অপারেশন সিন্দুরে ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস নিয়ে আবার বিতর্ক
১ জুলাই ২০২৫ভারতীয় সামরিক প্রধান জেনারেল অনিল চৌহান আগেই এবিষয়ে মন্তব্য করেছিলেন, এবার একই কথা বললেন জাকার্তায় ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ক্যাপ্টেন শিব কুমার। তিনি বলেছেন, ''রাজনৈতিক কারণে অপারেশন সিন্দুরে ভারতের কয়েকটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল।''
শিব কুমারের মন্তব্যের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ দিক আছে। অপারেশন সিন্দুর চলাকালীন পাকিস্তান দাবি করেছিল, তারা ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস করেছে। কিন্তু ভারতের তরফে এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি। পরে সিঙ্গাপুরে একটি সামরিক আলোচনাসভায় যোগ দিতে গিয়ে ব্লুমবার্গ সংবাদমাধ্যমকে ভারতের সামরিক প্রধান জানিয়েছিলেন, প্রাথমিকভাবে কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল। কিন্তু দ্রুত ভারত তা শুধরে নেয় এবং ওই সংঘাতে নিজেদের শক্তির পরিচয় দেয়।
সে সময় প্রশ্ন উঠেছিল, তাহলে কি পাকিস্তানের হামলায় ভারতের একটি যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল? পাকিস্তান দাবি করেছিল, একটি নয়, ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান তারা ধ্বংস করেছে। যার মধ্যে ফ্রান্সের থেকে নেওয়া রাফাল বিমানও ছিল। জাকার্তার কলেজে আলোচনা করতে গিয়ে শিব কুমার 'ফিউ' শব্দটি ব্যবহার করেছেন। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি পাকিস্তানের দাবি মতো একাধিক যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছে ভারতের?
শিব কুমারের দ্বিতীয় বক্তব্যটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছেন, 'প্রাথমিকভাবে রাজনৈতিক বাধার কারণে ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল।' পরে সেই ভুল শুধরে নেওয়া হয় এবং পাকিস্তানের সেনাঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়। শিব কুমারের এই বক্তব্যের নিরিখে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, শিব কুমার আসলে বলতে চেয়েছেন যে, অপারেশন সিন্দুরের প্রথম পর্যায়ে ভারত পাকিস্তানের সেনাঘাঁটিতে আক্রমণ চালাতে পারেনি। কারণ রাজনৈতিক ভাবে স্থির করা হয়েছিল, সেনাঘাঁটি নয়, কেবলমাত্র সন্ত্রাসীঘাঁটিতে হামলা চালানোর নির্দেশ ছিল। পাকিস্তান সেই সুযোগ ব্যবহার করে সরাসরি ভারতীয় যুদ্ধবিমান টার্গেট করেছিল। পরে ভারত পাকিস্তানের সেনাঘাঁটিতেও হামলা চালায়।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা
শিব কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পরেই একটি ব্যাখ্যা দিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলা হয়েছে, অফিসারের বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। শিব কুমার বলতে চেয়েছেন, ভারত একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং এখানে সেনাবাহিনী একটি নির্দিষ্ট শৃঙ্খলার মধ্যে দিয়ে চলে। ভারতে সেনাবাহিনী প্রতিনিধিত্বমূলক রাজনৈতিক নেতৃত্বের অন্তর্গত, অন্য অনেক দেশের মতো, সেনাবাহিনী এখানে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকার নেই।
বস্তুত, জাকার্তায় ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এই ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাতেও বিতর্কের অবসান হচ্ছে না। কারণ, ভারতীয় যুদ্ধবিমান ধ্বংস এবং রাজনৈতিক চাপের কথা উল্লেখ করেছিলেন শিব কুমার।
রাজনৈতিক বিতর্ক
শিব কুমারের এই মন্তব্য প্রকাশ্যে আসার পরেই কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, 'সরকার দেশবাসীকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে।প্রধানমন্ত্রী কেন পার্লামেন্টে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকছেন না এবং বিরোধীদের সবকিছু জানাচ্ছেন না?'
কংগ্রেসের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়েছে যে, অপারেশন সিন্দুরের পর ভারতের সমস্ত বিরোধীশক্তি সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছিল। বিভিন্ন দেশে ভারতীয় প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন দলের নেতা গেছেন এবং অপারেশন সিন্দুরের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেছেন। তাহলে সরকার কেন বিরোধীদের এই সংঘাতের সমস্ত তথ্য দেবে না? এই তথ্য দেওয়া সরকারের নৈতিক কর্তব্য বলে তারা মনে করছেন।
ভারতীয় সেনার এক প্রাক্তন অফিসার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সংঘাতের সময় কিছু কৌশলগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সে কারণে সংঘাত চলাকালীন ভারত ক্ষয়ক্ষতির খতিয়ান দেয়নি। কিন্তু সংঘাত শেষ হয়ে যাওয়ার পর সেই খতিয়ান দেওয়া উচিত। এমন নয় যে ভারত এই সংঘাতে সাফল্য পায়নি। লড়াইয়ে নামলে কিছু ক্ষয়ক্ষতি হবেই। সেই তথ্য গোপন রাখা কখনোই কোনো সামরিক কৌশল হতে পারে না।''
ভারতীয় সামরিক প্রধানের বক্তব্যের পর সরকারের তরফে কার্যত কোনো মন্তব্য করা হয়নি। শিব কুমারের মন্তব্যের পর জাকার্তা দূতাবাসের তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হলেও ভারতের শাসকদলের নেতাদের তরফে এখনো পর্যন্ত কোনো কথা প্রকাশ্যে বলা হয়নি।
এসজি/জিএইচ (এনডিটিভি, পিটিআই)