অমিতাভ বচ্চনের জানা-অজানা কিছু তথ্য
তিনি এখন বলিউডের জীবন্ত কিংবদন্তি। গত ৫৪ বছর ধরে তিনি বলিউডে অভিনয় করে যাচ্ছেন। সেই অমিতাভ বচ্চনের ৮১ বছর হল আজ৷
১৯৪২-এ জন্ম
অমিতাভ বচ্চনের জন্ম এলাহাবাদে, ১৯৪২ সালে। বাবা বিখ্যাত কবি হরিবংশ রাই বচ্চন এবং মা তেজি বচ্চন। নৈনিতালের শেরউড কলেজ, দিল্লির কিরোরিমল কলেজে পড়া অমিতাভ বচ্চন শুধু অভিনেতাই নন, তিনি টিভি-র অন্যতম জনপ্রিয় হোস্ট-অ্যাঙ্কর, প্রযোজক, গায়ক, আবৃত্তিকার। সারা জীবন ধরে অসংখ্য সম্মানে ভূষিত। তার অসাধারণ কন্ঠস্বর, অনন্য অভিনয়প্রতিভা, সমাজসচেতনতা নিয়ে তিনি নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
ফ্লপ দিয়ে শুরু
কলেজে পড়ার পর অমিতাভ কয়েকবছর কলকাতায় চাকরি করেছেন। তার সিনেমার জগতে প্রবেশও এক বাঙালি পরিচালকের হাত ধরে। মৃণাল সেন। তার ভুবন সোম ছবিতে অমিতাভের গলা ব্যবহার করেছিলেন এই বিখ্যাত পরিচালক। অভিনয় শুরু 'সাত হিন্দুস্তানি' থেকে। ১৯৭১ সালে রাজেশ খান্নার সঙ্গে করলেন আনন্দ। সেই সময়ে অমিতাভ বচ্চন যে সব সিনেমায় নায়কের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন, তা ফ্লপ করেছিল। প্রথমে করা ১২টি সিনেমা ফ্লপ এবং আনন্দ-সহ দুইটি হিট।
অ্যাংরি ইয়ং ম্যান
সেই সময় বলিউডে উত্থান সেলিম-জাভেদ জুটির। সেলিম খান এবং জাভেদ আখতারের স্ক্রিপ্ট এবং অমিতাভ বচ্চনের রাগী যুবকের ভূমিকায় অভিনয় মন জয় করলো দর্শকদের। 'জঞ্জির' সুপারহিট হলো। বচ্চন ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেলেন। তারকার জন্ম হলো।
শোলের সুপারস্টার
সেলিমা খান অমিতাভের সঙ্গে প্রকাশ মেহরা, মনমোহন দেশাই, যশ চোপড়ার পরিচয় করিয়ে দেন। তাদের ছবিতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করেছেন অমিতাভ। তবে ১৯৭৫ সালে রমেশ সিপ্পির পরিচালনায় অমিতাভ, ধর্মেন্দ্র, সঞ্জীব কুমার, জয়া বচ্চন ও হেমামালিনীর 'শোলে' ভারতীয় সিনেমায় নতুন ইতিহাস রচনা করলো। নায়ক থেকে মহানায়ক হয়ে গেলেন অমিতাভ বচ্চন। স্টার থেকে সুপার-ডুপার স্টার। উপরের ছবিতে শোলে-র একটি দৃশ্যে ধর্মেন্দ্র ও হেমা।
সত্তরের দশক, অমিতাভের দশক
সত্তরের দশকে একের পর এক সুপারহিট সিনেমা উপহার দিয়েছেন অমিতাভ। 'দীওয়ার', 'চুপকে চুপকে', 'মিলি', 'ডন', 'কসমে ওয়াদে', 'ত্রিশূল', 'মুকাদ্দর কা সিকান্দর', 'গঙ্গা কি সৌগন্ধ'। কিছুদিন আগে অমিতাভ বচ্চন ইনস্টাতে বলেছিলেন 'কেয়া দিন থা ওভি'। সত্যিই তাই। অমিতাভ বচ্চনের স্বপ্নের উড়ান চলছে তখন।
জয়ার সঙ্গে বিয়ে
জয়া বচ্চনের সঙ্গে অমিতাভের বিয়ে হয় ১৯৭৩ সালে। তখন জয়া খ্যাতির তুঙ্গে। বিয়ের পরে জয়া অভিনয় জীবন থেকে অনেকটাই সরে আসেন। আর অমিতাভের উত্থান শুরু হয় রকেটের গতিতে।
রেখার সঙ্গে প্রেম
