অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে ভারতের চাই ২৬৫ রান
৪ মার্চ ২০২৫শুরুতেই রোহিত শর্মার মুখে অবিশ্বাসের হাসি। একটা-দুটো নয়, ওয়ানডেতে টানা ১৪তম টস হারলো ভারত! এর ১১টিতে হেরেছেন রোহিত। টানা টস হারে বিশ্ব রেকর্ডটা আগেই হয়েছিল, আজ দুবাইয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে সেটা সমৃদ্ধ হল আরও।
অবিশ্বাসের হাসি ছিল স্টিভেন স্মিথের মুখেও। অক্ষর প্যাটেলের করা ইনিংসের ১৪তম ওভারের শেষ বলটা স্মিথের ব্যাটের কানায় লেগে প্যাড ছুঁয়ে লাগে স্টাম্পে। কিন্তু বেলস পড়েনি, এমন সৌভাগ্যে স্মিথ কি না হেসে পারেন!
দুবাইয়ে ভারতীয় দর্শকদের অবশ্য মাথায় হাত তখন। ‘স্পিন মাস্টার' স্মিথ জীবন পেয়ে দীর্ঘশ্বাসই বাড়িয়েছেন ভারতের। দুবাইয়ের কঠিন পিচে স্মিথের ৭৩ ও অ্যালেক্স ক্যারির ৬১ রানের ইনিংসে ভর করে অস্ট্রেলিয়া ৩ বল বাকি থাকতে অলআউট হয় ২৬৪ রানে।
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়করা আক্রমণাত্মক সবসময়। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালের আগে প্যাট কামিন্স চুপ করাতে চেয়েছিলেন ভারতীয় দর্শকদের। একপেশে ম্যাচ জিতে গুজরাটের নরেন্দ্র মোদী স্টেডিয়ামের লাখখানেক দর্শককে চুপও করিয়ে দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। বোর্ডার-গাভাস্কার সিরিজের আগেও একই হুমকি দিয়েছিলেন কামিন্স, ‘‘ভারত আগেও অস্ট্রেলিয়ায় ভালো পারফর্ম করেছে। আমাদের কাজ ওদের চুপ করিয়ে দেওয়া।''
তবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি সেমিফাইনালের আগে তেমন হুমকি দেননি ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ, ‘‘স্টেডিয়ামকে চুপ করাবো, এমন বার্তা দিতে চাই না। আশা করি আমরা খুব ভালো খেলবো।”
কণ্ঠে ঝাঁঝ না থাকার কারণ, দল ঘোষণার পর নানা কারণে স্কোয়াডের ৫ জনের ছিটকে যাওয়া। সেই তালিকায় আছেন অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, মিচেল স্টার্ক, জস হ্যাজেলউডের মতো তারকা। এমনকি সেমিফাইনালের আগেও চোটের জন্য বাদ পড়েছেন ম্যাথু শর্ট, দলে নেওয়া হয় কুপার কনোলিকে। এমন দল নিয়ে মুখে বড় বড় কথা না বলে মাঠে কিছু করে দেখাতে চেয়েছিলেন স্মিথ। সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে করেছেনও সেটা।
ভারতের বিপক্ষে স্মিথ নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন সবসময়। ওয়ানডেতে তার ১২ সেঞ্চুরির ৫টিই ভারতের বিপক্ষে। তার ওয়ানডে গড় যেখানে ৪৩.২৮, ভারতের বিপক্ষে সেটা প্রায় ৫৩.১৯। দুবাইতেও স্মিথ খেলেছেন ৯৬ বলে ৪ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ৭৩ রানের ইনিংস। তার সুইপ, আপার কাট, ড্রাইভ, পুল শটে ঠিকরে বেরুচ্ছিল আত্মবিশ্বাস। তবে বোল্ড হয়েছেন মোহাম্মদ শামির ফুলটসে এগিয়ে এসে লাইন মিস করে। সুন্দর একটা ইনিংসের এমন সমাপ্তি মানতে পরছিলেন না স্মিথও।
এই ইনিংসে অবশ্য রেকর্ড করেছেন একটা। আইসিসি টুর্নামেন্টের নকআউট ম্যাচে একই দলের বিপক্ষে যৌথ সর্বোচ্চ ৩টি করে ফিফটি প্লাস ইনিংস এতদিন ছিল শুধুই ভারতের যুবরাজ সিং (বিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া) আর নিউজিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসনের (বিপক্ষ ভারত)। আজ দুজনের পাশে নাম লেখালেন স্মিথও।
