অ্যাম্বুলেন্স আসেনি।
পরে প্রশাসন জানিয়ে দেয়, ওই দুর্গম অঞ্চলে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছতে পারবে না। ভাঙা পাথর বয়ে নিয়ে যাওয়ার ঝুড়িতে এরপর সেই নারীকে বসিয়ে কয়েক কিলোমিটার পথ হেঁটে হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছেন ওই নারী। তিনি এবং সদ্যোজাত দুইজনেই ভালো আছেন। তবে এই ঘটনা নতুন করে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সাধারণ পরিষেবাটুকুও কি পেতে পারেন না দেশের লাখ লাখ সাধারণ, গরিব মানুষ?
গ্রামের মানুষ জানিয়েছেন, এ ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগেও একাধিকবার এ ভাবেই গ্রাম থেকে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ বার তা সংবাদমাধ্যমের চোখে পড়ে যাওয়ায় এত আলোচনা হচ্ছে। বস্তুত, এর আগে এ ভাবে রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যুও হয়েছে। তবু প্রশাসন নীরব। প্রশাসনের বক্তব্য, ওই গ্রামে পৌঁছনোর জন্য কোনও রাস্তা নেই। ফলে অ্যাম্বুলেন্স পৌঁছতে পারে না। গ্রামের মানুষের দাবি, দীর্ঘ দিন ধরে গ্রাম পর্যন্ত রাস্তা তৈরি করে দেওয়ার জন্য তাঁরা প্রশাসনের কাছে দাবি জানাচ্ছেন। কিন্তু প্রশাসন কখনওই তাঁদের কথায় গুরুত্ব দেয়নি।
শুধু কোনডাগাঁও নয়। ভারতের বহু গ্রামেই এই একই ছবি দেখতে পাওয়া যাবে। এর আগে কোলে করে মাইলের পর মাইল পথ হেঁটে স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ছবি ভারতের নাগরিক দেখেছেন। দেখেছেন অসুস্থ শিশুকে কাঁধে নিয়ে বাবাকে হাঁটতে। এক একটি ঘটনা ঘটে, কিছুদিন আলোচনা হয়, তারপর সকলে সব ভুলে যান।
ছত্তিশগড়ের ঘটনা নিয়েও রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। বিজেপির দাবি, কংগ্রেসশাসিত ছত্তিশগড়ের ভয়াবহ চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। কংগ্রেসের দাবি এই ছত্তিশগড়েই ১৫ বছর রাজত্ব করেছে বিজেপি। এই ঘটনায় প্রমাণ হলো, তারা কোনও কাজই করেনি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটাই ভারতের সমস্যা। যে কোনও ঘটনাকে কেন্দ্র করেই রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। কাজের কাজটা কেউ করে উঠতে পারে না।
এসজি/জিএইচ (পিটিআই, এএনআই)