বলিউডে সবচেয়ে বেশি গুঞ্জন ছিল এবং এখনো আছে অমিতাভ-রেখার প্রেম নিয়ে। অমিতাভ ও রেখা কেউই এই প্রেমের কথা স্বীকার করেননি। কিন্তু অমিতাভ, রেখা ও জয়ার ক্রিকোণ প্রেম নিয়ে তৈরি হয়েছে বলিউডের হিট ছবি 'সিলসিলা'। কিছুদিন আগেই রেখা জানিয়েছিলেন, 'মুকাদ্দার কি সিকান্দার' ছবির আলাদা প্রদর্শনী হয়েছিল। সেখানে তার ও অমিতাভের প্রেমের দৃশ্য দেখে জয়া সমানে কেঁদেছিলেন।
'কুলি' করতে গিয়ে
১৯৮২ সালে 'কুলি' সিনেমার শুটিংয়ে পুনিত ইশারের সঙ্গে মারামারির দৃশ্যে অভিনয় করছিলেন অমিতাভ। সেখানেই তিনি ভয়ংকরভাবে আহত হন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন তিনি। সেই সময় গোটা ভারত-জুড়ে অমিতাভের জন্য প্রার্থনা করে গেছেন কোটি কোটি ভক্ত। শেষ পর্যন্ত অমিতাভ সুস্থ হয়েছেন। ফিরে এসেছেন সিনেমায়। আবার একের পর এক ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেছেন।
রাজনীতিতে যোগ দেয়া
বন্ধু রাজীব গান্ধীর অনুরোধ ফেলতে পারেননি অমিতাভ। ১৯৮৪ সালে তিনি কংগ্রেসের হয়ে এলাহাবাদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। হেরে যান সেসময়ের হেভিওয়েট রাজনৈতিক নেতা হেমবতীনন্দন বহুগুণা। কিন্তু অমিতাভের রাজনৈতিক জীবন দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। বফর্সে তার নাম জড়ায়। তিনি ১৯৮৭ সালে রাজনীতি ছাড়েন। ১৯৮৮ সালে আবার সিনেমার জগতে ফিরে আসেন। অভিনয় করেন শাহেনশা-তে।
বিপর্যয় এবং ফিরে আসা
১৯৯৬ সালে তিনি তৈরি করেন অমিতাভ বচ্চন কর্পোরেশন লিমিটেড এবং আসেন ফিল্ম প্রযোজনার জগতে। কিন্তু তার এই বাণিজ্যিক উদ্যোগ সফল হয়নি। এবিসিএলের ব্যানারে তার সিনেমা 'মৃত্যুদাতা' ফ্লপ করে। আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন অমিতাভ। পরে তিনি রাজনীতিক অমর সিংয়ের সহযোগিতায় সেই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। উপরের ছবিতে দুই সুপারস্টান অমিতাভ ও শাহরুখ।
চরিত্রাভিনেতা
২০০০ থেকে চরিত্রাভিনয়ের দিকে ঝোঁকেন অমিতাভ। একের পর এক ছবিতে অসাধারণ অভিনয় করেন। 'ব্ল্যাক', 'পিকু', 'চিনি কম', 'দ্য লাস্ট লিয়ার'-এর মতো বহু ছবিতে তার অভিনয় দেখে মুগ্ধ হন দর্শক। ৮০-তে পা দিয়েও তিনি সমানে অভিনয় করে যাচ্ছেন। তার অভিনয় আরো বেশি করে সিনেম্যাটিক হয়েছে, অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন নিজেকে।
সিনেমার সঙ্গে টিভিতেও
সিনেমার পাশাপাশি টিভিতেও সফল অমিতাভ বচ্চন। তিনি এখন যেমন পিকুর মতো ছবিতে কাজ করেন, তেমনই করেন টিভির রিয়ালিটি শো। কৌন বনেগা ক্রোরপতি। টিভি-তে এই রিয়ালিটি শো জনপ্রিয়তার নিরিখে এখনো সামনের সারিতে। শুধু নিজের ব্যক্তিত্ব দিয়ে একটা রিয়ালিটি শো-কে কোন জায়গায় পৌঁছে দেয়া যায়, অমিতাভ বচ্চন তার উদাহরণ।