ট্রাভিস হেডকে নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা হয়েছে ম্যাচের আগে। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে ১২০ বলে ১৩৭ রানে অসাধারণ এক ইনিংস খেলে ভারতকে হারিয়েছিলেন এই বাঁহাতি ওপেনার। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালেও ভারতকে একাই উড়িয়ে দিয়েছিলেন হেড। লর্ডসে ১৭৪ বলে খেলেছিলেন ১৬৩ রানের ইনিংস।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি হেড। আউট হয়েছেন ৩৩ বলে ৫ বাউন্ডারি ২ ছক্কায় ৩৯ করে। মিস্ট্রি স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দেন শুভমন গিলকে।
হেডকে করা জীবনের প্রথম বলেই উইকেট পাওয়া বরুণ কিন্তু হতে পারতেন স্থপতি কিংবা সিনেমার পরিচালক। তামিলনাড়ুর এসআরএম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক সম্পন্ন করে স্থপতি হিসেবে তিনি চাকরিও করেছিলেন একটি কোম্পানিতে। ২০১৪ সালে অভিনয় করেছিলেন ‘জিভা' নামের একটি তামিল সিনেমায়। সেই বরুণ ক্রিকেট বেছে নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ উইকেট নিয়ে হয়েছিলেন ম্যাচ-সেরা। আজ হেডের বিপক্ষে করা প্রথম বলেই ফেরালেন ভয়ংকর এই ব্যাটারকে। বরুণের জীবনটা যেন সিনেমার মতোই!
ইনজুরির জন্য ছিটকে যাওয়া ম্যাথু শর্টের জায়গায় সুযোগ পাওয়া কুপার কনোলি ব্যর্থ ছিলেন ওপেনিংয়ে। ৯ বল খেলে ০ রানে আউট হন মোহাম্মদ শামির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে। আইসিসি টুর্নামেন্টে চতুর্থ সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে ২১ বছর ১৯৪ দিনে অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিত্ব করলেন কনোলি। ১৯৮৭ বিশ্বকাপে ২০ বছর ২২৫ দিনে সবচেয়ে কম বয়সি হিসেবে খেলেছিলেন অ্যান্ড্রু জেসার্স।
৫৪ রানে দুই ওপেনারকে হারানোর পর হালটা ধরেছিলেন মার্নাস লাবুশেন ও স্টিভেন স্মিথ। তৃতীয় উইকেটে ৫৬ রানের জুটি গড়েন দুজন। রবীন্দ্র জাদেজার বলে ২৯ করে এলবি হন লাবুশেন। জস ইংলিসও ভালো শুরু করে ফেরেন ১১ রানে। তাকে কোহলির ক্যাচ বানিয়ে ফেরান জাদেজা।
এরপর ৫ বলের ব্যবধানে স্টিভেন স্মিথ ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ফিরলে চাপে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। শামির বলে স্মিথ বোল্ড হওয়ার পরই অক্ষর প্যাটেলের বলে বোল্ড হন ম্যাক্সওয়েল। ৫ বলে ১ ছক্কায় ৭ করেছিলেন তিনি।
তারপরও অস্ট্রেলিয়ার স্কোরটা ২৬৪-তে পৌঁছে অ্যালেক্স ক্যারি ও টেইলএন্ডারদের দৃঢ়তায়। ৫৭ বলে ৮ বাউন্ডারি ১ ছক্কায় ৬১ করে রান আউট হন ক্যারি। বেন দারশুইস ১৯ আর নাথান এলিস করেন ১০।
দুবাইয়ের স্পিন-বান্ধব উইকেটে ভারত একাদশ গড়েছে ৪ স্পিনার নিয়ে। তবে ইনিংসের সবচেয়ে সফল পেসার মোহাম্মদ শামি। ৪৮ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ভারতের চার স্পিনারের মধ্যে কুলদীপ যাদব ছিলেন উইকেটহীন। বরুণ চক্রবর্তী ও রবীন্দ্র জাদেজা নিয়েছেন ২টি করে উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া : ৪৯.৩ ওভারে ২৬৪/১০ (স্মিথ ৭৩, ক্যারি ৬১, হেড ৩৯ ; শামি ৩/৪৮,বরুণ ২/৪৯)